রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :২৩ এপ্রিল, ২০২৩ ১২:১১ : অপরাহ্ণ
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ আজ রোববার শেষ হচ্ছে। আগামীকাল সোমবার দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেবেন নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
আগামীকাল সকাল ১১টার দিকে বঙ্গভবনে নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে বিদায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ছাড়াও উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং মন্ত্রিসভার সদস্যসহ বিশিষ্টজনেরা।
রাষ্ট্রপতির সচিব মো. জয়নাল আবেদীন জানান, শপথ গ্রহণের পরপরই নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ আনুষ্ঠানিকভাবে চেয়ার বদল করবেন।
এর আগে গত ১৩ ফেব্রুয়াারি বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন মো. সাহাবুদ্দিন। তিনি ১৯৪৯ সালের ১০ ডিসেম্বর পাবনা শহরের শিবরামপুরের জুবিলী ট্যাংক পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম চুপ্পু। তাঁর বাবার নাম শরফুদ্দিন আনছারী এবং মা’র নাম খায়রুন্নেসা।
তিনি ১৯৭৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরে এলএলবি ও বিসিএস (বিচার) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
তিনি পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, পাবনা জেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। জেলা বাকশালের যুগ্ম-সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
সাহাবুদ্দিন ছেষট্টির ৬ দফা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
তিনি পাবনা জেলার আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করেন। ওই সময় সামরিক স্বৈরশাসকদের রোষানলে তিন বছর জেল খাটেন এবং অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হন।
কর্মজীবনে তিনি জেলা ও দায়রা জজ এবং দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক এবং বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন।
সাহাবুদ্দিন পরপর দুবার বিসিএস (বিচার) অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্বাচিত হন। চাকরি থেকে অবসরের পর হাইকোর্টে আইন পেশায় নিযুক্ত হন।
পরবর্তীকালে ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দুদক কমিশনার হিসেবে সাহাবুদ্দিন পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিরুদ্ধে উঠা তথাকথিত দুর্নীতির ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় দৃঢ়তার পরিচয় দেন।
সাবেক এই ছাত্রনেতা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
৭৩ বছর বয়সী মো. সাহাবুদ্দিন ২১তম রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের স্থলাভিষিক্ত হবেন।
রাষ্ট্রপতি হামিদ সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসাবে ৪১ দিনসহ টানা দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ১০ বছর ৪১ দিন অতিবাহিত করার পরে অবসরে যাচ্ছেন।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন কাটিয়ে আসা কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামের সন্তান মো. আবদুল হামিদ প্রথম দফায় ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। এরপর ২০১৮ সালে দ্বিতীয়বার ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
এর আগে আবদুল হামিদ সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত মো. জিল্লুর রহমান বিদেশে চিকিৎসাধীন থাকার সময় জাতীয় সংসদের স্পিকার হিসেবে কিছুদিন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি এবং জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর বেশ কিছুদিন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭০ সালে ময়মনসিংহ-১৮ আসন থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন আবদুল হামিদ। এরপর আর তাকে পেছনে তাকাতে হয়নি। কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকা থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।
আবদুল হামিদ একজন সফল রাজনীতিবিদ হিসেবে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে ১০ বছর দায়িত্ব পালন শেষে বঙ্গভবন ছাড়ছেন। তবে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন শেষে অবসরে গেলেও আইন অনুযায়ী অবসর ভাতা, চিকিৎসা সুবিধাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাবেন তিনি।