রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম প্রকাশের সময় :১৪ জুন, ২০২৩ ৭:২১ : অপরাহ্ণ
আমেরিকার ভিসা নীতির কারণে সরকারের হাঁটু কাঁপতে শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘মার্কিন ভিসা নীতি আসার পর তারা (সরকার) লাফাতে লাফাতে বলে, ভিসা নীতিতে আমরা ভয় পাই না। ভয় পায় নাই? এমন ভয় পেয়েছে, সরকারের এখন হাঁটু কাঁপতে শুরু করেছে। কারণ তারা তো টাকা পাচার করেছে বিদেশে। ভিসা নীতি এমন হয়েছে, এবার যদি তুমি ভোটে আবার কারচুপি করতে যাও, দিনের ভোট রাতে করো তাহলে তোমার রেহাই নেই।’
আজ বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর কাজীর দেউড়ি মোড়ে আয়োজিত বিএনপির তারুণ্যের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির ভিন্নধর্মী এই সমাবেশে লাখো মানুষের সমাগম ঘটে। বিকেলে সমাবেশ শুরু হলেও সকাল থেকে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে কাজীর দেউড়ি মোড়ে জমায়েত হন। চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা, কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও ফেনী জেলা থেকে হাজার হাজার নেতা-কর্মী এই সমাবেশে অংশ নেন।
দুপুর দুইটার মধ্যে কাজীর দেউড়ি ও আশেপাশের এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। কাজীর দেউড়ি মোড়ের পশ্চিম দিকে লালখান বাজার মোড়, দক্ষিণে এনায়েত বাজার, পূর্বে জামাল খান মোড় এবং উত্তরে মেহেদীবাগ পর্যন্ত নেতাকর্মীর স্রোত দেখা যায়।
‘তরুণ প্রজন্ম ভুলে গেছে, শেষ কবে সে ভোট দিয়েছে’-এমন স্লোগান লেখা ব্যানার-পোস্টার দেখা গেছে সমাবেশস্থলে। নেতা-কর্মীদের মুহুর্মুহু স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে চারপাশ।
বাংলাদেশে র্যাবকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার দেশটাকে কী করেছে দেখেন, কোথায় নিয়ে গেছে এই দেশকে। লজ্জায় আমরা মাথা দেখাতে পারছি না। আমেরিকা থেকে র্যাবকে কেন স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) দেওয়া হয়েছে? র্যাবকে কারা ব্যবহার করেছে? র্যাবকে কারা গুম-খুন করতে নির্দেশ দিয়েছে? এই হাসিনা সরকার।’
সরকারের উন্নয়নের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘উন্নয়নের নামে তারা লুটপাট করেছে। দেশকে ফোকলা করে দিয়েছে। দেশে আজ বিদ্যুৎ নেই। তিন-চারবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। মানুষ মিটারে ১ হাজার টাকা রিচার্জ করলে ৩০০ টাকা থাকে না। সেই টাকা শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের ঘরে চলে যায়।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ) বলে, আমরা আবার ক্ষমতায় যাবো। ক্ষমতায় কীভাবে যাবা? ওই পুলিশ, ওই র্যাব, ওই বিজিবি, ওই রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে আমরা ক্ষমতায় যাবো। আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই না, আমরা জনগণকে ক্ষমতায় নিতে চাই। আমরা জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে চায়।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে স্লো পয়জনিং করা হয়েছে কিনা-এমন প্রশ্ন রেখে দলটির মহাসচিব বলেন, ‘অন্যায়ভাবে, বেআইনীভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে সাজা দিয়ে আটক করে রেখেছে। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। তাঁকে কারাগারে অনেক দিন বিনা চিকিৎসায় রাখা হয়েছিল। আমরা বারবার বলেছি, তাঁকে মুক্তি দিন। আমরা জানি না তাকে সেখানে স্লো পয়জনিং করা হয়েছে কিনা? কারণ তিনি বারবার অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তিনি এতোটা অসুস্থ হওয়ার কথা না। তিনি এখন জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন।’
বিএনপির ৪০ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদেশে নাকি গণতন্ত্র আছে। যে দেশে একটা গণতান্ত্রিক দলের ৪০ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়, সেখানে কোনো গণতন্ত্র থাকতে পারে?’
দেশের ১৮ কোটি মানুষ তারেক রহমানের দিকে তাকিয়ে আছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তার নেতৃত্বে এদেশকে আমরা আবার মুক্ত করবো এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবো।’
সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নির্ভরশীলতা কোথায়? তাদের নির্ভরশীলতা হলো কিছু পুলিশ, কিছু র্যাব, কিছু বিজিবি। কারণ তাদের সাথে তো কেউ নেই। দেশেও নেই, বিদেশেও নেই। আর বিএনপির নির্ভরশীলতা হলো বাংলাদেশের জনগণ। এদেশের কোটি মানুষ আজ এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় করতে রাস্তায় নেমেছে।’
কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, বরকত উল্লাহ বুলু, মো. শাহাজাহান ও মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান প্রমুখ।