শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা দেশজুড়ে

দুই হাত নেই, দুই পা দিয়েই চলছে মিরাজের জীবনযুদ্ধ


জন্ম থেকেই দুই হাত নেই মিরাজুল ইসলাম মিরাজের। কিন্তু তাতে কি, দুই পা দিয়েই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি।

রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :২৫ অক্টোবর, ২০২২ ৬:১৩ : অপরাহ্ণ

জন্ম থেকেই দুই হাত নেই মিরাজুল ইসলাম মিরাজের। কিন্তু তাতে কি, দুই পা দিয়েই সব কাজ অবলীলায় করে যাচ্ছেন তিনি।

শারীরিক বিকলাঙ্গ হওয়ায় নানাভাবে অবহেলা আর বঞ্ছনার শিকার হয়েছেন মিরাজ। তবুও জীবনযুদ্ধে হার মানেননি তিনি।

শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে পা দিয়েই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। মিরাজ এখন প্রতিবন্ধীদের অনুপ্রেরণা, অসহায় মানুষের ভরসাস্থল।

আর্থিকভাবে নিজে সচ্ছল হওয়ার পাশাপাশি তার অর্থায়নে চলছে একটি এতিমখানা হাফেজি মাদ্রাসা।

পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার যাত্রাপুর গ্রামের দরিদ্র তোরাব আলী ও মৃত সূর্য খাতুন দম্পতির দুই ছেলে, এক মেয়ের মধ্যে সবার ছোট মিরাজুল ইসলাম মিরাজ (২০)।

জন্ম থেকেই যার দুই হাত নেই। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে দুই পা দিয়েই সব কাজ খুব সহজেই করে যাচ্ছেন তিনি। আশ্চর্যজনক হলেও এটাই বাস্তব।

দুই হাত নেই, দুই পা দিয়েই চলছে মিরাজের জীবনযুদ্ধ

লেখা, মোবাইল ফোনে কথা বলা, গোসল, অজু, ব্রাশ করা, রান্না করাসহ প্রতিদিনের বিভিন্ন কাজ দুই পায়ের সাহায্যে করে চলেছেন মিরাজ।

২০ বছর বয়সেই জয় করেছেন তার শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে। থেমে যাননি জীবনযুদ্ধে। সমাজের মানুষের বাঁকা চোখ ও অবহেলাকে পাশ কাটিয়ে নিজেকে করেছেন প্রতিষ্ঠিত। অর্জন করেছেন আর্থিক সচ্ছলতা।

মিরাজুল ইসলাম মিরাজ জানান, এতোটা সহজ ছিল না তার সাফল্যের পথ। দুই হাত না থাকায়, প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি করতে রাজী হননি শিক্ষকরা। তারপরেও ভেঙে পড়েননি তিনি। তার বোন বাঁশের কাঠি বানিয়ে দেন পা দিয়ে মাটিতে লেখার জন্য। প্রথমদিকে লিখতে না পারলেও, ধীরে ধীরে মাটিতে লেখা শেখেন মিরাজ। পরবর্তীতে পা দিয়ে লিখেই নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে স্কুলে ভর্তি হন তিনি।

দুই হাত নেই, দুই পা দিয়েই চলছে মিরাজের জীবনযুদ্ধ

মনের প্রবল ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যান মিরাজ। এরপর আটঘরিয়া উপজেলার একদন্ত উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং পাবনার শহীদ বুলবুল সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। বর্তমানে পাবনা কলেজে অর্থনীতি বিষয়ে বিএ অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তিনি।

নিজেকে কখনও সমাজ বা পরিবারের বোঝা হতে দেননি মিরাজ। দেশের কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশনে বিভিন্ন শোতে অংশ নিয়েছেন তিনি।

ইতিমধ্যে প্রযুক্তিখাতে গড়েছেন নিজের ক্যারিয়ার। মিরাজ এখন সফল ফ্রিল্যান্সার ও ইউটিউবার। আর্থিকভাবেও সফলতা এনেছেন তিনি। হাল ধরেছেন পরিবারের।

অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছে থেকে নিজের আয়ের অর্ধেক টাকা দিয়ে গ্রামের একটি এতিমাখানা পরিচালনা করেন মিরাজ।

যাত্রাপুর বাইতুশ শরফ্ হাফিজিয়া মাদ্রাসা, এতিমাখানা ও খানকা শরীফের মুহতামিম আনোয়ার হোসেন বলেন, মিরাজের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এই এতিমাখানা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি নিজে অর্থ সহায়তা করছেন, পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গা থেকে অর্থ এনে দিচ্ছেন। এতিমদের জন্য মিরাজের ভালবাসা ভুলার নয়। সমাজে অনেক অর্থবিত্ত প্রতিপত্তির মানুষ আছে, কিন্তু মিরাজের মতো মনের মানুষ নেই।

শারীরিক প্রতিবন্ধী মিরাজের সাফল্যে খুশি স্থানীয় বাসিন্দা, শিক্ষক ও জনপ্রতিনিধিরা।

যাত্রাপুর গ্রামের বাসিন্দা শিক্ষক আব্দুল খালেক, আব্দুল বারেক ও ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক বলেন, মিরাজের মতো ছেলে হয় না। সে শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও আমাদের সবার গর্ব। সে যেভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে তা সত্যি অকল্পনীয়। তাকে স্যালুট জানাই।

উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক বলেন, সে আমাদের জন্য গর্বের। মিরাজকে দেখে সমাজের অবহেলিত, প্রতিবন্ধী মানুষ আত্মনির্ভরশীল হওয়ার সাহস পাবে। একাই জীবনযুদ্ধে যেভাবে সংগ্রাম করে চলেছে তা অনুপ্রেরণার। তার যেকোনো প্রয়োজনে পাশে থাকবো।

পাবনা কলেজের সহকারী অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, মিরাজ কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকে নিয়মিত ক্লাস করছে। সে মেধাবী একজন শিক্ষার্থী। দুই হাত নেই, অথচ দুই পা দিয়ে অবলীলায় লিখে যেতে পারে। সব কাজই পা দিয়ে করতে পারে। সে সবার জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। আমরা তার পাশে আছি।

আটঘরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাকসুদা আক্তার মাসু জানান, মিরাজের বিষয়টি আমরা ইতিমধ্যে ইন্টারনেটের মাধ্যমে জেনেছি। ছেলেটি অত্যন্ত প্রতিভার অধিকারী। সে দুই হাত না থাকা সত্ত্বেও সে ফ্রিল্যান্সিং ও ইউটিউব থেকে আয় করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছে। তার প্রয়োজনীয় সহযোগিতায় উপজেলা প্রশাসন পাশে থাকবে।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর