রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :১৬ নভেম্বর, ২০২২ ২:৫১ : অপরাহ্ণ
গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে অনিয়মে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারের (এসপি) সম্পৃক্ততাও পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি।
ভোটে ডিসি-এসপির কী ধরনের ভূমিকা ছিলো তার বিশদ বর্ণনা তদন্ত প্রতিবেদনে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া, জেলার এডিসি জেনারেল, সাঘাটা উপজেলার ইউএনওর ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততাও পাওয়া গেছে।
এডিসি (সার্বিক) নিজে সাঘাটা উপজেলা ইউএনও অফিসে উপস্থিত থেকে প্রিজাইডিং অফিসারদের ‘ভোট সুষ্ঠু হয়েছে’ মর্মে সাদা কাগজে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করেন। ইসির নির্দেশে কমিটির অধিকতর তদন্তে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আনিছুর রহমান বলেছেন, গাইবান্ধা উপনির্বাচনে অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে। অপরাধের ধরন অনুযায়ী শাস্তির সুপারিশ করা হবে।
ইসি সূত্রে জানায়, বন্ধঘোষিত ভোটকেন্দ্রের সংঘটিত অনিয়মসমূহ চিহ্নিত করতে সরেজমিনে গাইবান্ধার সাঘাটা ও ফুলছড়িতে গিয়েছিলেন কমিটির তিন সদস্য। দুই উপজেলার ১৪৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে সাঘাটায় ৮৮টি এবং ফুলছড়িতে ৫৭টি কেন্দ্র ছিল।
কমিটির পক্ষ থেকে তদন্তের সময় সাতশতাধিক ব্যক্তিকে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য চিঠি দেয়া হয়। এর মধ্যে ৬২২ জন কমিটির কাছে সাক্ষ্য দেন। কমিটি পোলিং এজেন্ট বা ভোটার ব্যতীত অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের গোপনকক্ষে প্রবেশ, গোপনকক্ষে ভোটদান, প্রত্যক্ষকরণ, ভোটারদের কোনো প্রার্থীকে ভোটদানে বাধ্যকরণ বা প্রভাবিতকরণ, মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে গোপনকক্ষের ছবি ধারণ ইত্যাদি বিষয়ে প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটন করে দোষী কিংবা দায়ী ব্যক্তি চিহ্নিত করেছে।
একই সঙ্গে দলীয় প্রতীক বা একই রঙের পোশাক পরিধান করে কোনো কোনো পোলিং এজেন্টদের দায়িত্ব পালন, একইরূপ পোশাক পরিহিত ব্যক্তিবর্গ বিক্ষিপ্তভাবে ভোটকক্ষে বিচরণ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে গোপনকক্ষে প্রবেশ, উল্লিখিত পোশাক উপঢৌকন বা অর্থের বিনিময়ে নেয়া কিনা ইত্যাদি ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করে কমিশনকে জানিয়েছে।
এছাড়া, পোলিং এজেন্ট বা অবৈধ কোনো ব্যক্তি গোপনকক্ষে প্রবেশ করে নিজেই ভোটপ্রদান, ভোটার কোন প্রার্থীকে ভোট দিচ্ছেন তা গোপন কক্ষে উঁকি দিয়ে বা ঢুকে অবলোকন করা, ভোটপ্রদানে বাধা প্রধান, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ভোটকক্ষে ঢুকে নিজেই ভোট দেয়া বা ভোটারকে প্রভাবিত করা অথবা পোলিং এজেন্ট নয়, এ ধরনের ব্যক্তি ভোটদানে ভোটারকে প্রভাবিত করার বিষয়ে দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করা হয়েছে মূল তদন্ত প্রতিবেদনে।
প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের বড় একটি অংশকে ভোট অনিয়মে সম্পৃক্ত হতে জেলা প্রশাসন বাধ্য করেছে। কমিটির কাছে লিখিত চিঠিতে প্রিজাইডিং অফিসাররা জানিয়েছেন, গাইবান্ধা জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তার নির্দেশে এডিসি জেনারেল সুশান্ত কুমার মাহাতো, সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার ইউএনওরা মিলে প্রিজাইডিং অফিসারদের ‘ভোট সুষ্ঠু হয়েছে’ মর্মে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেন।
বিশেষ করে সাঘাটা ইউএনও সরদার মোস্তফা শাহীন প্রিজাইডিং অফিসারদের সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন বলে জানিয়েছেন প্রিজাইডিং অফিসাররা।
গত ৫ নভেম্বর গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচন বন্ধ করার পর এর পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয় নানা মহলে। আবার প্রশ্নও ওঠে। তবে নির্বাচন কমিশন জানায়, ভোটের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ ছিল না বলে বন্ধ হয়েছিল ভোটগ্রহণ। আরপিওর ক্ষমতাবলে ইসি ভোট বন্ধ করেছে।
এরপর ইসি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ভোটগ্রহণে ব্যাপক অনিয়ম ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার জন্য গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনের সব কেন্দ্রে বন্ধ করা হয় ভোটগ্রহণ।