রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :২৬ নভেম্বর, ২০২২ ১২:১৭ : অপরাহ্ণ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার এতো উন্নয়ন করেছে, অথচ আমাদের বিরোধীদের এই উন্নয়ন চোখে পড়ে না। তাদের হয় চোখ নষ্ট; যদি চোখ নষ্ট হয় চোখের ডাক্তার দেখাতে পারেন। আমরা খুব ভালো আই ইনস্টিটিউট করে দিয়েছি। সেখানে চোখ দেখালে আমার মনে হয় তাহলে তারা দেখতে পাবেন। আর কেউ যদি চোখ থাকতেও অন্ধ হয় তাহলে আমাদের কিছু করার নেই।
আজ শনিবার সকালে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বঙ্গবন্ধু টানেলের দক্ষিণ টিউবের পূর্তকাজের সমাপনী উদযাপন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার মনে হয় বিরোধীরা চোখ থাকতেও অন্ধ। তারা দেখেও না দেখার ভান করে। কারণ নিজেরা কিছু করতেও পারেনি, ভবিষ্যতে কিছু করতেও পারবে না, দেশকে দিতেও পারবে না। হ্যাঁ! ক্ষমতায় বসে নিজেরা খেতে পারবে, নিতে পারবে, অর্থ চোরাচালান করতে পারবে। তারা মানুষের কল্যাণে কাজ করেনি ভবিষ্যতেও করবে না। এই হলো বাস্তবতা।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের পর ২১ বছর এবং ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত এই ২৯ বছর যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা কেন বাংলাদেশের উন্নতি করতে পারেনি? এমন প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তারা স্বাধীনতাকে বিশ্বাস করতে পারেনি। তারা মানুষের ভাগ্য বদলাতে চায়নি। নিজেরা ভোগ বিলাসে ব্যস্ত ছিল।
সরকারপ্রধান বলেন, আমি চাই আমাদের দেশটা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এগিয়ে যাক। করোনাকালীন এবং যুদ্ধকালীন খাদ্যশস্যের যে দাম বেড়েছে সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা এক কোটি মানুষকে টিসিবির মাধ্যমে বিশেষ কার্ড দিচ্ছি। যাতে তারা স্বল্প মূল্যে খাদ্য ক্রয় করতে পারেন। তাছাড়া প্রায় ৫০ লাখ নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য ১৫ টাকায় চাল পাওয়ার ব্যবস্থা করেছি। আর যারা একেবারেই অসহায়, কাজ করতে পারেন না- তাদের আমরা প্রতিমাসে বিনা পয়সায় ৩০ কেজি করে চাল দিচ্ছি। অর্থাৎ খাদ্যে যেন কেউ ক্ষ্ট না পায় তার জন্য আমরা বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাকালীন সময় বিশেষ প্রণোদেনা দিয়েছি। যাতে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা-বাণিজ্য চালু রাখতে পারে, শিল্প কল-কারখানা চালু করাতে পারে, শ্রমিকের বেতন দিতে পারে। কৃষকদের ভর্তুকি দিচ্ছি। কৃষক যেন কৃষিকাজ স্বাচ্ছন্দ্য করতে পারে। তাদের জন্য অধিক মূল্যে সার কিনেও আমরা কম দামে সার, বীজ, কৃষি উপকরণ বিতরণ করে যাচ্ছি। ধান কাটায় তাদের পাশে থেকে- আমাদের ছাত্রসমাজ, যুবসমাজ তাদের সাহায্য সহযোগিতা করে যাচ্ছে। উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আমরা ব্যাপক কাজ করে যাচ্ছি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, সিনিয়র সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।
এসময় পতেঙ্গা প্রান্তে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলী সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, পানি সম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল আলম চৌধুরী নওফেল, চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিন মিং, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রামের সংসদ সদস্য শামসুল হক চৌধুরী, সেতু বিভাগের সচিব মনজুর হোসেন, প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশীদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যৌথভাবে কর্ণফুলী টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পটির মোট ব্যয় প্রায় ১০,৫৩৭ কোটি টাকা। টানেলটি চট্টগ্রামের পতেঙ্গার নেভাল একাডেমি প্রান্ত থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড এবং আনোয়ারায় কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার লিমিটেড কারখানার মধ্যে নদীর তলদেশে সংযোগ স্থাপন করছে। মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩.৩২ কিমি এবং এতে দুটি টিউব রয়েছে। প্রতিটিতে দুটি লেন রয়েছে। এই দুটি টিউব তিনটি জংশনের (ক্রস প্যাসেজ) মাধ্যমে সংযুক্ত করা হবে। এই ক্রস প্যাসেজগুলি জরুরী পরিস্থিতিতে অন্যান্য টিউবগুলিতে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হবে। টানেল টিউবের দৈর্ঘ্য ২.৪৫ কিমি এবং ভিতরের ব্যাস ১০.৮০ মিটার। মূল টানেলের পশ্চিম এবং পূর্ব দিকে একটি ৫.৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক রয়েছে।