রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :১১ ডিসেম্বর, ২০২২ ৯:১৫ : অপরাহ্ণ
প্রথমবারের মতো ব্লাড ক্যান্সার বা রক্তের ক্যান্সার বা লিউকেমিয়া সারাতে সক্ষম হয়েছেন বৃটিশ চিকিৎসকরা। এ জন্য তারা ব্যবহার করেছেন নতুন ও বৈপ্লবিক এক চিকিৎসা পদ্ধতি। তা হলো সেল ইঞ্জিনিয়ারিং পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে কোষের জিনের পরিবর্তন ঘটিয়ে দেয়া হয়। ফলে তা রোগীর দেহে যে ক্যান্সার কোষ আছে- তাকে ধ্বংস করে দেয়। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
এতে আরও বলা হয়, এসব কোষ ক্যান্সার সেলগুলোকে টার্গেট করে আক্রমণ চালায়। ভালো কোষের ক্ষতি করে না। এই পদ্ধতিতে ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করা হয়। এলিসা নামের এক কিশোরীর দেহে এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা চালিয়ে ক্যান্সার দূর করা হয়েছে।
এর আগে লিউকেমিয়ার প্রচলিত সব চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যর্থ হয় তার ক্ষেত্রে।
বিবিসি বাংলা লিখেছে, পরীক্ষামূলকভাবে নতুন ওষুধটি প্রয়োগের পর তার দেহে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হয়েছে। তার দেহের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থা পুনরায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এলিসা এখন ক্যান্সার থেকে মুক্ত।
চিকিৎসকরা বলছেন, এলিসার দেহে জিনগত পরিবর্তনের যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে, এই চিকিৎসা বিজ্ঞানে খুব দ্রুত অগ্রগতি ঘটছে এবং নানা রোগের চিকিৎসায় এই পদ্ধতির সফল হওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা আছে। বায়োলজিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর এই পদ্ধতির নাম ‘বেস এডিটিং।’
গ্রেট অরমন্ড স্ট্রিট হাসপাতালের ডাক্তাররা এই পদ্ধতিতেই এলিসাকে লিউকেমিয়া থেকে সারিয়ে তুলেছেন। ওষুধ প্রয়োগের ছয় মাস পরে দেখা গেছে, এলিসার শরীরে ক্যান্সার শনাক্ত করা যাচ্ছে না।
তবে রোগটি আবারও ফিরে আসে কি না-এই আশঙ্কায় তাকে এখনও পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। ইংল্যান্ডের লেস্টার শহরের মেয়ে এলিসা। বয়স ১৩। গত বছরের মে মাসে তার দেহে টি-সেল একিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া ধরা পড়ে।
টি-সেল হচ্ছে শরীরের অভিভাবকের মতো। এই সেল শরীরের ভেতরে হুমকি সৃষ্টিকারী উপাদান ধ্বংস করে দেয়। কিন্তু এলিসার দেহে ক্যান্সার সেলগুলো বিপজ্জনক হয়ে উঠেছিল। তা চলে গিয়েছিল নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তার দেহে ক্যান্সারের কোষগুলো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছিল। কেমোথেরাপি এবং বোন-ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করেও সেগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া যাচ্ছিল না।
এলিসা বলেছেন, আমি হয়তো আসলে মারাই যেতাম। ওর মা কিওনা বলেন, গত বছর তিনি ভেবেছিলেন যে তিনি হয়তো তার মেয়ের সঙ্গে শেষ ক্রিসমাস পালন করতে যাচ্ছেন। কিন্তু এর পরে যা ঘটেছে কয়েক বছর আগেও তার সবই ছিল অচিন্তনীয়। জেনেটিকসের অসাধারণ অগ্রগতির কারণেই এলিসার জীবন রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। এজন্য গ্রেট অরমন্ড স্ট্রিট হাসপাতালের ডাক্তাররা যে বেস এডিটিং পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন সেটি মাত্র ছয় বছর আগে উদ্ভাবন করা হয়েছে।
এই পদ্ধতিতে বিজ্ঞানীরা জেনেটিক কোডের একটি বিশেষ অংশকে আকারে বড় করেন এবং পরে এর মলিকুলার বা আণবিক গঠনে পরিবর্তন আনেন। এভাবে এর জেনেটিক নির্দেশনা বদলে দেওয়া হয়।
একজন দাতার কাছ থেকে সুস্থ টি-সেল নিয়ে তাতে জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে সেগুলো এলিসার শরীরে ঢুকিয়ে দেয়া হয়, যা তার দেহের ক্যান্সার সেলগুলোকে খুঁজে বের করে ধ্বংস করে দিতে সক্ষম। টি-সেলের বেস এডিটিং-এর কারণে এসব সেল এলিসার দেহের সুস্থ কোষেরও কোনো ক্ষতি করবে না।
বিজ্ঞানীরা বলছেন এই চিকিৎসা পদ্ধতি সফল হলে দ্বিতীয় বোন-ম্যারো প্রতিস্থাপনের পর এলিসার দেহের টি-সেলসহ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পুনর্গঠিত হবে।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন এবং গ্রেট অরমন্ড স্ট্রিট হাসপাতালের অধ্যাপক ওয়াসিম কাসিম বলেছেন, এলিসাই প্রথম রোগি, যাকে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে চিকিৎসা করা হয়েছে। জেনেটিক মেনিপুলেশন বিজ্ঞানে খুব দ্রুত অগ্রগতি ঘটছে। নানা ধরনের রোগ সারিয়ে তোলার ব্যাপারে এর অপরিসীম সম্ভাবনা রয়েছে।
চিকিৎসার জন্য এলিসা হাসপাতালে ছিল ১৬ সপ্তাহ। তিন মাস পর তার দেহে ক্যান্সারের কিছু লক্ষণ দেখা গেলেও সবশেষ দুটো পরীক্ষায় সেগুলো দেখা যায় নি।
এলিসা বলেন, এটা দারুণ ঘটনা যে আমি এই সুযোগ পেয়েছি। এজন্য আমি কৃতজ্ঞ। ভবিষ্যতে অন্য শিশুরা এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে উপকৃত হবে।
এলিসা ছাড়াও আরো নয় জন রোগীর ওপর এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা পরীক্ষা চালানো হবে।