রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন, চট্টগ্রাম প্রকাশের সময় :২৯ মার্চ, ২০২৩ ১০:৪৫ : পূর্বাহ্ণ
এক সপ্তাহ আগে চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলী এলাকা থেকে নিখোঁজ হয়েছিলেন আবিদা সুলতানা আয়নী নামে ১০ বছর বয়সী এক কন্যাশিশু। শিশুটির খোঁজে থানায় ধর্না দিয়েও কোনো প্রতিকার না পেয়ে গতকাল মঙ্গলবার আদালতে অপহরণের মামলা করেছিলেন তার মা। অপহরণের ঘটনায় তিনি যাকে সন্দেহ করছিলেন, সেই প্রতিবেশী সবজি বিক্রেতা মো. রুবেলকে (৩৫) পিবিআই আটক করার পর শিশুটির বস্তাবন্দি লাশের খবর জানতে পারে।
নিখোঁজের ৮ দিন পর আজ বুধবার ভোর ৫টার দিকে পাহাড়তলী থানার সাগরিকা বাই লেইন মুরগি ফার্ম আলমতারা পুকুর পাড় এলাকার ডোবা থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়।
আবিদা সুলতানা আয়নী নগরীর পাহাড়তলী থানার কাজীর দিঘি এলাকার আব্দুল হাদী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। আটক সবজি ব্যবসায়ী রুবেলও একই এলাকার বাসিন্দা।
পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক ইলিয়াস খান বলেন, ‘১০ বছর বয়সী স্কুলছাত্রী আবিদা সুলতানা আয়নী নিখোঁজের পর পিবিআই ছায়া তদন্ত শুরু করে ঘটনার রহস্য উন্মোচন করে একজনকে আটক করে। তার দেখানো মতে পাহাড়তলী থানার আলমতারা পুকুরপাড়া মুরগি ফার্ম এলাকা থেকে আয়নীর মরদেহ পাওয়া যায়।’
পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পুলিশ সুপার (এসপি) নাঈমা সুলতানা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘শিশুটিকে অপহরণের পর ধর্ষণ করে রুবেল। এ সময় আয়নী চিৎকার করায় শ্বাসরোধে হত্যা করে সে। পরবর্তীতে মরদেহটি বস্তাবন্দির পর সবজির ঝুড়িতে করে রাতেই পুকুর পাড়া মুরগির ফার্ম এলাকায় ফেলে দিয়ে যায়।’
তিনি জানান, ঘটনার পর দাঁড়ি কেটে বেশ-ভূষা পরিবর্তন করলেও এলাকায় থেকে সবজি বিক্রি করে যাচ্ছিলো অভিযুক্ত রুবেল। তাই তার আচরণে সন্দেহজনক কিছু না পাওয়ায় ঘটনার রহস্য উন্মোচনে সময় লেগেছে।
আয়নীর মা বিবি ফাতেমা বলেন, ‘মেয়ে নিখোঁজ হওয়ার পর থানায় গিয়েছিলাম। পুলিশ যদি আমার মেয়েকে খুঁজতো-এই ঘটনা ঘটতো না। আমি বার বার এসআই দুলালকে বলেছি, রুবেলকে সন্দেহ হয়। সে আমাকে দেখলে হাসে। এসআই দুলাল আমার কথার গুরুত্ব দেয়নি। আমি মেয়েকে অনেক খুঁজেছি। রুবেলকে সন্দেহ করেছি। তারা আমার মেয়েকে জ্বিন চালান দিয়ে নিয়ে আসবে বলে ঠাট্টা করেছে।’
জানা যায়, ২১ মার্চ আরবি পড়তে বের হয়ে নিখোঁজ হয় আয়নী। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও কোথাও না পেয়ে থানায় মামলা করতে যান স্বজনরা। কিন্তু থানায় মামলা না নেয়ায় গত মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রামের নারী শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২ এ মামলার আবেদন করেন শিশুটির মা বিবি ফাতেমা।
মামলায় মো. রুবেল নামের এক সবজি বিক্রেতাকে আসামি করা হয়। আবেদনের শুনানি শেষে আদালতের বিচারক শরমিন জাহান পাহাড়তলী থানার ওসি সরাসরি এজাহার গ্রহণের নির্দেশ দেন।
মামলার আবেদনে বলা হয়, ওই শিশুর মা চট্টগ্রামে ও বাবা ঢাকায় পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। মা চাকরিতে গেলে শিশুটি তার দাদির কাছে থাকত। কয়েক দিন আগে শিশুটি তার মাকে জানায়, স্কুলের এক বান্ধবী বিড়ালছানা কিনেছে, সেও কিনবে। পাশাপাশি জানায়, রাস্তায় বসা এক সবজি বিক্রেতা তাকে আরেকজনের কাছ থেকে বিড়ালের বাচ্চা এনে দেবে বলেছে। তবে শিশুটির মা তাকে জানিয়ে দেয়, কারও কাছে যেতে হবে না, বেতন পাওয়ার পর তিনিই কিনে দেবেন। এর কয়েক দিনের মাথায় (২১ মার্চ) শিশুটি বিকেলে আরবি পড়তে যাওয়ার পর আর ফিরে না এলে তার দাদি ফোনে কর্মস্থলে মাকে বিষয়টি জানান। এরপর শিশুটির মা দ্রুত এসে সম্ভাব্য সব স্থানে খুঁজেও তার মেয়েকে পাননি।
পরে শিশুটির মা আশপাশের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেন। সেখানে দেখতে পান, ঘটনার আগের দিন ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে স্কুল বিরতির সময় রুবেল (৩৫) নামে এক সবজি বিক্রেতা কৌশলে শিশুটিকে তার বাসায় নিয়ে যান। আর ঘটনার দিনের ভিডিও ফুটেজে দেখতে পান, বিকেল ৪টা ২৫ মিনিটের দিকে শিশুটি বোরকা পরে আরবি পড়তে যাচ্ছিল। এ সময় রুবেলের সঙ্গে সে কথা বলছিল। এক পর্যায়ে রুবেল বাজারের থলেতে একটি বিড়ালছানা শিশুটির হাতে তুলে দেয়। এরপর রুবেল ও শিশুটিকে আর দেখা যায়নি। শিশুটির পরিবারের ধারণা, বিড়াল ছানার নাম করেই বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাকে।
সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের সহযোগিতায় রুবেল আয়নীকে অপহরণ করেছে বলে অভিযোগ করে আসছিলেন বিবি ফাতেমা।
এর আগে ২৪ অক্টোবর চিপস কিনতে বের হয়ে নগরীর জামালখান এলাকায় নিখোঁজ হন ৭ বছর বয়সী মার্জনা হক বর্ষা। এর তিনদিন পর একই এলাকার একটি নালা থেকে বর্ষার বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যার দায়ে লক্ষণ দাশ নামের এক দোকান কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এরপর ১৫ নভেম্বর নগরীর ইপিজেড থানার বন্দরটিলা নয়ারহাট বিদ্যুৎ অফিস এলাকার বাসা থেকে পার্শ্ববর্তী মসজিদে আরবি পড়তে যাওয়ার সময় নিখোঁজ হয় আলিনা ইসলাম আয়াত। পরদিন এই ঘটনায় ইপিজেড থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন তার বাবা সোহেল রানা।
নিখোঁজের ৯ দিন পর সিসিটিভি ফুটেজ দেখে জড়িত সন্দেহে আয়াতের পরিবারের ভাড়াটিয়া আবির আলীকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে আয়াতকে অপহরণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করেছিল বলে আদালতে জবানবন্দি দেয় আবির। এরপর পিবিআইয়ের কয়েক দফা চেষ্টায় নগরীর আকমল আলী সড়কের আশেপাশে বিভিন্ন জলাশয় থেকে আয়াতের খণ্ডিত পা ও মাথা উদ্ধার করা হয়।