রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :১৪ জানুয়ারি, ২০২৩ ৩:০২ : অপরাহ্ণ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন আওয়ামী লীগের তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
আজ শনিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকারের নেতৃত্বে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে তারা নিজেদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন।
মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা প্রার্থীরা হলেন-ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন-সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন মঈন ও আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু।
আওয়ামী লীগের তিন প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহার করায় ‘কপাল খুলছে’ বিএনপি থেকে পদত্যাগ করা উকিল আবদুস সাত্তার ভূঞার।
বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা আবদুস সাত্তারকে বিজয়ী করতেই আওয়ামী লীগের তিন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র।
ভোটের আগে বেশ আলোচনায় আসেন পাঁচবারের সংসদ সদস্য ৮৪ বছর বয়সী আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে পদত্যাগ করে ক্ষোভে দল থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। তার নামে কেনা হয় মনোনয়নপত্র।
এর পরপরই তাকে দল থেকে বহিষ্কারের প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি। সর্বশেষ সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপি তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে।
সংসদ থেকে বিএনপির পদত্যাগকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে সাত্তারকে সরকার নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছেন বলে দলটির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়।
জানা যায়, গতকাল শুক্রবার কেন্দ্রের নির্দেশে জেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রার্থীদের এক বৈঠকে তিন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র. আ. ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকারসহ দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের জরুরি বৈঠকে নেতৃবৃন্দের অনুরোধে আজ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের চিঠি জমা দেন আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু, সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক ও সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা মঈনউদ্দিন মঈন, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা ও স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু সশরীরে উপস্থিত হয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন।
এসময় জেলা প্রশাসকের পক্ষে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. জিয়াউল হক মীর ও জেলা নিবাচন কমকতা জিয়াউল হক মীর মনোনয়ন প্রত্যাহারপত্র গ্রহণ করেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকার দলের সঙ্গে জড়িত প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা করার বিষয়টি স্বীকার করেন। এক প্রশ্নের জবাবে শুক্রবার রাতে সাংবাদিকদের বলেন, এখানে যেহেতু দল কোনো প্রার্থী দেয়নি সেক্ষেত্রে দলের কথা বলে কেউ প্রার্থী হতে পারেন না।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, মূলত আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়াকে কেন্দ্র করেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের সরে যাওয়া। এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে আব্দুস সাত্তার কিংবা অন্য প্রার্থী জয়ী হলে সেক্ষেত্রে দলীয় কৌশল বাস্তবায়ন হবে, যেটি কেন্দ্রীয় নির্দেশনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, মূলত কৌশলগত কারণে এখানে প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। এ আসনে পরবর্তী নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানা। আব্দুস সাত্তারের জয়লাভের মধ্য দিয়ে যেন এখানে তার ইমেজ ঠিক থাকে এর সুযোগ নিতে চায় আওয়ামী লীগ। কেননা, আওয়ামী লীগ মনে করছে আব্দুস সাত্তারের চেয়ে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি রুমি ফারহানা। পরবর্তী নির্বাচনে আব্দুস সাত্তার থাকলে আওয়ামী লীগের জন্য জয়লাভ অনেকটা সহজ হবে। এছাড়া বিএনপির হয়ে পাঁচবারের এমপি হওয়া ব্যক্তি ভোটে দাঁড়িয়ে পাস করানোর বিষয়টিও আলোচনায় আনা যাবে।
বিএনপি নেত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা অবশ্য মনে করেন, সরকার বিএনপি সংসদ সদস্যদের পদত্যাগকে বিতর্কিত করতে আব্দুস সাত্তারকে নির্বাচনে আনা হয়েছে। সরকার সেটা সফলভাবে করেছে। তাকে চাপ দিয়ে এই নির্বাচনে আনা হয়েছে।
আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়ার নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক বলে তিনি মন্তব্য করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৭৩ সালের পর ওই সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়নি।
২০১৮ সালের নির্বাচনে জোটের মারপ্যাঁচে জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ায় সেখানে নিজেদের প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ।
সেখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর ভরাডুবি হয়। নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া জয়লাভ করেন, যিনি পাঁচবারের সংসদ সদস্য।
ব্যক্তিগত ও এলাকায় দলীয় অবস্থান বিবেচনায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াই করে সামান্য ভোটে হেরে যান আওয়ামী লীগ নেতা মো. মঈন উদ্দিন মঈন।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দল দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ায় আওয়ামী লীগের ওই নেতা হেরে যান বলে মনে করা হয়।