শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪ | ৩ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ৮ জিলকদ, ১৪৪৫

মূলপাতা জাতীয়

মুষলধারে বৃষ্টিতে সিত্রাংয়ের শক্তি ক্ষয়, ৫-৭ ফুট জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা


রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :২৪ অক্টোবর, ২০২২ ৬:৫২ : অপরাহ্ণ
Rajnitisangbad Facebook Page

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের অগ্রভাগ বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত করেছে। আজ সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে এটি উপকূলে পৌঁছায়।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া ও চট্টগ্রামের মাঝামাঝি অংশ দিয়ে সিত্রাং বাংলাদেশে আঘাত হানছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

তবে মুষলধারে বৃষ্টির কারণে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের শক্তি ক্ষয় হচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি বর্তমানে বরিশাল ও পায়রা সমুদ্র বন্দরের ১৫০ মাইলের মধ্যে। মধ্যরাত কিংবা ভোররাত নাগাদ ঘূর্ণিঝড়টির মূলভাগ বাংলাদেশ অতিক্রম করবে।

শক্তি ক্ষয় হলেও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় ১৫টি জেলা, অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুটের বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

এরই মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে রাজধানীসহ সারাদেশে বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যা থেকে বেড়েছে বাতাসের তীব্রতা।

বরিশাল আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আনিসুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড়টির গতি যদিও বরিশালের দিকে, তবে বৃষ্টির কারণে এর শক্তি ক্ষয় হচ্ছে। ফলে খুব প্রবল শক্তি নিয়ে এটি আঘাত করার আশঙ্কা কম, তবে বৃষ্টি বাড়তে পারে। সেই সঙ্গে হতে পারে উঁচু উচ্চতার জোয়ার।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং এসব জেলার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-৭ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছাসে প্লাবিত হতে পারে।

বরিশাল আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে উপকূলীয় বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল ও ভোলা জেলা। তবে এখন এটি সুপার সাইক্লোনে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা কম। কারণ, প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। তা ছাড়া বায়ুমণ্ডলে সেই অবস্থা নেই।

রোববার রাত ৯টা থেকে সোমবার দুপুর তিনটা পর্যন্ত ১৫৫.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। আর গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ১৩২ মিলিমিটারের বেশি। এ সময় ঘণ্টায় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ৪৫ কিলোমিটার। এতে এই অঞ্চলের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থমকে গেছে।

বরিশাল নদী বন্দরকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত সব লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখতে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়।

বরিশাল আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ উচ্চ পর্যবেক্ষক মাসুদ রানা রুবেল জানান, আগামী দুই-তিন দিন ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ফলে উপকূলীয় অঞ্চলে ৫-৮ ফুট পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। উপকূলে ১০০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো বাতাস বয়ে যেতে পারে। টানা বৃষ্টিতে উপকূলের ঘরবাড়ি ও গাছপালার মাটি নরম হওয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।

বিআইডব্লিউটিএ-এর বরিশাল নৌবন্দর ও পরিবহন বিভাগের উপপরিচালক আবদুল রাজ্জাক জানান, বরিশাল নৌবন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত থাকায় সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে।

এদিকে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের প্রস্তুতি নিয়েছে বরিশালের সব জেলা ও উপজেলা। এর মধ্যে বিভাগের ৩ হাজার ৯৭৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কেন্দ্রের (সিপিপি) স্বেচ্ছাসেবকদের মাঠে নামানো হয়েছে। তারা সংকেত প্রচার করছেন। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারি ও বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান সমন্বিতভাবে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় কাজ শুরু করেছে।

বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মো. আমিন উল আহসান বলেন, সরকারি সব প্রতিষ্ঠানকে ঝড় মোকাবিলায় সমন্বিতভাবে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং সে অনুযায়ী কাজ শুরু হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে। একই সঙ্গে গবাদিপশু আশ্রয়ের জন্য মুজিব কেল্লাগুলোও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় করতে তারা প্রস্তুত আছেন।

বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি, শুকনা খাবার এবং ওষুধের ব্যবস্থাসহ সব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে সিপিপি, রেড ক্রিসেন্টসহ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে।

ঝড় মোকাবিলায় সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. শাহবুদ্দিন মিয়া।

তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৪৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণে, দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছে। এই মুহূর্তে পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি বরিশালেও ৭ নম্বর সংকেত চলছে।

তিনি বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি, সিপিপির সব সদস্য বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবীরা প্রস্তুত রয়েছে।

তিনি আরো জানান, সিপিপির ৩২ হাজার ৫০০ স্বেচ্ছা সেবক প্রস্তুত রয়েছে। তারা মাইকিং করে লোকজনকে নিরাপদে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। ইতিমধ্যে যে সব ইউনিয়নে লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে তাদের স্থানীয় প্রশাসন শুকনা খাবার বিতরণ করছে।

এদিকে দিনভর বৃষ্টিতে বরিশালের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। শহরের বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউই বাইরে বের হচ্ছে না।

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর