শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা চট্ট-মেট্টো

চট্টগ্রাম মেডিকেলে সংঘর্ষ: সেদিন ওসি নাজিমের সঙ্গে মোস্তাকিমের কী হয়েছিল? (ভিডিও)


চট্টগ্রাম মেডিকেলে গত ১০ জানুয়ারি অবরোধ চলাকালে পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিনের মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন মোস্তাকিম। ছবি: সংগৃহীত

রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম প্রকাশের সময় :১৩ জুলাই, ২০২৩ ৯:৩৩ : অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ১০ জানুয়ারি কিডনি ডায়ালাইসিস ফি কমানোর আন্দোলনকে ঘিরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের নেপথ্যে সেই মোস্তাকিমেরই উস্কানি ছিল বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সেদিন আন্দোলনকারীদের অবরোধ চলাকালে পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিনের মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন মোস্তাকিম। যা একটি ভিডিও ফুটেজে ধরা পড়েছে।

সেদিন পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের নেপথ্যে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করা কিডনি রোগী ও স্বজনরা অভিযোগের তীর ছুটেছে মাদ্রাসাছাত্র সৈয়দ মোহাম্মদ মুস্তাকিমের দিকেই।

তারা বলছেন, সেদিন মোস্তাকিম পরিকল্পিতভাবে আন্দোলনকারীদের উসকে দিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, সেদিন অবরোধের কারণে হাসপাতালের আশপাশের কয়েক কিলোমিটার সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়। ফলে হাসপাতালে ঢুকতে ও বের হতে পারছিল না রোগী বহন করা বেশ কিছু অ্যাম্বুলেন্স।

পরিস্থিতি দেখে ঘটনাস্থলে থাকা পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিন আন্দোলনকারীদের সড়ক ছেড়ে দিতে বারবার অনুরোধ করেন। কিন্তু মোস্তাকিমসহ আন্দোলনকারীরা সড়ক না ছাড়ার ঘোষণা দেন।

সেদিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা কিডনি রোগী আবদুস সালাম বলেন, ‘কিডনি ডায়ালাইসিস ফি কমানোর জন্য আমরা চারদিন ধরে হাসপাতালের ভেতরে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে আসছিলাম। কিন্তু তাতে কেউ কর্ণপাত করছিল না, আমাদের দাবি মানা হচ্ছিল না। তাই বাধ্য হয়েই আমরা সেদিন সকালে সড়ক অবরোধ করেছিলাম, যাতে গণমাধ্যম আমাদের দুর্দশার কথা ভালোভাবে তুলে ধরে। আমাদের পরিকল্পনা ছিল, আধা ঘন্টা সড়ক অবরোধ করে সরে যাবো। কিন্তু মোস্তাকিমসহ কেউ কেউ বলছিল, দাবি আদায় করেই সড়ক ছাড়বে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তখন দেখছিলাম, আমাদের অবরোধের কারণে অনেক রোগী হাসপাতালে ঢুকতে ও বের হতে পারছিলো না। সড়ক ছেড়ে দিতে ওসি সাহেব অনুরোধ করলেও মোস্তাকিম কিছুতেই রাজি হচ্ছিলো না। সে ওসির সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ায়। সেদিন মোস্তাকিমসহ কয়েকজন বাড়াবাড়ি না করলে ঘটনা এতো বড় হতো না।’

আরিফ আহমেদ নামের আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, সেদিন ঘটনার সময় ওসির মোবাইল ফোনটি ছিনিয়ে নিতে চেষ্টা করেছিলেন মোস্তাকিম। এতে ওসির মোবাইলটি মাটিতে পড়ে ভেঙে যায়। সকাল থেকে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন চললেও পুলিশ কঠোর হতে শুরু করে দুপুর ১টার দিকে। ধাওয়া দিয়ে আন্দোলনকারীদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় পুলিশ।

মেডিকেলের সামনের এক দোকানদার বলেন, ‘কিডনি রোগীরা কয়েকদিন ধরে আন্দোলন করেছিল। কিন্তু তাদের দাবি আদায় হচ্ছিলো না। তাই তারা বাধ্য হয়ে সড়ক অবরোধ করে, যাতে পত্রিকায় তাদের কথা ভালোভাবে প্রচার হয়। কিন্তু সেদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কয়েক ঘন্টা সড়ক অবরোধ করে রাখায় দুর্ভোগ বেড়েই চলছিল। ওসি সাহেবও কৌশলে বুঝিয়ে বিক্ষোভকারীদের সরাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মোস্তাকিমসহ কয়েকজন আন্দোলনকারী ছিল বেশ আক্রমণাত্মক। তারা সড়ক ছাড়তে চাইছিল না, পাশাপাশি অন্যদের উত্তেজিত করে তুলেছিলো।’

১০ জানুয়ারির সেই সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচলাইশ থানার এসআই মোস্তাফিজুর রহমান বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। এতে আসামি করা হয় মোস্তাকিমকে। এছাড়া অজ্ঞাতনামা ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়ার পাঁচদিন পর কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হন মোস্তাকিম।

এই ঘটনার এক মাসের বেশি সময় পর গত ২০ ফেব্রুয়ারি নির্যাতনের অভিযোগে পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিন ও এএসআই আব্দুল আজিজের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন মোস্তাকিম।

জানা গেছে, এএসআই আব্দুল আজিজের নামে মামলা হলেও তিনি সেদিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না।

আদালত ঘটনাটি তদন্তের জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দেন।

সিআইডি মামলাটি তদন্ত করে গত ১১ মে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। এতে ওসি ও এএসআইয়ের বিরুদ্ধে করা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়।

এ বিষয়ে পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিন তখন গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, সেদিন হাসপাতালের প্রধান ফটকে আন্দোলনকারীদের অবরোধ চলাকালে রোগী ও স্বজনদের দুর্ভোগ বেড়েই চলছিল। এই অবস্থায় আন্দোলনকারীদের সেখান থেকে সরে যেতে অনুরোধ করি। কিন্তু তারা তাতে কর্ণপাত করেনি। এ সময় আমি মোবাইল ফোনে আন্দোলনকারীদের ভিডিও ধারণ করি। তখন মোস্তাকিম আমার হাতে থাকা মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এতে মোবাইল ফোনটি মাটিতে পড়ে ভেঙে যায়।

ওসি বলেন, পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ায় তখন তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে তাকে কোনো নির্যাতন করা হয়নি। আর মুস্তাকিমের মাকে লাথি মারার অভিযোগটা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। কারণ ঘটনার সময় তার মা হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করাচ্ছিলেন।

উল্লেখ্য, গত ৩ জুলাই চট্টগ্রাম জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মোস্তাকিমের বিরুদ্ধে নির্যাত ও যৌতুক দাবির অভিযোগে মামলা করেন তার স্ত্রী হাবীবা আক্তার। সেদিন তার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

জানা গেছে, মোস্তাকিম ফটিকছড়ি উপজেলার ধর্মপুর এলাকার সৈয়দ মৌলানা মোহাম্মদ খালেদ আজমের ছেলে।

দেখুন সেই ভিডিও

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর