দুর্নীতির টাকা উসুল করতে মেট্রোরেলের অতিরিক্ত ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেল প্রকল্পে দুর্নীতির কারণেই কয়েক দফা মেয়াদ বাড়িয়ে অধিক ব্যয় করা হয়েছে। এখন সেই অতিরিক্ত ব্যয় উসুল করতে মেট্রোরেলের অতিরিক্ত ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু জনগণ সরকারের দুর্নীতির দায় নেবে না। জনগণ তাদের প্রতিশ্রুত সুলভ মেট্রোরেল চায়।’
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মেট্রোরেলের ভাড়া আরো কম হওয়া উচিত ছিল মত দিয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘এটা যদি আন্ডারগ্রাউন্ড হতো, তাহলে এটার এয়ারকন্ডিশনিং খরচ আরো বেশি হতো। কিন্তু এটা আন্ডারগ্রাউন্ড না। এরপরও দেখা যাচ্ছে কলকাতা, দিল্লি, মুম্বাই এমনকি লাহোর থেকে আমাদের এখানে ভাড়ার পরিমাণ কয়েক গুণ বেশি। যেহেতু তারা (সরকার) দুর্নীতি, অনাচার করে অধিক ব্যয় করেছে বলেই সম্ভবত সেটা উসুল করার জন্য ভাড়া বেশি করেছ। তাদের অপরাধের দায় জনগণ কেন নেবে?’
মেট্রোরেলের অতিরিক্ত ভাড়া নির্ধারণের প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘মেট্রোরেল আইন ও বিধিমালায় বলা হয়েছিল, ঢাকা মহানগরের জনগণের যাতায়াত নির্বিঘ্ন, সহজসাধ্য ও সুলভ করার জন্য জনগণের টাকায় এই প্রকল্প করা হয়েছে। প্রকল্পটির মেয়াদ বারবার বাড়িয়ে টাকা অনেক বেশি ব্যয় করা হয়েছে। তার পরও ঢাকার বাস ভাড়ার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে মেট্রোরেলের ভাড়া।’
নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার অনির্বাচিত, গণবিরোধী হলে মানুষকে খুশি করতে অনেক কিছু করে। এটাকে বলে গণতুষ্টিমূলক কাজ। এই সরকারের প্রতিটি কাজের মধ্যেই নানা প্রকার দুর্নীতি, অনাচারের স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। সরকারের দায়িত্ব জনগণের কল্যাণে কাজ করা। কিন্তু সেই কল্যাণের ইচ্ছার মধ্যে যদি বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য থাকে কিংবা কোনো ধরনের লাভ অর্জনের অপপ্রয়াস থাকে, তা অবশ্যই নিন্দনীয়।’
গতকাল সোমবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় গৃহীত প্রস্তাব ও সিদ্ধান্ত তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটি মেট্রোরেল আইন ও বিধিমালা লঙ্ঘন করে মেট্রোরেলের ভাড়া সর্বনিম্ন ২০ টাকা এবং উত্তরা থেকে মতিঝিল ২০ কিলোমিটারের ভাড়া ১০০ টাকা নির্ধারণের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে।’
এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘ঢাকায় মেট্রোরেলের এই ভাড়ার পরিমাণ শুধু দেশের বেসরকারি বাসভাড়ার দ্বিগুণ নয়, ভারত ও পাকিস্তানের বিভিন্ন নগরীর মেট্রোরেলের ভাড়ার চেয়ে ২ থেকে ৫ গুণ বেশি। ঢাকা মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া দিল্লি, মুম্বাই, চেন্নাই ও লাহোরের ভাড়ার প্রায় দ্বিগুণ এবং কলকাতার তিন গুণ। ঢাকার ২০ কিলোমিটারের ভাড়া কলকাতার চার গুণ, নয়াদিল্লি, মুম্বাই ও চেন্নাইয়ের তিন গুণ এবং লাহোরের ভাড়ার চেয়ে সাড়ে ৫ গুণ বেশি।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক জেড খান রিয়াজুদ্দিন নসু প্রমুখ।