রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ১০:২৯ : অপরাহ্ণ
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ নিয়ে নানা সমীকরণ চলছে। সভাপতি পদে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী জোরালো আলোচনায় থাকলেও ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর জাবেদকে নিয়েও নেতাকর্মীদের মধ্যে নানা জল্পনাকল্পনা চলছে।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ মারা যাওয়ার পর সভাপতি পদটি শূন্য হয়ে যায়।
গত ১২ ডিসেম্বর দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে মোছলেম উদ্দিন আহমদ সভাপতি ও মফিজুর রহমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন।
সম্মেলনের পরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার কথা থাকলেও তা আর হয়নি। এরই মধ্যে সভাপতির মৃত্যুর পর নেতৃত্ব নির্বাচন নিয়ে সংকটে পড়েছে সংগঠনটি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্র থেকে এখন একজনকে সভাপতি করে একেবারে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে। কাউকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হবে না।
জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই এখন দক্ষিণ জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নির্বাচন করবেন।
সভাপতি পদে কে আসছেন-তা নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে শুরু হয়েছে নানা জল্পনাকল্পনা। সভাপতি পদের জন্য জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা কেন্দ্রে তৎপরতা শুরু করেছেন।
নতুন কমিটির সভাপতি পদে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর জাবেদ, আগের কমিটির চার সহসভাপতি পটিয়ার মোতাহারুল ইসলাম চৌধুরী, আনোয়ারার আবুল কালাম চৌধুরী, সাতকানিয়ার মোহাম্মদ ইদ্রিছ ও বোয়ালখালীর এস এম আবুল কালাম, চন্দনাইশের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী এবং আগের কমিটির সদস্য ও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আবু সুফিয়ানের নাম আলোচনায় এসেছে।
এদের মধ্যে আগের কমিটির জ্যেষ্ঠ ও সক্রিয় নেতা হিসেবে আলোচনায় এগিয়ে আছেন মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি পটিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।
জেলা আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী এখন সংগঠনের জ্যেষ্ঠ নেতা। এ ছাড়া তিনি একজন পরিচ্ছন্ন, ত্যাগী ও দক্ষ নেতা। দলের জন্য তিনি নিবেদিতপ্রাণ। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবেও খ্যাতি ও সুনাম অর্জন করেছেন। সবকিছু বিবেচনায় মোতাহারুল ইসলামের সভাপতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
এদিকে মোহাম্মদ ইদ্রিছ ও আবু সুফিয়ান সাতকানিয়ার বাসিন্দা হওয়ায় সভাপতি পদে তাদের স্থান পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানও সাতকানিয়ার বাসিন্দা। জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বে একই উপজেলা থেকে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করার রেওয়াজ নেই।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দায়িত্বশীল একজন নেতা জানিয়েছেন, জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক যেহেতু সাতকানিয়ার বাসিন্দা, তাই ওই উপজেলা থেকে কেউ সভাপতি পদে স্থান পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
সাবেক রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালামের নাম আলোচনায় এলেও সভাপতি পদ নিয়ে তার খুব একটা আগ্রহ নেই বলে জানিয়েছেন।
আর আবুল কালাম চৌধুরী ও সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নাম আলোচনায় এলেও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে তাদের খুব একটা তৎপরতা না থাকায় তারা ছিঁটকে পড়তে পারেন বলে মনে করছেন নেতাদের অনেকেই।
জানা গেছে, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর জাবেদের নাম আলোচনায় এলেও তিনি সভাপতি পদে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
তবে তার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা তাকে রাজি করাতে চাপ প্রয়োগ করছেন। এমনকি সাইফুজ্জামান চৌধুরীর জাবেদের মাও তাকে রাজি করাতে উৎসাহিত করছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী পটিয়ার সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। সামশুল হকের সঙ্গে ভূমিমন্ত্রী জাবেদের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে।
জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানও ভূমিমন্ত্রী জাবেদের বিরোধী হিসেবে পরিচিত।
ভূমিমন্ত্রী জাবেদের অনুসারীরা মনে করছেন, মোতাহেরুল ইসলাম জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হলে সংগঠনটির কর্তৃত্ব একটি পক্ষের কব্জায় চলে যাবে।
এই অবস্থায় মোতাহেরুল ইসলামকে ঠেকাতে ভূমিমন্ত্রী জাবেদের অনুসারীরা তৎপর হয়ে উঠেছেন।
নেতাকর্মী ও সমর্থকদের আবদার ও প্রচন্ড চাপের মুখে জাবেদও কিছুটা নমনীয় মনোভাব গ্রহণ করেছেন বলে জানা গেছে। শেষ পর্যন্ত জাবেদ সভাপতি হলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না।
উল্লেখ্য, ভূমিমন্ত্রী জাবেদের বাবা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু সাত বছর দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।
২০০৫ সালের ২৩ জুলাই জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু সভাপতি এবং মোছলেম উদ্দিন আহমদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন।
২০১২ সালে আখতারুজ্জামানের পর ২০১৩ সালে মোছলেম উদ্দিনকে সভাপতি ও মফিজুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে কেন্দ্র থেকে কমিটি ঘোষণা করা হয়।