বৃহস্পতিবার, ১৬ মে, ২০২৪ | ২ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ৭ জিলকদ, ১৪৪৫

মূলপাতা জাতীয়

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টার বৈঠক কেন মাঝপথে থেমে যায়?


রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :৭ অক্টোবর, ২০২৩ ৩:৫৪ : অপরাহ্ণ
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত
Rajnitisangbad Facebook Page

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আলোচিত বৈঠকটি কেন সফল হয়নি? এ নিয়ে নানা আলোচনা চলছে ঢাকা ও ওয়াশিংটনে।

বলা হচ্ছে, মার্কিনিদের কিছু বিষয়ের সঙ্গে শেখ হাসিনা একমত হননি। বিশেষ করে নির্বাচন নিয়ে তার মতামত সম্পূর্ণ ভিন্ন। গত ২৭ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে এ গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।

জ্যাক সুলিভান একা নন, এফবিআই কর্মকর্তাসহ আরও তিনজন ছিলেন বৈঠকে। বৈঠকটি প্রথমে গোপন রাখা হয়। সাত দিন বাদে হোয়াইট হাউসের তরফে তা খোলাসা করে দেওয়া হয়।

নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের কৌশলগত যোগাযোগ বিষয়ক সমন্বয়কারী জন কারবি এ ধরনের একটা বৈঠকের কথা স্বীকার করেন।

তিনি বলেন, বৈঠকে অনেক বিষয়েই আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে নির্বাচন অন্যতম। যদিও তিনি বিস্তারিত বলেননি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও শুক্রবার অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বৈঠকের কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

এর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তলে তলে সমঝোতা হয়ে গেছে বলে মিডিয়ায় শোরগোল তোলেন।

ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের আলোচ্য বিষয়গুলো অজানাই থেকে যায়। মানবজমিন নানা সূত্রে বৈঠকের কিছু খবর জানতে পেরেছে। বৈঠকের শুরুটা ছিল খুবই আন্তরিক। মাঝখানে একটি বিষয় নিয়ে আলোচনায় ছন্দপতন ঘটে। যাইহোক, চারটি বিষয় নিয়ে মূলত আলোচনা হয়েছে।

এক. বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে এক উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিরোধীরা বলছে, তারা নির্বাচনকালীন সরকার ছাড়া অংশ নেবে না। পরিস্থিতি ক্রমেই ঘোলাটে হচ্ছে। জ্যাক সুলিভান তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মনোভাব জানতে চান। তখন বলা হয়, নির্বাচনকালীন সরকার গঠনে তার সায় নেই। নির্বাচন হতে হবে সংবিধান অনুযায়ী। সংবিধানের বাইরে গিয়ে তার পক্ষে কিছুই করা সম্ভব নয়।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টার বৈঠক কেন মাঝপথে থেমে যায়?

দুই. কারারুদ্ধ বিরোধীনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থা সংকটাপন্ন। তার দলসহ বিভিন্ন মহল থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি তোলা হয়েছে। এ নিয়ে সরকারের অভিমত কি? এ ব্যাপারে জানানো হয়, তাকে নিয়ম ভেঙে উন্নত চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে উন্নতমানের হাসপাতালে সার্বক্ষণিক সেবা দেয়া হচ্ছে। সাধারণত কোনো সাজাপ্রাপ্ত বন্দিকে এ ধরনের সেবা দেয়া হয় না। তাকে বিদেশে পাঠানোর ব্যাপারে সরকারের অবস্থান আগেই জানিয়ে দেয়া হয়েছে। আলোচনার এক পর্যায়ে বলা হয়, যেহেতু বিষয়টি আবারো আলোচনায় এসেছে সেজন্য তিনি এটা ভেবে দেখবেন।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টার বৈঠক কেন মাঝপথে থেমে যায়?

তিন. নোবেলজয়ী প্রফেসর ইউনূসের প্রসঙ্গ নিয়ে অনেক সময় আলোচনা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের তরফে বলা হয়, তার বিরুদ্ধে এতো মামলা-মোকদ্দমা কেন। তাকে কেন নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। বিশ্ব নেতারা তার পাশে দাঁড়িয়েছেন। এ ব্যাপারে এখনো তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। জ্যাক সুলিভান এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তখন জানানো হয়, আইনের বাইরে তাকে কিছুই করা হচ্ছে না। নির্যাতন বা হয়রানির প্রশ্ন উঠছে কেন। জ্যাক সুলিভান যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। বলেন, প্রফেসর ইউনূস যাতে খালি খালি দমন পীড়নের শিকার না হন সেটা নিশ্চিত দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।

চার নম্বর বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। নানা কারণে আলোচনা অন্যদিকে মোড় নেয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র দাবি করেছে, আলোচনার সময় হঠাৎ করেই দরকষাকষি শব্দটি বেশ গুরুত্ব পায়। মার্কিন কর্মকর্তারা স্পষ্ট করেই বলেন, তাদের পক্ষে এ নিয়ে কিছু করা সম্ভব নয়। আইন তার নিজস্ব গতিতেই চলবে। এখানেই আলোচনা থেমে যায়। বৈঠকে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে চীনের উপস্থিতি, জলবায়ু ও রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে উভয়পক্ষের অবস্থান তুলে ধরা হয়।

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর