রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক
প্রকাশের সময় : ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৭:২১ অপরাহ্ণ
ভারতের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী নেপাল এবং বাংলাদেশ উভয়েই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) আঞ্চলিক পরিচালক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য প্রার্থী মনোনীত করেছে। এটি এমন একটি নির্বাচন যা জি-২০ সম্মেলনের আলোচনারও বিষয়বস্তু হতে চলেছে। তবে উভয়ের মধ্যে থেকে ভারত কাকে বেছে নেবে তাই নিয়েই দেশটি পড়েছে মহাদ্বন্দে।
বাংলাদেশের প্রার্থী হলেন-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। আর নেপালের প্রার্থী হলেন শম্ভু প্রসাদ আচার্য। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কান্ট্রি স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড সাপোর্ট বিভাগের ডিরেক্টর।
নয়াদিল্লিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক অফিসের (SEARO) পরিচালক পদের জন্য আগামী ৩০ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে ১১টি সদস্য দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের ভিত্তিতে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।
সদস্য দেশগুলো হলো-বাংলাদেশ, ভুটান, উত্তর কোরিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, মায়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড এবং পূর্ব তিমুর।
ভারতের অবস্থান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে সরকারি কর্মকর্তারা বলেছিলেন যে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এসইআরও ডিরেক্টর পদের জন্য ওয়াজেদ বা আচার্যকে সমর্থন করবেন কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ভারতের হাতে এখনও কিছুটা সময় আছে।
তবে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের গুরুত্ব এবং প্রার্থী স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী হাসিনার কন্যা বলে ভারতের সমর্থন সায়মা ওয়াজেদের দিকে যাবে বলেই অনুমেয়।
কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন যে, জাতিসংঘের সিস্টেমের মধ্যে যে কোনও নির্বাচনের মতো, বাংলাদেশ এবং নেপালের সাথে প্রতিটি SEARO সদস্য দেশের আলোচনার উপর অনেক কিছু নির্ভর করবে, কারণ তারা পারস্পরিক সহযোগিতায় কাজ করে। বিনিময়ে তারা নিজেদের জন্য জাতিসংঘের অন্য ভোটে সমর্থন আদায় করে।
নেপালের প্রার্থী শম্ভু প্রসাদ আচার্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস ঘেব্রেইসাসের অন্যতম সহযোগী। তাকে যথেষ্ট অভিজ্ঞ একজন ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করা হয়।
অন্যদিকে মনোবিদ সায়মা ওয়াজেদ অটিজম এবং নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার বিষয়ক বাংলাদেশের জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপার্সন। তিনি বর্তমানে তীব্রভাবে কূটনৈতিক প্রচারণা চালাচ্ছেন।
সূত্র জানিয়েছে, শেখ হাসিনার দিল্লি সফরে সায়মা ওয়াজেদ সাথে রয়েছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ঘেব্রেয়েসাসও এই ইভেন্টের জন্য দিল্লিতে রয়েছেন। এদের ভোট আচার্যের পক্ষে যাবে বলে অনুমান করা যায়। উভয় পক্ষই SEARO সদস্যদের সাথে সক্রিয়ভাবে প্রচারণা চালাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সায়মা ওয়াজেদ ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিনের সাথে আসিয়ান সম্মেলনে গিয়েছিলেন এবং জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদির সাথে দেখা করেছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে যে, তিনি সায়মা ওয়াজেদের হয়ে এই বিষয়ে প্রচারণা চালাবেন।
ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় করা এক পোস্টে সায়শা ওয়াজেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা ছিল গঠনমূলক এবং আমরা আমাদের দুই দেশের মধ্যে বৃহত্তর সম্পর্ক ও সহযোগিতা গড়ে তুলতে উন্মুখ।’
এর আগে আগস্টে সায়মা ওয়াজেদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস সম্মেলনে গিয়েছিলেন, যেখানে বাংলাদেশ আমন্ত্রিত ছিল। সেখানে জোহানেসবার্গে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের সময় চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের সাথে দেখা করেছিলেন তিনি।
এদিকে নেপালও বসে নেই। ইতিমধ্যে, নেপালি সরকারও তার প্রচারাভিযান সক্রিয় করেছে, যদিও সেটি অতটা হাই-প্রোফাইল নয়।
গত সপ্তাহে কাঠমান্ডুতে SEARO সদস্য দেশের রাষ্ট্রদূতদের একটি বৈঠক হয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্র মারফত জানা গেছে, বৈঠকে আচার্য একজন জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে তার কর্মজীবনের চিত্র তুলে ধরে সকল সদস্যের সমর্থন চেয়েছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদস্য হিসেবে তিনি ঢাকায় (১৯৯২-১৯৯৭), দিল্লিতে (১৯৯৭-১৯৯৯) দায়িত্ব পালন করেছেন। গত ২৪ বছর ধরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জেনেভা হেড অফিসের অন্যতম সিনিয়র কর্মকর্তার পদে আসীন রয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশের অবস্থান এবং এর সর্বোচ্চ দফতর থেকে বিশেষ চাপের কারণে নেপালি সরকার SEARO’র অন্য সদস্য দেশগুলির সমর্থন আদায়ের চেষ্টায় রয়েছে। তারা এটিকে একটি অসম যুদ্ধ হিসেবে দেখছে।
সোশ্যাল মিডিয়া সাইট এক্সে ভারতের প্রাক্তন বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির পরিচালক বিশো পারাজুলি লিখেছেন, আমরা বিশ্বাস করি যে সদস্য রাষ্ট্রগুলি সেরা উপযুক্ত প্রার্থীকেই বেছে নেবে।
নেপালি কর্মকর্তা পারাজুলির মতে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং জনস্বাস্থ্য ক্ষেত্রে আচার্যের অভিজ্ঞতাই তার পরিচয়।
লেখক: সুহাসিনী হায়দার, কূটনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক, দ্য হিন্দু।
সূত্র: মানবজমিন।