শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা আঞ্চলিক রাজনীতি

চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগে ‘স্বেচ্ছাচারিতা’, নেতাদের ক্ষোভ



রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :২২ অক্টোবর, ২০২২ ৮:৩১ : অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবু ও সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজের বিরুদ্ধে ‘স্বেচ্ছাচারিতার’ অভিযোগ উঠেছে। তারা সংগঠনকে তাদের একক সিদ্ধান্তে পরিচালনা করছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন খোদ কমিটির নেতারা। এ নিয়ে সংগঠনটির নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার (২১ অক্টোবর) বিকেলে নগরীর আগ্রাবাদ এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়।

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এ কর্মসূচিতে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২০ সদস্যের কমিটির ১৫ জন নেতা অংশ নেননি। তড়িঘড়ি করে একদিনের নোটিসে এ কর্মসূচির আয়োজন করা নিয়ে কমিটির নেতারা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ওপর চরম ক্ষুব্ধ হন। তাই তারা সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির অনুষ্ঠান বয়কট করেন।

কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ মাত্র পাঁচজন নেতা ও গুটিকয়েক কর্মী নিয়ে সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা ৫৭ মিনিটে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে একটি জরুরি সভা আহ্বানের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। সন্ধ্যা ৭টায় নগরীর ওমর গনি এমইএস কলেজের সামনে একটি রেস্টুরেন্টে এ সভা আহ্বান করা হয়। কিন্তু সে সভার এজেন্ডা জানানো হয়নি। এজেন্ডা না জানানোয় আর স্বল্পতম সময়ে সভা আহ্বান করায় ১৭ জন নেতা তাতে অংশ নেননি।

দলীয় সূত্রটি জানায়, সে সভায় কেবল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত হন। পরে তারা প্রচার সম্পাদক তাসাদ্দেক নুর চৌধুরী তপুকে ডেকে নেন। তিনজনে মিলে সভায় পরদিন শুক্রবার বিকেলে সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেন। এ নিয়ে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে একটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।

সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচি উদ্বোধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া নিয়ে কমিটির নেতারা ক্ষুব্ধ হন। অনেকে এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেন।

নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সংগঠনের সহসভাপতি সুজিত দাশ কোরাম পূর্ণ হওয়া ছাড়া তিনজনে মিলে সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেন।

তিনি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উদ্দেশে বলেন-‘আপনারা এক ঘণ্টার নোটিসে কোনো এজেন্ডা ছাড়া সভা আহ্বান করলেন। দু-তিনজন ছাড়া সভায় কেউ উপস্থিত ছিল না। সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচি উদ্বোধনের সিদ্ধান্ত কতটুকু গঠনতন্ত্র অনুযায়ী হয়েছে? মিটিং কি আজকেই জরুরি ছিল? ১১ জন সহসভাপতি, ৩ জন যুগ্ম সম্পাদক ও তিনজন সাংগঠনিক সম্পাদককে অসম্মান করার কোনো প্রয়োজন আপনাদের ছিল না।’

স্বেচ্ছাসেবক লীগের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, কেন্দ্র থেকে এমন কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি যে, শুক্রবারের মধ্যেই সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচি শুরু করতে হবে। এটা আরও দু-তিন দিন কিংবা এক সপ্তাহ পরেও শুরু করা যেতো।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের একজন সহসভাপতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজনীতি সংবাদকে জানান, শিক্ষা উপমন্ত্রী শুক্রবার চট্টগ্রামে অবস্থান করার সুযোগে তাকে দিয়ে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করাতে তারা (সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক) কৌশলে এ সিদ্ধান্ত নেন। তারা একক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্যই কৌশলে তড়িঘড়ি করে জরুরি সভার আয়োজন করে।

এ বিষয়ে জানতে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবু ও সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তারা রিসিভি করেননি।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো।’

নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি সুজিত দাশ রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক চাইলে যে কোনো সময়ে জরুরি সভা ডাকতে পারে যা গঠনতন্ত্রে আছে। কিন্তু তারা যে জরুরি সভা ডেকেছিল বিষয়টা তো জরুরি ছিল না। সাধারণত ক্রাইসিস মোমেন্টে কেন্দ্র থেকে জরুরি সভার নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু এখন তো কোনো ক্রাইসিস মোমেন্ট নেই। তাহলে তারা কোন উদ্দেশ্যে তড়িঘড়ি করে সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচি শুরু করলো?’

নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের অপর সহসভাপতি মনোয়ার জাহান মনি রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘স্বল্প সময়ের নোটিশে তো সভায় অংশ নেওয়া যায় না। প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি কারো সাথে সমন্বয় না করে এককভাবে এ কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংগঠনের নিয়মানুযায়ী, সাধারণত কার্যনির্বাহী কমিটির সভা ডেকে এ ধরণের কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু তারা সেটা করেননি। এটা তাদের একধরণের স্বেচ্ছাচারিতা।’

জানতে চাইলে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের তাসাদ্দেক নুর চৌধুরী তপু রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘অনেকে ব্যস্ততার কারণে কর্মসূচিতে আসতে পারেনি। এখানে তড়িঘড়ির কোনো বিষয় নেই। কেন্দ্রীয়ভাবে সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচি অনেক আগে শুরু হয়েছে। আমরা ১০ দিন আগে ফরম এনেছি। কেন্দ্র থেকে বার বার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তাড়াতাড়ি সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচি শুরু করতে। তাই আমরা শুরু করেছি।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের ২০ সদস্যের কমিটির হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে তথ্য ফাঁস হওয়ার কথা নয়। যদি এখান থেকে কেউ তথ্য ফাঁস করে থাকে তাহলে মেনে নিতে হবে যে, স্বেচ্ছাসেবক লীগের মধ্যে অবশ্যই ভূত আছে।’

উল্লেখ্য, গত ৯ মার্চ দেবাশীষ নাথ দেবুকে সভাপতি ও আজিজুর রহমান আজিজকে সাধারণ সম্পাদক করে স্বেচ্ছাসেবক লীগ চট্টগ্রাম মহানগর শাখার ২০ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি ৪ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদও গঠন করা হয়।

দীর্ঘ ২১ বছর পর সংগঠনকে ঢেলে সাজাতে চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছসেবক লীগের নতুন কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু এই কমিটি গঠনের পর থেকে সংগঠনটির মধ্যে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে।

৭ মাসেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন না হওয়া, তৃণমূলে সাংগঠনিক কোনো কর্মকান্ড না থাকা এবং সংগঠনের সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবুর বিরুদ্ধে কোটি টাকা চাঁদাবাজির মামলা আদালতে বিচারাধীন থাকা নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে অস্বস্তি ও অস্থিরতা বিরাজ করছে।

আরও পড়ুন: স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা দেবুর চাঁদাবাজি, গোপন ক্যামেরায় ধরা

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর