রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :২৬ জানুয়ারি, ২০২৩ ৪:৩১ : অপরাহ্ণ
মো. হাফিজুর রহমান হাফিজ। জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। দুই হাত দুই পা বিকল হলেও দমে যাননি তিনি। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পায়ের সাহায্যে পরবর্তীতে মুখ দিয়ে লিখেই অর্জন করেছেন মাস্টার্স ডিগ্রি। বর্তমানে চাকরি করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি)।
মূলত পড়ালেখার হাতেখড়ি তার বাবর কাছে। প্রথমে তার বাবার কাছেই বাংলা রিডিং পড়া শিখেন। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লিখেন পায়ের সাহায্যে। অষ্টম শ্রেণি থেকে মুখ দিয়ে লেখা শুরু করেন তিনি।
২০০৯ সালে মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪ দশমিক ১৯ পেয়ে উত্তীর্ণ হন জ্ঞানপিপাসু হাফিজুর। তারপর উপজেলার ধুনট ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০১১ সালে এইচএসসিতে জিপিএ ৩ দশমিক ৬০ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।
২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে কোনও ভর্তি কোচিং না করেই জবির ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় স্থান করে নেন হাফিজুর। ভর্তি হন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে। একই বিষয়ে সফলতার সঙ্গে শেষ করেন মাস্টার্স ডিগ্রি।
তিনি বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ দপ্তরে অফিস সেক্রেটারি কাম কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কর্মরত আছেন।
কম্পিউটারের কাজটিও তিনি মুখ দিয়ে করে থাকেন। মুখে একটি স্টিক ধরে এ কাজটি করেন।
দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে প্রতিবন্ধীদের অংশগ্রহণে ২০১০ সালে জাপানে হ্যান্ডি ম্যারাথন নামে একেটি প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ সমিতি (বিপিকেএস) মাধ্যমে তিনি সে প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
হাফিজুর রহমানের জন্ম ১৯৯৩ সালে বগুড়ার ধুনট উপজেলার বেলকুচি গ্রামের এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে। বাবা মরহুম মো. মফিজ উদ্দিন ছিলেন দিনমজুর কৃষক, মা ফিরোজা বেগম গৃহিণী।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উদ্দেশে হাফিজুর বলেন, আমাদের উচিত লক্ষ্য স্থির করা। তাহলে আমরা সমাজের বোঝা হয়ে থাকব না। প্রতিযোগিতায় সাধারণ মানুষের মতোই অংশগ্রহণ করতে চাই।
ছোটবেলা থেকেই নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেয়া হাফিজুরের পড়ালেখা ও যাবতীয় ভরণপোষণ হয়েছে অন্যের সাহায্য সহযোগিতায়।
মাঝে সরকারের দেয়া প্রতিবন্ধী ভাতা, গ্রামের লোকজনের সাহায্য সহযোগিতা ও ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের টিউশনি করিয়ে নামমাত্র অর্থ উপার্জন করেছেন। চার ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন তিনি।
হাফিজুর রহমান বলেন, আমরা চার ভাই। আমি ছিলাম সবার ছোট, সবাই কৃষিকাজ করতো। বিয়ে করে সবাই তাদের পরিবার নিয়ে ব্যস্ত ছিল। আজ আমি মাস্টার্স সম্পন্ন করেছি। এখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্মরত রয়েছি এটা জেনে আমার এলাকার অনেকেই গর্ববোধ করেন। এক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে গেঞ্জি ও দই বিক্রি করেছিলেন এই সংগ্রামী মানুষটি।
বর্তমানে হাফিজুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই তার ভাতিজা মোহাম্মদ ইব্রাহিমকে নিয়ে বাস করছেন। গ্রামে তার পরিবার রয়েছে। একটি ফুটফুটে কন্যাসন্তান আছে তার।