বৃহস্পতিবার, ২ মে, ২০২৪ | ১৯ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২২ শাওয়াল, ১৪৪৫

মূলপাতা দেশজুড়ে

পারিশ্রমিক ছাড়া ৫০ বছরে খুঁড়েছেন ৫০০ কবর


রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ১:৩৩ : অপরাহ্ণ
আলী হোসেন ঢালী
Rajnitisangbad Facebook Page

রাত-দিন যেকোনো সময় মানুষের মৃত্যুর খবর শুনলে ছুটে যান তিনি। চলে যান মরদেহের মাপ নিতে, এরপর খোঁড়া শুরু করেন কবর। তবে এজন্য নেন না কোনো পারিশ্রমিক। কবর খোঁড়াই যেন তার নেশা হয়ে গেছে। প্রায় ৫০ বছরে এখন পর্যন্ত খুঁড়েছেন ৫০০ কবর।

বলছি চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ভাটিয়ালপুর গ্রামের আলী হোসেন ঢালীর (৭০) কথা। তিনি মৃত সুলতান ঢালীর ছেলে। তার ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে রয়েছে। দুই স্ত্রীর কবরও তিনি নিজের হাতেই খুঁড়েছেন।

যখন যে কাজ পান, সেই কাজ করেই সংসার চালান এই বৃদ্ধ। কখনও কৃষি কাজ আবার রাজ-জুগালি, কখনও রাস্তায় মাটিকাটার কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তবুও কবর খুঁড়ে কারও থেকে কোনো টাকা নেন না তিনি।

জানা যায়, আলী হোসেন বাড়িতে একটি ছোট ঘরে বসবাস করেন। ঘরটির টিনে জং ধরেছে অনেক আগেই। ঘরে জায়গা না থাকায় এক ছেলে শ্বশুরবাড়িতে থাকেন। মাত্র তিন শতক জায়গায় অন্য ছেলেদের নিয়ে জোড়া তালি দেয়া ঘরটিতে দিন কাটে তার।

জানা যায়, চাঁদপুর সদরের দাসাদি গ্রাম, ফরিদগঞ্জ উপজেলার চাঁদপুর গ্রাম, ভটিয়ালপুর, প্রত্যাশী, চিরকা গ্রাম, ধানুয়া, চির কুমরিয়া, চর দুঃখিয়া, গাব্দেরগাঁও, নয়ার হাট, চর ভাগল গ্রামসহ জেলার বিভিন্নস্থানে মৃত ব্যক্তির কবর খুঁড়েছেন।

এ বিষয়ে আলী হোসেন বলেন, আমার বাবা কবর খোঁড়ার কাজ করতেন। তার মৃত্যুর পর আমি কবর খোঁড়ার কাজ শুরু করি। তখন ১৫-১৭ বছরের যুবক ছিলাম। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ বছরে পাঁচশ’র বেশি কবর খোঁড়ার কাজ করেছি। বাবার স্মৃতি ধরে রাখার জন্য আমি এই কাজ করি। করোনাকালে সবাই ভয়ে মরদেহ থেকে দূরে চলে যেতো। তখন আমি করোনা আক্রান্তসহ নানা রোগে মৃতদের কবর দিয়েছি।

তিনি বলেন, আমার টাকা-পয়সার কোনো লোভ নেই। কবর খুঁড়ে কারো কাছ থেকে হাদিয়া বা টাকা পয়সা নেই না। এমনকি অনুষ্ঠানেও খেতে যাই না। মৃত ব্যক্তির কবর খোঁড়া নেশা হয়ে গেছে। আমি গরিব মানুষ। শুধু ঘরের ভিটা আছে। দুই স্ত্রীর কবরও দিয়েছি। আল্লাহ যদি দেয় আখিরাতে কিছু পাবো।

ফরিদগঞ্জ পৌরসভার ৯ নম্বর কাউন্সিলর সাজ্জাদ হোসেন টিটু বলেন, আমি ছোটবেলা থেকে দেখেছি আলী অনেক মানুষের কবর খুঁড়ে দেন। তিনি সাধারণ এক কৃষক-শ্রমিক। বিনিময়ে কোনো টাকা নেয় না। এরকম মানুষ সমাজে খুব কম পাওয়া যায়। একজন দিনমজুর হয়েও পরোপকারী মানুষ হিসেবে ভূমিকা রাখছেন।

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর