রাজনীতি সংবাদ প্রতিনিধি, কক্সবাজার প্রকাশের সময় :২৪ এপ্রিল, ২০২৩ ১:৩৩ : পূর্বাহ্ণ
কক্সবাজারে মাছ ধরার ট্রলার থেকে অর্ধগলিত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া দশজনের পরিচয় পাওয়া গেছে।
গতকাল রোববার রাতে নিহতদের আত্মীয় স্বজন ও জনপ্রতিনিধিরা পুলিশের কাছে তাদের পরিচয় শনাক্ত করেন।
নিহতরা সবাই মহেশখালী ও চকরিয়ার বাসিন্দা। নিহতদের মধ্যে ট্রলারের মালিক সামশুল আলমও রয়েছেন।
তিনি মহেশখালীর হোয়ানক ইউনিয়নের ছনখোলা এলাকার বাসিন্দা রফিক মিয়ার ছেলে। তবে এখনো লাশগুলো হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নিহতদের আত্মীয়দের দেয়া তথ্যমতে নিহতরা হলেন- মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের ছনখোলা পাড়ার রফিক মিয়ার ছেলে সামশুল আলম (২৩), শাপলাপুর ইউনিয়নের মিটাছড়ি গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (১৮), জাফর আলমের ছেলে সওকত উল্লাহ (১৮), মুসা আলীর ছেলে ওসমান গনি (১৭), চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের কবির হোসাইনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩৪), শাহ আলমের ছেলে মোহাম্মদ শাহজাহান (৩৫) ও চকরিয়া পৌরসভার চিরিঙ্গা এলাকার জসিম উদ্দীনের ছেলে তারেক জিয়া (২৫),সাহাব মিয়ার ছেলে সাইফুল্লাহ (২৩), মোহাম্মদ আলীর ছেলে পারভেজ মোশাররফ (১৪), মোহাম্মদ হোসাইনের ছেলে নুরুল কবির (২৮)।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ট্রলারের বরফ রাখার কক্ষ (কোল্ডস্টোর) থেকে ১০ জেলের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনজনের হাত-পা রশি দিয়ে বাঁধা ছিল। একটি লাশের গলা থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন ছিল। আরেকটি লাশের হাত বিচ্ছিন্ন পাওয়া গেছে।
এদিকে রহস্য এ ঘটনা তদন্তে মাঠে নেমেছে পুলিশ ব্যারো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
ইতিমধ্যে পিবিআই প্রধান ও পুলিশের অতিরিক্ত আইজি বনজ কুমার মজুমদার ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত পর্যবেক্ষণ করে তদন্তের পর বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক লোকজন জানান, ৭ এপ্রিল রাতে সামশুল আলমের মালিকানাধীন একটি ফিশিং ট্রলার ১৯ জন জেলে নিয়ে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে নেমেছিল। ট্রলারে ছিলেন ট্রলারমালিক সামশুল আলম ও মাঝি মোহাম্মদ মুসাও। দুদিন পর জানা গেছে, ট্রলারটি সাগরে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কেন ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে, সে ব্যাপারে এলাকায় নানা কথা শোনা যাচ্ছে।
একে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেছেন, ‘এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ তাদের হাত-পা রশি দিয়ে বাঁধা ছিল, শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে। আমাদের ধারণা, জলদস্যুরা গভীর সাগরে তাদের হত্যা করেছে। পরে ট্রলারে লাশ রেখে দরজা লাগিয়ে দেয়।’
এর আগে বিকাল ৩টার দিকে শহরের নাজিরারটেক এলাকা থেকে মাছ ধরার ট্রলারের কোল্ডস্টোর থেকে অর্ধগলিত ১০ লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সদস্যরা।
স্থানীয়রা জানান, গভীর সাগরের কুতুবদিয়া চ্যানেলে ফিশিং বোটটির কিছু অংশ ডুবে ছিল। পরে অপর একটি ট্রলার ওই ফিশিং বোটটিকে বিশেষ ব্যবস্থায় টেনে শনিবার সন্ধ্যায় নাজিরারটেকে নিয়ে আসে।
ভাটার পর রোববার সকালে কোল্ড স্টোর দেখতে গিয়ে মানুষের হাত-পা দেখা যায়। তখনই পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। এরপর ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের সহযোগিতায় মরদেহগুলো উদ্ধার শুরু হয়।
আরও পড়ুন: কক্সবাজারে ভেসে আসা ট্রলারে মিললো ১০ লাশ