রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন, চট্টগ্রাম প্রকাশের সময় :৬ মার্চ, ২০২৩ ৫:২১ : অপরাহ্ণ
চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুপক্ষের প্রকাশ্যে বিরোধ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে কেন্দ্র। নেতাদের বিরোধের কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। গত ২ মার্চ ঢাকায় চট্টগ্রাম মহানগরের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে পূর্ণাঙ্গ কমিটির কথা শুনে রেগে যান স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মেজবাউল হোসেন সাচ্চু।
গত ২ মার্চ রাজধানীর কলাবাগান ক্লাবে চট্টগ্রাম মহানগরের নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রের এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। রাত ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত এই বৈঠক চলে।
বৈঠকে চট্টগ্রাম মহানগরের ২০ সদস্যের কমিটির মধ্যে ১৯ জন অংশ নেন। স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মেজবাউল হোসেন সাচ্চু ও সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবুসহ কেন্দ্রীয় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ এই বৈঠকে অংশ নেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি আবুল হাসনাত বেলাল কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মেজবাউল হোসেন সাচ্চুকে বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরে স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিরোধ এখন দৃশ্যমান। এই বিভাজন দূর করতে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে ফেলা উচিত। না হয় এই বিরোধ দূর হবে না।
আবুল হাসনাত বেলালের এই কথা শুনে রেগে যান সাচ্চু। এ সময় তিনি বেলালকে উদ্দেশ করে বলেন, ২০ জনের মধ্যে সমন্বয় করতে তোমাদের বেগ পেতে হচ্ছে। সেখানে ১০১ জনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিলে তো পরিস্থিতি আরো প্রকট রূপ ধারণ করবে।
বৈঠকে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবু ও সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজ বক্তব্য রাখতে চাইলে তাদের কথা বলার সুযোগ দেননি মেজবাউল হোসেন সাচ্চু ও আফজালুর রহমান বাবু।
এ বিষয়ে জানতে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবু ও সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তারা রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি সুজিত দাশ রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘আমাদের মধ্যে যে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে তা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ জানেন। এ কারণে তারা বৈঠকে দেবাশীষ নাথ দেবু ও আজিজুর রহমান আজিজকে কথা বলতে দেননি। তারা বক্তব্যে দিলে বৈঠকে যে হট্টগোল হতো সেটা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বুঝতে পেরেছেন।’
নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্পাদক মণ্ডলীর একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজনীতি সংবাদকে বলেন, বৈঠকে দেবু ও আজিজকে কথা বলতে না দেওয়ার অর্থ হলো তাদের প্রতি কেন্দ্র খুবই অসন্তুষ্ট। আর মেজবাউল হোসেন সাচ্চু তার বক্তব্যে বার্তা দিয়েছেন যে, চট্টগ্রাম মহানগরের দুপক্ষের মধ্যে সমঝোতা না হলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হবে না।
জানতে চাইলে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি ও কাউন্সিলর আবুল হাসনাত বেলাল রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে কিনা তা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বলতে পারবেন। তবে আমি কেন্দ্রের কাছে দাবি জানিয়েছি, পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে থানা-ওয়ার্ডের কমিটি পুনর্গঠন করা হোক।’
দীর্ঘ ২১ বছর পর গত বছরের ৯ মার্চ কেন্দ্র থেকে দেবাশীষ নাথ দেবুকে সভাপতি ও আজিজুর রহমান আজিজকে সাধারণ সম্পাদক করে স্বেচ্ছাসেবক লীগ চট্টগ্রাম মহানগর শাখার ২০ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি ৪ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদও গঠন করা হয়।
কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী। তবে কমিটির বেশিরভাগ সদস্য নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী।
কেন্দ্র থেকে এ আংশিক কমিটি ঘোষণার সময় বলা হয়েছিল, ৭ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে। কিন্তু এক বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হয়নি।
সংগঠনকে চাঙ্গা করতে নতুন কমিটি গঠন করার কথা বলা হলেও গত এক বছর ধরে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে নানা সমালোচনা ও বিতর্ক সৃষ্টি হচ্ছে।
নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাদের একাংশের অভিযোগ, সংগঠনের সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবুর বিরুদ্ধে কোটি টাকা চাঁদাবাজি মামলার চার্জ গঠনের পর নেতাকর্মীদের মধ্যে অস্বস্তি ও অস্থিরতা বিরাজ করছে। বিভিন্ন সাংগঠনিক বিষয়ে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে সংগঠনের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় তৃণমূলে সংগঠনের কোনো তৎপরতা নেই।
আরও পড়ুন: স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা দেবুর চাঁদাবাজি, গোপন ক্যামেরায় ধরা
নগরীতে স্বেচ্ছাসেবক লীগকে চাঙ্গা করার উদ্দেশ্যে নতুন কমিটি গঠন করা হলেও সংগঠনটি আরো ঝিমিয়ে গেছে বলে মনে করছেন সংগঠনটির একাংশের নেতারা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি গঠনের পর কয়েক মাস নেতাদের মধ্যে সমন্বয় ছিল। কিন্তু কয়েক মাস পর বিভিন্ন কর্মসূচিতে নানা ইস্যুতে নেতাদের মধ্যে তলে তলে দূরত্ব সৃষ্টি হতে থাকে। সম্প্রতি থানাভিত্তিক সমন্বয় কমিটি গঠন করা নিয়ে সংগঠনটির মধ্যে চরম বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। নেতাদের তলে তলে বিরোধ রূপ নেয় প্রকাশ্যে। দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন নেতারা।
দুপক্ষের বিরোধ প্রকট রূপ ধারণ করায় গত ২ মার্চ ঢাকায় চট্টগ্রাম মহানগরের নেতাদের ডেকে নেওয়া হয়।
আরও পড়ুন:
স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা দেবুর কোটি টাকার চাঁদাবাজি: ৫ মাসেও তদন্ত শেষ হয়নি কেন্দ্রের
চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগে ‘স্বেচ্ছাচারিতা’, নেতাদের ক্ষোভ