রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :১ নভেম্বর, ২০২২ ১২:০৬ : অপরাহ্ণ
আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান বেপারী ওরফে বাহাদুর বেপারী। শিশুকালে চোখের সামনে বাবাকে খুন হতে দেখেছেন। বাবাকে সবার সামনে গুলি করে নৃশংস হত্যার সে স্মৃতি চোখের সামনে এখনো ভাসে। তবে সে দিনের কষ্ট আজ লাঘব।
খুনের ঘটনার দীর্ঘ ২৯ বছর পর বাবা হত্যা মামলার রায় দিয়েছেন বিজ্ঞ আদালত। আইনজীবী হয়ে বাবা হত্যার মামলা নিয়ে লড়াই করে মামলার রায়ে জিতে সন্তুষ্ট ছেলে বাহাদুর বেপারী।
আজ সোমবার গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক বাহাউদ্দিন কাজী চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় প্রদান করেন। এতে দুজনের আমৃত্যু কারাদণ্ড ও পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন বিজ্ঞ আদালত।
দীর্ঘদিন চলাকালে এ মামলার ৫ আসামিসহ মামলার বাদীও মারা গেছেন। মৃত্যু হয়েছে মামলার তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তারও।
দীর্ঘ ২৯ বছর পর মামলার রায় নিজের পক্ষে পেয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন নিহত সুলতান উদ্দীন বেপারীর ছেলে-মেয়েরা।
জানাগেছে, ১৯৯৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার (তৎকালীন ইউপি ছিল) ১ নং সিএন্ডবি এলাকায় জমি সংক্রান্ত বিরোধীতার জের ধরে ঘরে ঢুকে প্রকাশ্যে গুলি করে খুন করা হয় স্থানীয় ধনাই বেপারীর ছেলে সুলতান উদ্দিন বেপারীকে। ওই সময় একই ঘটনায় আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছিলেন।
ঘটনার পরদিন ১৬ সেপ্টেম্বর শ্রীপুর থানায় মামলা দায়ের হয়। নিহতের ভাই মোতাহার হোসেন বেপারী বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৫ আসামি মারা গেছে। এ মামলার বাদী মোতাহার হোসেন বেপারীও মারা গেছেন বেশ কিছু দিন আগে।
মামলার রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে নিহতের স্বজনরা জানান, এ মামলার রায় পেতে ২৯ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে তাদের। এর মধ্যে অনেক স্বজন এ মামলার রায় শোনার আগেই মারা গেছেন।
প্রায় এক যুগ আগে মারা গেছেন মামলার বাদী মোতাহার হোসেন বেপারী, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাও মারা গেছেন।
তারা আরও জানান, জমি সংক্রান্ত ও পারিবারিক বিরোধের কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটায় মাইন উদ্দিন বেপারী ও আবুল কাশেম বেপারীসহ তাদের লোকজন।
নিহতের ছেলে অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান বাহাদুর বলেন, আমার বাবাকে বাড়িতে ঢুকে গুলি করে হত্যা করার সময় আমার বয়স খুবই কম। চোখের সামনে বাবাকে খুন হতে দেখেছি।
তিনি বলেন, এ মামলার বাদী হয়েছিলেন আমার কাকা। মামলা চলাকালীন আমার কাকা মোতাহার হোসেন বেপারী প্রায় ১২ বছর আগে মৃত্যুবরণ করেন। এরপর নানা ঘাত প্রতিঘাত পার করেও মামলা পরিচালনা করা হয় আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে। এক সময় এ মামলার প্রকৃত বিচারের কথা চিন্তা করে আইন নিয়ে পড়াশোনা শুরু করি। একটা সময় আইন বিষয় পড়া শেষ করে নিবন্ধিত আইনজীবী হিসেবে যাত্রা শুরু করি আদালতে। এরপর দীর্ঘদিন ধরেই এ মামলার পরিচালনা ও একজন আইনজীবী হিসেবেও সম্পৃক্ততা আমার নিয়মিত। আমরা সংকল্প ছিল প্রকৃত বিচার না পাওয়া পর্যন্ত এ মামলা নিয়ে লড়াই করবো। অবশেষে ২৯ বছর পর এ মামলার রায় আমাদের পক্ষে আসায় আমরা সন্তুষ্ট। তবে বিচারের এই দীর্ঘসূত্রিতা কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়ার দাবিও করেন তিনি।