রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :১৮ জানুয়ারি, ২০২৩ ৯:১৯ : অপরাহ্ণ
মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র ঢাকা সফর নিয়ে জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জানতে চেয়েছেন, তার সফর নিয়ে রাজনৈতিকভাবে একটা গুঞ্জন আছে। অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে দেশে কিছু একটা হবে কিনা?
আজ বুধবার জাতীয় সংসদে তিনি পয়েন্ট অব অর্ডারে এই প্রশ্ন রাখেন।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীকে একটি প্রশ্ন করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সে পর্ব তো শেষ হয়ে গেলো। এখন তো আর উত্তর পাওয়ার বা প্রশ্ন করার সুযোগ নেই।’
এ সময় স্পিকার বলেন, ‘আপনি পরে কোনো একদিন বলবেন।’
তখন চুন্নু বলেন, ‘আমি পয়েন্ট অব অর্ডারে বলছি, এখন কিন্তু দুটি বিষয় খুব আলোচনায় এসেছে। প্রথমত ৪৫০ কোটি ডলারের আইএমএফ’র ঋণ। এটা পাওয়ার জন্য কয়েকটি শর্ত পূরণ করতে হচ্ছে, একটি হলো যে, ওই ঋণের কারণে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে, গ্যাসের দাম বাড়ানো হবে, এর ফলে কৃষিপণ্যে যেটা উৎপাদন করে তার সামগ্রিক উৎপাদন ব্যয় যাবে। যদি বেড়ে যায় তার ফলে আমাদের অর্থনৈতিক যে চাপ আছে তা বাড়বে, ফলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে, সরকারের ওপর চাপ বাড়বে। কীভাবে সরকার এর মোকাবিলা করবে?’
জাতীয় পার্টির মহাসচিব আরও বলেন, ‘মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু আমাদের দেশে এসেছিলেন, তিনি পাকিস্তান সফরের পরে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) ক্ষমতাচ্যুত হয়ে যায়। এই ভদ্রলোক বাংলাদেশে আসার পরে অনেকে মনে করেছিল, এদেশেও কিছু একটা হয়ে যাবে। তবে উনি যাবার পরে সরকারকে বেশ একটু খুশি খুশি লাগছে আর অন্য দলটিও দেখছি বেশ খুশি। তবে আমরা জাতীয় পার্টি ওইভাবে নিচ্ছি না, স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছি। তবে ওনার সফর নিয়ে রাজনৈতিকভাবে একটা গুঞ্জন আছে। অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে কিছু একটা হয় কিনা?’
এ সময় সংসদে এ বক্তব্যের আপত্তি জানাতে থাকেন সংসদ সদস্যরা।
আরও পড়ুন: গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশকে পরামর্শ দেবে যুক্তরাষ্ট্র: ডোনাল্ড লু
তখন চুন্নু তাদের বলেন, ‘আরে আমাকে বলতে দেন, হৈ চৈ করছেন কেন?’
এ সময় স্পিকার তার মাইক বন্ধ করে দেন, বসতে অনুরোধ করেন। তারপরেও চুন্নু তার বক্তব্য দিয়ে যেতে থাকেন। পরে স্পিকার আবার মাইক চালু করেন।
তখন চুন্নুকে বলতে শোনা যায়, ‘এ বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যদি উত্তর দেন, তাহলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে, জাতি জানবে।’
এ প্রশ্নের উত্তর দিতে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভেবেছিলাম আজ আর কথা বলবো না, কিন্তু প্রশ্ন যখন হয়েছে আমি উত্তর দিচ্ছি।’
এর আগেই প্রধানমন্ত্রী তার নির্ধারিত প্রশ্ন উত্তর শেষ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আইএমএফ ঋণ দেয় যে দেশ ঋণ পরিশোধের যোগ্যতা অর্জন করে। এখানে তেমন কোনো শর্ত দিয়ে কিন্তু আমরা ঋণ নেইনি। অর্থনৈতিকভাবে যেমন বিদ্যুৎ আমরা তো বিদ্যুতে ভর্তুকি দিচ্ছি, গ্যাসে ভর্তুকি দিচ্ছি। আমার প্রশ্ন, পৃথিবীর কোন দেশ বিদ্যুতে, গ্যাসে ভর্তুকি দেয়, কেউ দেয় না।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছি, সরবরাহ নিশ্চিত করেছি কিন্তু বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। ইংল্যান্ডে দেড়শ’ ভাগ বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করেছে। ইউক্রেন আর রাশিয়ার যুদ্ধের পর আমরা এখন মাত্র ৫ ভাগ বাড়ালাম, আর বাড়ছে কিছু গ্যাসের দাম। গ্যাস যেটা আমরা ৬ ডলারে স্পট মূল্যে কিনতাম এলএনজি সেটা এখন ৬৮ ডলার। কতো ভর্তুকি দেবে সরকার? সরকার যে ভর্তুকিটা দেবে সেটা তো জনগণেরই টাকা।’
তবে ডোনাল্ড লু’র সফর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কোনো কথা বলেননি।
আরও পড়ুন: ডোনাল্ড লু’র বক্তব্য নিয়ে সরকার মিথ্যাচার করেছে: মির্জা ফখরুল