সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা জাতীয়

পিলখানায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ১৪ বছর আজ



রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ৯:৪৫ : পূর্বাহ্ণ

আলোচিত বিডিআর বিদ্রোহের (পিলখানা ট্র্যাজেডি) ১৪ বছর পূর্ণ হলো আজ।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআর (বাংলাদেশ রাইফেলস)-এর বিপথগামী কিছু সদস্য দাবি আদায়ের নামে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল সদর দপ্তর পিলখানায়।

অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের পাশাপাশি তৎকালীন মহাপরিচালকসহ ৫৭ জন বিভিন্ন পর্যায়ের সেনা কর্মকর্তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

বিপথগামী বিদ্রোহীদের হাত থেকে রেহাই পায়নি নারী ও শিশুরাও। তারা নারী ও শিশুসহ ১৭ জন বেসামরিক নাগরিককেও নির্মমভাবে হত্যা করে।

সেদিন দেশের বীর সন্তানদের লাশ দেখে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল গোটা বাংলাদেশ।

ওই ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার বিচার বিচারিক আদালত হয়ে হাইকোর্টে নিষ্পত্তি হতে লেগেছে ৮ বছর। তবে আপিল বিভাগে ৫ বছরের বেশি সময় ধরে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে দেশের ফৌজদারি মামলার ইতিহাসের সর্বাধিক আসামির এ মামলা।

একই ঘটনায় বিচারিক আদালতে ১৪ বছরের বেশি সময় ধরে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে বিস্ফোরক আইনের মামলাটিও। আড়াইশোর বেশি সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন ইতিমধ্যে। হত্যা মামলায় খালাস পাওয়া ২৭৮ জনও বিস্ফোরক মামলার আসামি।

হত্যা মামলায় আপিল বিভাগে আসামিদের পক্ষে আপিলের সারসংক্ষেপ জমা হলে চলতি বছরেই শুনানি হবে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। চলতি বছরেই বিস্ফোরক মামলার নিষ্পত্তির কথাও জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।

রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, ১ হাজার ৩০০-এর বেশি সাক্ষীর এ মামলায় এখন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের সাক্ষ্য নেওয়া হবে। ১৪ বছর আগে সংঘটিত হত্যকান্ডে বিডিআরের (এখন বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ জন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা নিহত হন। মোট ৭৪ জনকে হত্যা করা হয়। ঘটনার দুই দিন পর রাজধানীর লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়।

সারসংক্ষেপ পেলেই হত্যা মামলায় শুনানি

পিলখানা হত্যাকাণ্ডে আসামি করা হয় ৮৫০ জনকে। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর বিচারিক আদালতের রায়ে ১৫২ জনকে ফাঁসি, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস পান ২৭৮ জন। এরপর আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদ- অনুমোদন) ও আপিলের শুনানির জন্য হাইকোর্টে একটি বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করা হয়।

২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নভেম্বর বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত বেঞ্চের রায়ে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় ১৮৫ জনের। যাবজ্জীবন ও বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডিত ২৮৩ জন খালাস পান। তিন বিচারপতির সই করা ২৯ হাজার ৫৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি প্রকাশিত হয়।

উচ্চ আদালতে আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, হাইকোর্টের রায়ের পর ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে বিভিন্ন সময়ে মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড পাওয়া অন্তত ২১০ আসামির পক্ষে আপিল ও লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেছেন তারা। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের পক্ষে ২৬টি আপিল, বিচারিক আদালতে খালাসের পর হাইকোর্টে যাদের সাজা হয়েছে, তাদের পক্ষে ২৯টি ও যাবজ্জীবন কারাদদণ্ডপ্রাপ্তদের পক্ষে ২৬টি আপিল করা হয়েছে।

অন্যদিকে হাইকোর্টে অপর্যাপ্ত দণ্ড বা খালাসপ্রাপ্ত ৮৩ আসামির বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষে ২০টির বেশি আপিল হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, আপিল করলেও সারসংক্ষেপ দাখিল না হওয়ায় শুনানি শুরু করা যাচ্ছে না।

রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এ এম আমিন উদ্দিন গত বুধবার তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, সাজার বিরুদ্ধে ৩৩ জন আপিল করলেও সারসংক্ষেপ জমা দেননি। এ কারণে মামলাটির শুনানি হচ্ছে না।

বিস্ফোরক মামলার বিচার চলছে ধীরগতিতে

৮৩৪ আসামির এ মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে ১ হাজার ৩৫৭ জনকে। ২০১০ সালের ২৭ জুন অভিযোগ গঠন হয়। ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৫৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে বলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা জানান। মামলাটির বিচারকাজ চলছে পুরান ঢাকার বকশীবাজারে আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে।

আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ বলেন, ২৭৮ জন আসামি হত্যা মামলায় খালাস পেয়েছিলেন। তারা বিস্ফোরক আইনের মামলায়ও আসামি। কিন্তু এই মামলার নিষ্পত্তি না হওয়ায় হত্যা মামলায় যারা খালাস পেয়েছেন, তারাও মুক্তি পাচ্ছেন না, জামিনও হচ্ছে না।

বিস্ফোরক মামলার আসামিদের অন্যতম আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ হত্যা মামলা দ্রুত শেষ করেছে। আর এই মামলা চলছে শ্লথগতিতে। ১০ বছর বা অন্য মেয়াদে কারাদদণ্ডপ্রাপ্ত অনেক আসামির সাজার মেয়াদ শেষ হলেও এই মামলার কারণে তারা মুক্তি পাচ্ছেন না। তারা দোষী না নির্দোষ তা-ও জানতে পারছেন না। এর অর্থ হলো হত্যা মামলায় খালাস পাওয়া আসামিরা যাতে বেরোতে না পারে, সে জন্যই এই মামলায় ধীরগতি।

বিস্ফোরক মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, এটি রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা। মামলাটি ভালোভাবে পরিচালনা করতে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এতো বেশিসংখ্যক সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়তো সম্ভব হবে না। গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের সাক্ষ্য নিয়ে এ বছরেই বিচার নিষ্পত্তির চেষ্টা করা হবে।

কর্মসূচি
দিবসটি পালন করতে বিজিবি ও সেনাবাহিনী নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। দিনের কর্মসূচি অনুযায়ী শহীদ ব্যক্তিবর্গের রুহের মাগফিরাত কামনায় পিলখানার বিজিবি সদর দপ্তর এবং বিজিবির সব মসজিদ ও বিওপি পর্যায়ে সব রিজিয়ন, প্রতিষ্ঠান, সেক্টর ও ইউনিটের ব্যবস্থাপনায় পবিত্র কোরআন খতম, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হবে।

দিবসটি পালনে সব স্থাপনায় বিজিবি রেজিমেন্টাল পতাকা অর্ধনমিত থাকবে এবং সদস্যরা কালো ব্যাজ পরিধান করবেন।

এ ছাড়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় সকাল ৯টায় বনানী সামরিক কবরস্থানে রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধানরা (সম্মিলিতভাবে), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও বিজিবি মহাপরিচালক (একত্রে) ও শহীদদের নিকটাত্মীয়রা স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর