রাজনীতি সংবাদ প্রতিনিধি, গাজীপুর প্রকাশের সময় :২৬ মে, ২০২৩ ২:০১ : পূর্বাহ্ণ
ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের ‘ডামি প্রার্থী’ থেকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র বনে গেছেন জায়েদা খাতুন। ক্ষমতাসীন দলের সর্বাত্মক সমর্থন পেয়েও আজমত উল্লা খানের মতো শক্তিশালী প্রার্থী গৃহিণী জায়েদার কাছে হেরে গেছেন।
তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে ঘড়ি প্রতীকে জয় পেয়েছেন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে ১৬ হাজার ১৯৭ ভোটে পরাজিত করেছেন তিনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত দেড়টায় ঘোষিত বেসরকারি ফলাফল অনুযায়ী, ৪৮০ ভোটকেন্দ্রে টেবিল ঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়েছেন। নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট। জায়েদা খাতুন ১৬ হাজার ১৯৭ ভোট বেশি পেয়েছেন। ইসলামী আন্দোলনের গাজী আতাউর রহমান ৪৫ হাজার ৩৫৩ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন। ভোট দিয়েছেন ৪৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ ভোটার।
দিনভর অনেকটা শান্তিপূর্ণ ভোট হলেও রাতে ফল ঘোষণায় দীর্ঘ সময় লাগায় টানটান উত্তেজনা দেখা দেয়। দুই প্রার্থী হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে থাকায় তাদের সমর্থকদের মধ্যেও উত্তেজনা বিরাজ করে। ফল ঘোষণার শুরু থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন এগিয়ে ছিলেন। দুই প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান বেশি না হওয়ায় অনেকে নানা শঙ্কা প্রকাশ করতে থাকেন।
চূড়ান্ত ফল ঘোষণার আগেই অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আজমত উল্লা বিজয়ী হয়েছেন বলে তাকে অভিনন্দন জানাতে থাকেন। ভোটের ফল দেরিতে আসায় অনেকে সামাজিক মাধ্যমে নানা রকম মন্তব্য করেন।
ফল প্রকাশে দেরি হওয়ায় প্রশ্ন তোলেন মেয়র প্রার্থীরা। অবশেষে গভীর রাতে চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম।
বঙ্গবন্ধুকে কটূক্তি করে ২০২১ সালে মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত হন জাহাঙ্গীর আলম। আওয়ামী লীগ থেকেও বহিষ্কার হন। চলতি বছরেই সাধারণ ক্ষমায় দলে ফেরেন। কিন্তু মেয়র পদে নৌকার মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হলে আবার আজীবনের জন্য বহিষ্কার হন আওয়ামী লীগ থেকে।
কিন্তু ঋণখেলাপির কারণে তার প্রার্থিতা বাতিল হয়। ভোট করতে পারবেন না আশঙ্কায় মা জায়েদা খাতুনকেও প্রার্থী করেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর।
পুরো নির্বাচনী প্রচারে ছেলের ছায়া হয়েছিলেন জায়েদা। মা কাগজকলমে প্রার্থী হলেও বাস্তবে ভোটে লড়েছেন ছেলে। ফলে তার জয় আদতে জাহাঙ্গীরের বিজয়।
গতকাল ভোট চলাকালে দিনভর অধিকাংশ কেন্দ্রে জায়েদা খাতুনের এজেন্ট ছিল না। কিন্তু নির্লিপ্ত ছিলেন জাহাঙ্গীর। সন্ধ্যার পর নগরের বঙ্গতাজ মিলনায়তনে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে যখন বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে ভোটের ফল আসতে শুরু করে তখন ছিলেন শান্ত।
সবাইকে চমকে দিয়ে শুরু হয় টেবিল ঘড়ির জয়ধ্বনি। ভোট গণনা কেন্দ্রে একবারের জন্যেও আসেননি আজমত উল্লা। তাই সন্ধ্যা থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল, ফল তার প্রতিকূলে যাচ্ছে।
ফল ঘোষণার সময় আসেননি জায়েদা খাতুনও। জাহাঙ্গীরকে ঘিরেই মধ্যরাতে বিজয় উল্লাসে মাতেন সমর্থকরা। তখনও দেখা মেলেনি জায়েদার। ফলে জায়েদা মেয়র নির্বাচিত হলেও গাজীপুরের চাবি থাকছে জাহাঙ্গীরের হাতেই।
রাজনীতির মাঠে অভিষেকেই ‘চ্যাম্পিয়নের মতো’ খেলেছেন জায়েদা খাতুন। ভোটের মাঠে তাই শেষ হাসিটাই তারই। ছেলের ভোট ব্যাংক আর ‘সিমপ্যাথি কার্ড’ সঙ্গী করে গাজীপুরের মেয়র জায়েদা খাতুন, যিনি কিনা দেশের দ্বিতীয় কোনো নারী মেয়র।
বিজয়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ জয় গাজীপুরে মানুষের। আমার মা সবাইকে নিয়ে গাজীপুরের উন্নয়ন করবেন।’