শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা জাতীয়

ফেলানী হত্যার ১২ বছর: বিচারের জন্য আর কত অপেক্ষা


২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি সকালে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে নিজ বাড়িতে ফেরার পথে বিএসএফের গুলিতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে কিশোরী ফেলানী। দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টা ফেলানীর নিথর দেহ কাঁটাতারের ওপর ঝুলে ছিল। ছবি: সংগৃহীত

রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :৭ জানুয়ারি, ২০২৩ ১০:০৩ : পূর্বাহ্ণ

আজ ৭ জানুয়ারি। ২০১১ সালের এই দিনে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর রামখানা অনন্তপুর সীমান্তে ১৪ বছরের কিশোরী ফেলানী খাতুনকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। বিএসএফের গুলিতে নিহত হওয়ার পরও সাড়ে চার ঘণ্টা কাঁটাতারে ঝুলে ছিল ফেলানীর নিথর দেহ। এ ঘটনায় গণমাধ্যমসহ বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে ভারত। ফেলানী হত্যার দীর্ঘ ১২ বছর পূর্ণ হলেও এখন পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত বিচার পায়নি তার পরিবার।

দেশ-বিদেশে বহুল আলোচিত এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘসময় পেরিয়ে গেলেও প্রিয় সন্তান হত্যার বিচারের আশায় এখনো কাঁদে ফেলানীর পরিবার।

জানা যায়, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনীটারী গ্রামের শ্রমিক নূরুল ইসলাম পরিবার নিয়ে থাকতেন ভারতের বঙ্গাইগাঁও এলাকায়। সেখানেই তিনি একটি ইট ভাটায় শ্রমিকের কাজ করতেন। এর মধ্যে বাংলাদেশে নিজের খালাতো ভাইয়ের সাথে বিয়ে ঠিক হয় নিহত কিশোরী ফেলানী খাতুনের। সেই উদ্দেশ্যে বাবা নুরুল ইসলামের বড় মেয়ে ফেলানীকে নিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে রওনা দেয়।

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভোর ৬টার দিকে দালালের মাধ্যমে ফুলবাড়ি উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে মই বেয়ে কাঁটাতার পার হচ্ছিল ফেলানী ও বাবা নুরুল ইসলাম।

মইয়ের সামনে ছিল বাবা নুরুল ইসলাম তার পিছনে ফেলানী। এসময় বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ গুলি ছুঁড়লে গুলিবিদ্ধ হয়ে কাঁটাতারে ঝুলে পরে কিশোরী ফেলানী। এ সময় মই বেয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ফেলানীর বাবা নেমে পরায় তিনি বেঁচে যান।

গুলিবিদ্ধ হয়ে ছটফট করে পানি পানি বলে চিৎকার করতে করতে নির্মমভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে ফেলানী। দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টা কাঁটাতারে ঝুলে থাকে তার নিথর দেহ। এর পর তার লাশ নিয়ে যায় বিএসএফ। এর প্রায় ৩০ ঘণ্টা পর (৮ জানুয়ারি) শনিবার লাশ ফেরত দেয় বিএসএফ।

এ ঘটনায় বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পরে ভারত সেই চাপের মুখে পরে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের কোচবিহারের জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টে ফেলানী হত্যা মামলার বিচার শুরু হয়।

বিএসএফএর এ কোর্টে স্বাক্ষী দেন ফেলানীর বাবা নূর ইসলাম ও মামা হানিফ। ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর আসামি অমিয় ঘোষকে খালাস দেয় বিএসএফ’র বিশেষ কোর্ট। রায় প্রত্যাখ্যান করে পুন:বিচারের দাবী জানায় ফেলানীর বাবা।

২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বিএসএফ’র আদালতে পুন:বিচার শুরু হয়। ১৭ নভেম্বর আদালতে এবার শুধু স্বাক্ষ্য দেন ফেলানীর বাবা। আবারও ২০১৫ সালের ২ জুলাই ওই আদালত পুনরায় আত্মস্বীকৃত আসামি অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেয়।

রায়ের পরে একই বছর ১৪ জুলাই ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা ম (মাসুম) ফেলানীর বাবার পক্ষে দেশটির সুপ্রীম কোর্টে রিট পিটিশন করে। ওই বছর ৬ অক্টোবর রিট শুনানি শুরু হয়। এরপর ২০১৬, ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে কয়েক দফা শুনানি পিছিয়ে যায়। পরে ২০২০ সালের ১৮ মার্চ করোনা শুরুর আগে শুনানীর দিন ধার্য হলেও শুনানি হয়নি।

ফেলানীর বাবা নূর ইসলাম বলেন, ‘মেয়ে ফেলানীকে বিয়ে দিতে সঙ্গে করে সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার সময় আমার চোখের সামনে বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ মেয়েকে হত্যা করেছে। আমি অমিয় ঘোষের ফাঁসি চাই। দু’দেশের সরকার যেন সঠিক বিচারটা করে।’

হতাশা প্রকাশ করে ফেলানীর মা জাহানারা বেগম বলেন, ‘আমার মেয়েকে যখন হত্যা করা হয় তখন আমি ভারতে ছিলাম। আমার বোনের ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার জন্য ফেলানীর বাবা ওকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশে আসার সময় বিএসএফ ফেলানীকে হত্যা করেছে। ফেলানী আমার বড় মেয়ে। আমার বুকটা খালি করে দিয়েছে। আমার মেয়ে হত্যার বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আত্মা শান্তি পাবে না।’

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনীটারী গ্রামের নুরুল ইসলাম নুরু পরিবার নিয়ে থাকতেন ভারতের দিল্লিতে। নুরুল ইসলাম ও জাহানারা দম্পতির আট সন্তানের মধ্যে সবার বড় ছিল ফেলানী।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর