শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা আইন-আদালত

২৬ জনকে ফাঁসিতে ঝোলানো জল্লাদ শাহজাহান মুক্তি পাচ্ছেন আজ


জল্লাদ শাহজাহান ভূঁইয়া

রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :১৮ জুন, ২০২৩ ৯:১৮ : পূর্বাহ্ণ

দেশের বহুল আলোচিত কারাবন্দী জল্লাদ শাহজাহান ভূঁইয়া (৭৩) অবশেষে মুক্তি পাচ্ছেন আজ।

আজ রোববার ৩২ বছর কারাভোগ শেষে মুক্তি পাচ্ছেন তিনি।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডিআইজি প্রিজন্স ফজলুল হক সংবাদমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

কারা সূত্রে জানা গেছে, সাজার মেয়াদ কমানোর বাসনায় কয়েদি থেকে জল্লাদ বনেছিলেন শাহজাহান।

জল্লাদ শাহজাহান দেশের সবচেয়ে বেশী মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামীর ফাঁসি প্রধান জল্লাদ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। একের পর এক অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছেন চার দেওয়ালের বন্দিজীবন থেকে মুক্তি পেতে। অবশেষে সেই বাসনা সত্যি হচ্ছে।

শাহজাহান ভুঁইয়ার মোট সাজা হয়েছিল ৪২ বছর। তার মধ্যে তিনি ১০ বছর ৫ মাস ২৮ দিন রেয়াত পেয়েছেন। প্রায় ৩২ বছরের সাজা শেষে তিনি মুক্তি পাচ্ছেন।

কারা সূত্রে জানা গেছে, শাহজাহান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৬ ঘাতক, ৬ জন যুদ্ধাপরাধী, কুখ্যাত সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদার, জঙ্গি নেতা বাংলাভাই, আতাউর রহমান সানী, শারমীন রীমা হত্যার আসামী খুকু মনির, ডেইজি হত্যা মামলার আসামী হাসানসহ বাংলাদেশের আলোচিত ২৬ জনকে জনের ফাঁসি দিয়েছেন।

১৯৯১ সালে মানিকগঞ্জের একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করে মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে রাখা হয়। এরপর দেশের বিভিন্ন জেলে রাখা হয় তাকে।

শাহজাহান ভূঁইয়ার বাড়ি নরসিংদীর পলাশ থানার ইছামতী গ্রামে। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অবিবাহিত।

৩৬টি মামলা ১৪৩ বছরের জেল

১৯৭৯ সালে আটক হওয়ার আগে ও পরে তার নামে সর্বমোট ৩৬টি মামলা হয়। এর মধ্যে ১টি অস্ত্র মামলা, ১টি ডাকাতি মামলা এবং অবশিষ্ট ৩৪টি হত্যা মামলা। বিচারকার্যে দেরি হওয়ার কারণে সাজা ছাড়াই তিনি ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত ১৭ বছর হাজতি হিসেবে কারাগারে থাকেন। ১৯৯৫ সালে তার সাজা হয় ১৪৩ বছর। পরে ৮৭ বছর জেল মাফ করে তাকে ৫৬ বছরের জন্য জেল দেওয়া হয়। শাহজাহানের জেল থেকে বের হওয়ার তারিখ তার জেল কার্ডের ওপর লেখা ছিল “ডেইট অব রিলিজ ২০৩৫”। তবে ফাঁসি কার্যকর, সশ্রম কারাদণ্ড এবং বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে রেয়াদ পেয়ে ৪৪ বছরের মাথায় তার ডেইট অব রিলিজ এখন ১৮.০৬.২৩২৩।

জল্লাদ হিসেবে আত্ম-প্রকাশ

জীবনের সোনালী সময়গুলো তাকে এখানেই কারাগারেই কাটাতে হবে- এমন ভাবনা থেকে তিনি চিন্তা করলেন জল্লাদ হিসেবে সময় দিলে তার সাজা কিছু দিনের জন্য হলেও কম হবে। তাই নিজেকে অন্যভাবে প্রস্তুত করার জন্য জেল সুপারের কাছে জল্লাদের খাতায় নাম লেখানোর আগ্রহ প্রকাশ করেন। প্রথম ১৯৮৯ সালে তিনি সহযোগী জল্লাদ হিসেবে গফরগাঁওয়ের নূরুল ইসলামকে ফাঁসি দিয়ে তার জল্লাদ জীবনের সূচনা করেন। এটাই তার জীবনের প্রথম কারাগারে কাউকে ফাঁসি দেওয়া। তার যোগ্যতা দেখে ৮ বছর পর ১৯৯৭ সালে কারা কর্তৃপক্ষ তাকে প্রধান জল্লাদের আসন প্রদান করেন। প্রধান জল্লাদ হওয়ার পর আলোচিত ডেইজি হত্যা মামলার আসামি হাসানকে প্রথম ফাঁসি দেন। তিনি জানান একটি ফাঁসি দিতে প্রধান জল্লাদের সঙ্গে ৬ জন সহযোগী লাগে এবং ফাঁসির রায় কার্যকর করলে প্রত্যেক জল্লাদের ২ মাস ৪ দিন করে কারাদণ্ড মওকুফ করা হয়। এছাড়া কারাগারে যারা জল্লাদ হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে থাকে কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শাহজাহান তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর