মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ১৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ৩০ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা আঞ্চলিক রাজনীতি

চট্টগ্রামে খুনের সাথে ‘জড়িত’ কাউন্সিলরের ভাইয়ের জন্য স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিক্ষোভ নিয়ে প্রশ্ন


চট্টগ্রাম নগরীতে একটি খুনের ঘটনায় ‘জড়িত’ একজন কাউন্সিলরের ভাইয়ের জন্য স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিক্ষোভ। ছবি: সংগৃহীত

রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রকাশের সময় : ৮ জুন ২০২৩, ৮:৪৪ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম নগরীতে একটি খুনের ঘটনায় ‘জড়িত’ একজন কাউন্সিলরের ভাইয়ের জন্য স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিক্ষোভ করা নিয়ে দলটির নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।

গত ২৮ মে নগরীর পাহাড়তলী নয়াবাজার এলাকায় প্রহরী আজাদুর রহমান আজাদ নামের এক নিরাপত্তা প্রহরীকে হত্যা করা হয়। এই খুনের ঘটনায় ২৫ নম্বর রামপুর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুস সবুর লিটনের ছোট ভাই আবদুল মান্নান খোকনের ‘সম্পৃক্ততা’ পায় ডিবি পুলিশ।

আবদুল মান্নান খোকন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক কোনো দায়িত্বে নেই। অথচ খুনের ঘটনা থেকে ‘রক্ষা করতে’ তাকে চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা হিসেবে আখ্যায়িত করে বিক্ষোভ করেছেন সংগঠনটির একাংশের নেতাকর্মীরা।

এ নিয়ে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ ঘটনায় সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

জানা গেছে, গত ২ জুন নগরীর হালিশহর বড়পুল এলাকায় নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজের নেতৃত্বে সংগঠনটির হালিশহর থানা সমন্বয়ক কমিটির উদ্যোগে এই বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলের ব্যানারে লেখা ছিল-‘রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের ষড়যন্ত্রের শিকার চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবদুল মান্নান খোকন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজ রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‌‘ডিবি পুলিশ খুনের ঘটনায় আবদুল মান্নান খোকনের সম্পৃক্ততার তথ্য জানিয়েছিলো ৫ জুন। কিন্তু আমরা এর তিনদিন আগে বিক্ষোভ করেছিলাম। তখন তো আমরা জানতাম না যে, খুনের ঘটনায় তার (খোকন) সম্পৃক্ততা আছে।’

খুনের ঘটনায় খোকনের সম্পৃক্ততা জানার পর তাকে কি এখন সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হবে?-এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‌‘সে (খোকন) তো সংগঠনের কোনো পদে নেই? তাকে কীভাবে বহিষ্কার করবো?’

আবদুল মান্নান খোকনকে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা হিসেবে আখ্যায়িত করার কারণ জানতে চাইলে আজিজুর রহমান আজিজ বলেন, ‘মহানগর কমিটি তো ২০ জনের। কমিটির বাইরে কি স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা আর নেই?’

নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নুরুল কবির রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‌‘একটি খুনের ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তির জন্য স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেনো বিক্ষোভ করলো? সে আমাদের দলীয় কর্মী হলেও তার জন্য বিক্ষোভ করাটা মোটেও উচিত হয়নি। এতে সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। যে কোনো রাজনৈতিক সংগঠনকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো উচিত।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্পাদক মণ্ডলীর একজন নেতা জানান, কাউন্সিলর আব্দুস সবুর লিটনের সঙ্গে আজিজুর রহমান আজিজের ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে। তাই তিনি (আজিজ) লিটনের ভাইয়ের জন্য এই বিক্ষোভ করেছেন।

জানা গেছে, গত ৪ জুন খুলনার পাইকগাছা থেকে এই খুনের হত্যা মামলার দুই আসামি নগরীর হালিশহরের আবুল হাসনাত রাজু ও পাহাড়তলী পানিরকল এলাকার ওসমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। মৃত্যুর আগে ধারণ করা একটি ভিডিওতে আজাদ তার ওপর হামলাকারী হিসেবে এই দুজনের নাম বলেন।

গ্রেপ্তারকৃত রাজু ও ওসমান প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এই খুনের ঘটনার সাথে আবদুল মান্নান খোকনের জড়িত থাকার তথ্য জানায় ডিবি পুলিশকে।

এরপর খোকনের রামপুরের বাসায় অভিযান চালায় ডিবি পুলিশ। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি।

হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই স্থানীয়রা অভিযোগ করে আসছিলেন, জড়িতরা কাউন্সিলর ও তার ভাইয়ের অনুসারী।

গত ২৮ মে ভোরে নগরীর পাহাড়তলী থানার সরাইপাড়া নয়াবাজার মুজিবুর রহমান প্লাজার সামনে খুন হন আজাদুর রহমান আজাদ নামের এক নিরাপত্তা প্রহরী।

পরিবারের অভিযোগ, চাঁদা নিতে বাঁধা দেওয়ায় স্থানীয় কাউন্সিলরের ছোট ভাইয়ের অনুসারীরা তাকে খুন করেছে। এ ঘটনায় আজাদের স্ত্রী বাদী হয়ে চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। পরদিন রাঙ্গামাটি থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

আরও পড়ুন: স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা দেবুর চাঁদাবাজি, গোপন ক্যামেরায় ধরা

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর