গুণে গুণে ১৫ বছর। সেই ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। তারপর থেকেই মূল পর্বে জয় অধরা টাইগারদের।
অবশেষে ডারবানের সেই সুখস্মৃতি ফিরল হোবার্টে। তাসকিনের হাতে দীর্ঘ অপেক্ষার হলো অবসান।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে ডাচদের বিপক্ষে ৯ রানে জিতেছে বাংলাদেশ।
আজ সোমবার অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়া অঙ্গরাজ্যের রাজধানী হোবার্টের বেলেরিভ ওভাল স্টেডিয়ামে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে প্রথম ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৪৪ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে ২০ ওভারে সবগুলো উইকেট হারিয়ে ১৩৫ রানে থামে ডাচরা।
টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের শুরুটা ভালো করে বাংলাদেশ।
ওপেনিং জুটিতে ৪৭ রান করেন শান্ত ও সৌম্য। এই জুটি ভাঙলেই এলোমেলো হয়ে যায় সব। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে সৌম্যর বিদায়ে জুটি ভাঙে।
ভান মেকেরিনের বুক বরাবর করা বাউন্সের গতি বুঝতে না পেরে ক্যাচ তুলে দেন বাঁহাতি ওপেনার। ১৪ বলে দুই চারে ১৪ রান করেন সৌম্য।
পরের ওভারের প্রথম বলে ফেরেন শান্ত। বাঁহাতি স্পিনার টিম প্রিঙ্গলের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে তিনিও ক্যাচ দেন মিডউইকেটে। ২০ বলে ২৫ রান করেন শান্ত।
দুই ওপেনারকে হারিয়ে বসার ধাক্কা সামাল দিতে পারেননি সাকিব আল হাসান ও লিটন দাস।
উইকেটে এলেন আর গেলেন সাকিব ও লিটন। ফন বিকের শর্ট অব লেংথ বলে কাটা পড়েন লিটন (৯)। এরপর সাজঘরের পথে হাঁটেন সাকিব(৭)।
হাল ধরতে পারেননি ইয়াসিরও। তিনি বোল্ড হয়ে ফেরেন ৩ রানে।
৭৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় লাল সবুজের প্রতিনিধিরা।
ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে তরুণ আফিফ হোসেন অভিজ্ঞ নুরুল হাসান সোহানকে নিয়ে জুটি করে দলের ইনিংস ১০০ পার করেন।
এই জুটিতে ৪৪ রান করেন দুজন। আফিফ ফিরে যান ৩৮ রানে আর সোহান ফেরেন ১৩ রানে।
এরপর তরুণ ব্যাটার আফিফ হোসেন দুর্দান্ত দুই চার ও দুই ছক্কা হাঁকিয়ে টাইগার সমর্থকদের হৃদয় জয় করে দেন। ২৭ বলে ৩৮ রান করে আউট হন এই ব্যাটার।
শেষ ওভারের তৃতীয় বলে মোসাদ্দেকের ছক্কায় বাংলাদেশ পৌছায় ১৪০’র ঘরে।
শেষ ৩ বলে একবার জীবন পেয়ে এই ব্যাটার আরও যোগ করেন ৪ রান। বাংলাদেশ পায় ১৪৪ রানের পুঁজি। মোসাদ্দেক অপরাজিত থাকেন ২০ রানে।
নেদারল্যান্ডসের সামনে খুব বড় লক্ষ্য দাঁড় করাতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে লড়াকু এই পুঁজিতে যেমন হওয়া দরকার ছিল, তাসকিন আহমেদ ঠিক তেমনই এক সূচনা এনে দেন বাংলাদেশকে।
ইনিংস প্রথম ওভারের প্রথম দুই বলেই জোড়া উইকেট তুলে নেন তাসকিন আহমেদ।
তাসকিনের জোড়া ধাক্কার পর সাকিব আল হাসানের ওভারে রান আউট হয়ে ফিরেন আরও দুজন।
৪ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে চরম বিপর্যয়ে পড়ে যায় নেদারল্যান্ডস।
সেখান থেকে উদ্ধার করতে প্রতিরোধ গড়েন স্কট অ্যাডওয়ার্ডস ও কলিন একারমান। দুজন মিলে পঞ্চম জুটিতে তোলেন ৪৪ রান।
১২তম ওভারে স্কটকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন সাকিব। ১৬ রান করে ফেরেন ডাচ অধিনায়ক। এরপর নামা টিম প্রিঙ্গলকে বোল্ড করেন হাসান মাহমুদ।
ডাচরা ৬ উইকেট হারানোর পরই বৃষ্টি নামে হোবার্টে। কিছুক্ষণ বন্ধ থাকার পর ফের ম্যাচ গড়ালে ম্যাচ নিজেদের করে নেয় সাকিব আল হাসানের দল।
বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে ২৫ রান দিয়ে চার উইকেট নিয়েছেন তাসকিন। এটিই এই ফরম্যাটে তাসকিনের ক্যারিয়ারসেরা বোলিং। আগের সেরা ছিল ১২ রানে দুই উইকেট। এছাড়া ১৫ রান খরচায় দুটি উইকেট নিয়েছেন হাসান মাহমুদ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৪৪/৮
(শান্ত ২৫, সৌম্য ১৪, লিটন ৯, সাকিব ৭, আফিফ ৩৮, ইয়াসির ৩, সোহান ১৩, মোসাদ্দেক ২০*, তাসকিন ০, হাসান ০*; ক্লাসেন ৪-০-৩৩-১, আকারম্যান ১-০-৪-০, ফন মেকেরেন ৪-০-২১-২, ডে লেডে ৩-০-২৯-২, প্রিঙ্গল ২-০-১০-১, শারিজ ৩-০-২৭-১, ফন বিক ৩-০-১২-১)।
নেদারল্যান্ডস: ২০ ওভারে ১৩৫ (স্কট ১৬, ম্যাক্স ও’ডাউড ৮, বিক্রমজিং সিং ০, বাস ডি লিড ০, কুপার ০, একারমান ৬২, প্রিঙ্গল ১, বিক ২, ক্লাসেন ৭, মিকেরেন ২৪ ; তাসকিন ৪-০-২৫-৪, হাসান ৪-১-১৫-২, মুস্তাফিজ ৪-০১৯-০৯, সাকিব ৪-০-৩২-১, সৌম্য ৩-০-২৯-১)।
ফল: ৯ রানে জয়ী বাংলাদেশ।