রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :১ জুন, ২০২৩ ৪:২১ : অপরাহ্ণ
২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বেশ কিছু পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) ও শুল্ক বাড়ানোর সুপারিশ করেছেন। এতে এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে।
গ্যাস সিলিন্ডার
তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) সিলিন্ডার তৈরির দুটি কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) এবং ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে। এলপিজি সিলিন্ডারের ভ্যাট আড়াই শতাংশ বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
সিমেন্ট
সিমেন্টের মূল কাঁচামাল ক্লিংকারের আমদানি শুল্ক টনপ্রতি ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের জন্য ক্লিংকারে শুল্ক একই হারে বেড়ে ৯৫০ টাকা হবে।
সাধারণ ইট
যন্ত্রের সাহায্য ছাড়া তৈরি সাধারণ ইটে ভ্যাট (নন-রিফ্লেকটরি বিল্ডিং ব্রিকস) প্রতি হাজারে ৪৫০ থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়েছে। এটা ‘ফেসিংয়ে’ ব্যবহৃত ইটের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।
সিগারেট
সিগারেটের সব কটি মূল্যস্তর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি একটি স্তরে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে সিগারেটের দাম বাড়তে পারে। অবশ্য বিড়ির দাম না–ও বাড়তে পারে। কারণ, বিড়িতে নতুন করে কর বাড়ানোর প্রস্তাব করেননি অর্থমন্ত্রী। সিগারেটে কর বাড়িয়ে অর্থমন্ত্রী বাড়তি ৬ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করেছেন।
বাসমতী চাল
সাধারণ বাসমতী চালে এখন ভ্যাট নেই। তবে ফর্টিফায়েড বাসমতী চালে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আছে। ফাঁকি রোধে সাধারণ বাসমতী চালেও ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।
কাজুবাদাম
বিদেশি কাজুবাদামের মোট করভার ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৩ শতাংশ করা হয়েছে। পার্বত্য অঞ্চলে উৎপাদিত কাজুবাদামকে সুরক্ষা দিতে এই উদ্যোগ।
মোবাইল ফোন
দেশে মুঠোফোন উৎপাদনে বিভিন্ন পর্যায়ে ভ্যাটের হার দুই থেকে আড়াই শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এতে মুঠোফোনের দাম বাড়তে পারে।
দামি গাড়ি
আগামী অর্থবছরের বাজেটে দামি গাড়ির ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ হতে পারে। এতে দামি গাড়ির দাম আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০০১ সিসি থেকে ৩০০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ি আমদানিতে এখন ২০০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বসে। এটা বাড়িয়ে ২৫০ শতাংশ এবং ৩০০১ থেকে ৪০০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ৩৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করে ৫০০ শতাংশ করা হতে পারে। ২০০০ সিসির বেশি ইঞ্জিন ক্ষমতাবিশিষ্ট গাড়ি সাধারণত জিপ গাড়ি হয়। এখন দেশে বিপুল।
কলম
বলপয়েন্ট কলম উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা তুলে নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে কলম উৎপাদনে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসবে। দাম বাড়তে পারে কলমের।
টিস্যু
কিচেন টাওয়েল, টয়লেট টিস্যু, ন্যাপকিন টিস্যু, ফেসিয়াল টিস্যু/পকেট টিস্যু, পেপার টাওয়েল ইত্যাদির ভ্যাট আড়াই শতাংশ বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
থালাবাসন
প্লাস্টিকের তৈরি থালা, বাটি ও অন্যান্য পণ্যের ভ্যাট আড়াই শতাংশ বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে। টিফিন বক্স ও পানির বোতলে ভ্যাট আগের মতো থাকবে। অ্যালুমিনিয়ামের থালাবাসন ও রান্নাঘরের সরঞ্জামের ভ্যাট একই হারে বাড়ানো হয়েছে।
খেজুর
খেজুরের ওপর শুল্ক ও ভ্যাট ব্যাপকভাবে বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছে বাজেটে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, শুকনা খেজুরের ওপর এখন ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক রয়েছে। তবে সাধারণ খেজুরের ওপর নেই। তাই দুই ক্ষেত্রেই ২৫ শতাংশ শুল্ক বসবে। সঙ্গে থাকবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট। অর্থমন্ত্রী আরও বলেছেন, খেজুর কোনো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নয়।
চশমা ও সানগ্লাস
চশমার ফ্রেমের ওপর আমদানি শুল্ক এখন ৫ শতাংশ। তৈরি চশমার ওপর শুল্ক ২৫ শতাংশ। শুল্ক ফাঁকি রোধে ফ্রেমের ওপর শুল্ক ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। সানগ্লাসের (প্লাস্টিক ও মেটাল ফ্রেমযুক্ত) ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে আড়াই শতাংশ। নতুন হার সাড়ে ৭ শতাংশ।
তরল নিকোটিন
তামাকজাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিনের ওপর ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। ইলেকট্রনিক সিগারেট ও সমজাতীয় ইলেকট্রিক ভ্যাপোরাইজার ডিভাইসের যন্ত্রাংশের শুল্কহার বাড়িয়ে মূল পণ্যের সমান, ২১২ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে ভ্যাপোরাইজারের দাম বাড়বে। এটি সাধারণভাবে ভ্যাপ নামে পরিচিত।
বাইসাইকেল
বাইসাইকেলের কিছু যন্ত্রাংশের আমদানি শুল্ক ৫ বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতে বিদেশি যন্ত্রাংশ ব্যবহারকারী বাইসাইকেলের উৎপাদন ব্যয় বাড়বে।
আঠা
আঠা (অ্যাডহেসিড/গ্লু) আমদানিতে ১৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এতে বিদেশি আঠার দাম বাড়বে।
সফটওয়্যার
সফটওয়্যার ও কাস্টমাইজেশন সেবার ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এতে এই সেবার মূল্য বাড়তে পারে। বিদেশি কিছু সফটওয়্যারের ওপর ৫ শতাংশ শুল্ক রয়েছে। অন্য ক্ষেত্রে হারটি ২৫ শতাংশ। শুল্ক ফাঁকি রোধে হারটি সব ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। ১৫ শতাংশ ভ্যাটও বসবে।