রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :১২ মার্চ, ২০২৩ ৯:৩১ : পূর্বাহ্ণ
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল সিএনএনের এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির কাছে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান রঞ্জন প্রশ্ন করেন-গত জাতীয় নির্বাচনে যেভাবে আগের রাতে ভোট হয়ে গেছে, একইভাবে আগামী নির্বাচনও হবে কিনা? তার এ প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি দুই মন্ত্রীর কেউই।
গতকাল শনিবার বিকেলে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশের উন্নয়নের গল্প: আগামীর পথনকশা’ বিষয়ক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সিএনএন। অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রী। সিএনএনের এডিটর অ্যাট লার্জ রিচার্ড কোয়েস্ট দুই মন্ত্রীকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেন। অনুষ্ঠানে দর্শকদেরও দুই অতিথিকে প্রশ্ন করার সুযোগ দেওয়া হয়।
সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান দর্শক সারি থেকে দুই মন্ত্রীকে প্রশ্নটি করেছিলেন।
এই অনুষ্ঠানটি ছিল তিন দিনব্যাপী বাংলাদেশ বিজনেস সামিট, ২০২৩-এর একটি অংশ, যা গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেছেন।
অনুষ্ঠানে সিএনএনের এডিটর অ্যাট লার্জ রিচার্ড কোয়েস্ট পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন-প্রচার আছে, আপনাদের সরকার গণতান্ত্রিক নয়–এর উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাজারে অনেক ধারণাই আছে। কিছু মিডিয়ায় এ ধরনের অপপ্রচার আছে, যা সঠিক নয়।’
নির্বাচন নিয়ে সরকারের অবস্থান সংক্রান্ত কোয়েস্টের প্রশ্নের জবাবে আবদুল মোমেন বলেন, ‘বর্তমান সরকার গত ১৪ বছরে এ ক্ষেত্রে চমৎকার কাজ করেছে, কারণ এই সময়ে এক হাজারের বেশি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ভুয়া ভোটার তালিকা থাকলেও পরবর্তীতে ভোটার আইডি কার্ড চালু করা হয় এবং সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে স্বচ্ছভাবে গড়ে তোলার মতো নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ কর্তৃত্বে স্বাধীন করা হয়েছে।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, ‘‘সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এর মতো একের পর এক ধারণা দিচ্ছে।’’
বাণিজ্যমন্ত্রীও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতিধ্বনি করে বলেন, ‘সরকার আগামী সাধারণ নির্বাচনে যেতে প্রস্তুত।’
সরকার আগামী দিনে চীনা ঋণের ফাঁদে পড়বে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কিছু মানুষের মধ্যে একটা ধারণা আছে, বাংলাদেশ চীনের ঋণের ফাঁদে পড়বে। কিন্তু, এ ধরনের ফাঁদে পা দেওয়ার কোনো উপায় নেই। চীন একটি বন্ধুপ্রতীম দেশ এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী।’
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে আবদুল মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মূলমন্ত্র হলো ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরীতা নয়। সরকার এই সময়ে জোট নিরপেক্ষ নীতি অনুসরণ করছে। সরকার আঞ্চলিক অখন্ডতা, মানবিক সহায়তা এবং যুদ্ধের অবসান সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলোকে সমর্থন করেছে।’
জোটনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে বাংলাদেশ এখন কঠিন অবস্থায় পড়েছে কিনা–এ প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ শান্তিপ্রিয় দেশ। কখনোই যুদ্ধ সমর্থন করে না। কারণ, যুদ্ধে ধনী-গরিব সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, ‘অবশ্যই আমরা যুদ্ধের নিন্দা করি, কারণ আমরা একটি শান্তিপ্রিয় দেশ। আমরা জাতিসংঘে এক নম্বর সৈন্য প্রেরণকারী দেশ। আমরা টেকসই শান্তি চাই এবং তাই আমরা প্রতিবেশীদের মধ্যে এই ধরনের দর্শনের প্রচার করছি… শান্তির সংস্কৃতি, প্রতিবেশীদের মধ্যে টেকসই শান্তি।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ একদিন এক ভিন্ন দেশ হবে, এটি উৎপাদনের কেন্দ্রস্থলও হয়ে উঠবে।’