রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :৩ জুন, ২০২৩ ৮:০৭ : অপরাহ্ণ
জনগণের দাবি মেনে নিয়ে সরকারকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ছাড়া আর কোনো পথ নেই বলে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘অন্য কোনো দিকে দৌড়ে লাভ নাই। আপনাদের (সরকার) সময় হয়ে গেছে, ঘণ্টা বেজে গেছে। আজরাইল আপনাদের পেছনে এসে দাঁড়িয়ে আছে।’
আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমানের সাজা বহালের প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর (উত্তর ও দক্ষিণ) বিএনপি এই সমাবেশের আয়োজন করে।
মার্কিন ভিসা নীতিতে সরকারের মাথা গরম হয়ে গেছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একটা ব্যাপারে তাদের (সরকার) মাথা গরম হয়ে গেছে, বেশ গরম হয়ে গেছে। এটা হচ্ছে ভিসা নীতি। ভিসা নীতি যা দেওয়া হয়েছে—তা আমাদের জন্য মর্যাদাকর নয়। কারণ, আমরা এমন একটা দেশ তৈরি করেছি, এমন একটা জাতি তৈরি করেছি, এমন একটা ব্যবস্থা আওয়ামী লীগ এখানে তৈরি করে দিয়েছে, যে ব্যবস্থায় মার্কিনিরা বলতে বাধ্য হচ্ছে যে, তোমরা যদি একটা সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচন না করতে পারো, তাহলে তোমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তার মধ্যে রাজনীতিবিদ আছে, প্রশাসন আছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে এবং বিচারব্যবস্থাও রয়েছে। অর্থাৎ এ কথা আজ খুব পরিষ্কার শুধু দেশের মানুষের কাছে নয়, সমগ্র বিশ্বের কাছে বাংলাদেশে এখন কোনো গণতন্ত্র নেই, মানুষের অধিকার নেই, আইনের শাসন নেই।’
আরও পড়ুন: আমেরিকায় না গেলে কিচ্ছু আসে-যায় না, আরও মহাদেশ আছে: প্রধানমন্ত্রী
সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পরিষ্কার করে বলতে চাই, এখনো সময় আছে, শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। আপনারা (সরকার) এখনো জনগণের দাবি মেনে নেন, পদত্যাগ করেন, সংসদ বিলুপ্ত করেন এবং নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। এটাই এখন সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ, অন্য কোনো পথ নাই।’
দলের নেতা-কর্মীদের ওপর দমন-পীড়নের অভিযোগ এনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা খুব পরিষ্কার করে সরকারকে বলতে চাই, পরিষ্কার ভাষায় অনেক হয়েছে, এনাফ ইজ এনাফ। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য এরই মধ্যে আমাদের ১৭ জন ভাই প্রাণ দিয়েছে। আপনাদের কোনো বোধোদয় হচ্ছে না। এখনো সমানে মিথ্যা মামলা করছেন, গায়েবি মামলা করছেন, এখনো আমাদের ভাইবোনদের আটক করে রেখেছেন, এখনো আপনাদের সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে পুলিশের প্রশ্রয়ে আপনারা সব জায়গায় হামলা চালাচ্ছেন।’
সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মিথ্যা মামলা দিয়ে, মাথা ফাটিয়ে, রক্ত ঝরিয়ে এমনকি আমাদের জীবন পর্যন্ত নিয়ে আমাদের আটকে রাখতে পেরেছেন? ১৪ বছর ধরে আমরা লড়াই করছি, সংগ্রাম করছি সত্যিকার অর্থে একটা অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য। আমরা আন্দোলন করছি, আমাদের ভাইয়েরা প্রাণ দিয়েছে। তারা রাজপথে রক্ত ঢেলে দিয়েছে। ৪০ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে, গুম করে দিয়েছে ছয় শর বেশি মানুষকে। প্রতিদিন অত্যাচার-নির্যাতন চলছে, গ্রেপ্তার চলছে এবং গায়েবি মামলা, মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। এরপরেও কাউকে আটকে রাখা যায়নি। তীব্র গরমের মধ্যেও আজকে সবাই হাজির হয়েছে। আমি বলব—শেখ হাসিনা এখান থেকে শিক্ষা নিন। যত অত্যাচার-নির্যাতনই চালাবেন, জনগণ ত্যাগ স্বীকার করে এবার তাদের অধিকারকে অবশ্যই ফিরিয়ে আনবে।’
প্রস্তাবিত বাজেটের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অনেকে আশা করেছে যে বাজেট আসবে, সেই বাজেটে হয়তো সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘবের চেষ্টা করা হবে। তারা (সরকার) যে বাজেট দিয়েছে, তাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাধারণ মানুষ, গরিব মানুষ, শ্রমজীবী মানুষ, রিকশাশ্রমিক ভাইয়েরা এমনকি পা কাটা ভিক্ষুক, যাদের অন্য কোনো উপায় নেই, যে ভিক্ষা করছে, তাকে পর্যন্ত বাদ দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ তাদেরকেও কর দিতে হবে। অর্থাৎ তারা (সরকার) একটা মশকরা করছে।’
অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রসঙ্গে টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গতকালই (শুক্রবার) অর্থমন্ত্রী কী বলেছেন? এটা মশকরা ছাড়া আর কি হতে পারে? তিনি বলেছেন—গরিববান্ধব বাজেট, গরিবের জন্য বাজেট। এমন গরিবের বাজেট, যে আয়কর দিতে পারে না, তাকেও দুই হাজার টাকা ট্যাক্স দিতে হবে।’
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন।