বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা আঞ্চলিক রাজনীতি

মনজুর আলমের রাজনীতির ‘টেকনিক’


চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম।

রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :১৮ অক্টোবর, ২০২২ ৯:৩৩ : অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলমের একটি বক্তব্য নিয়ে চট্টগ্রামের রাজনীতিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক এই উপদেষ্টা বলেছেন, তার ৭০ বছরের জীবনে ৬৫ বছর আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিলেন।

আজ মঙ্গলবার সকালে নগরীর উত্তর কাট্টলীতে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন।

অনুষ্ঠানে মনজুর আলম বলেন, ‘আমার বয়স এখন ৭০ বছর। ৫ বছর যদি বাদ দিই, ৬৫ বছর আমি শৈশব থেকে আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম। আজও আছি, যেখানে ছিলাম সেখানেই আছি।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, ‘‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করেন, ভালোবাসেন। বকাও দেন। কিছুদিন আগে বকাও শুনেছি। কিন্তু উনি আদরও করেছেন। যে আদর সবার ভাগ্যে সম্ভব না। চট্টগ্রামে কোর্ট হিলে সবার সম্মুখে তিনি আমাকে বলেছেন, ‘মেরেছো কলসির কানা, তাই বলে কি প্রেম দেবো না।’ আমি উনাকে গভীরভাবে শ্রদ্ধা করি।’’

তার এ বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়েছে।

অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, ২০১০ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হওয়া মনজুর আলম তখন পাঁচ বছর কার সাথে ছিলেন?

মনজুর আলমের এ বক্তব্য প্রসঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘ব্যবসায়ী যারা রাজনীতিতে আসে তাদের চরিত্র তো এরকমই হয়। মুনাফেকদের চরিত্র তো এটাই। যে ক্ষমতায় আসবে তাকে স্যালুট করবে।’

চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘‘সৈয়দ শামসুল হকের একটি উপন্যাস আছে যেটির নাম হলো-‘খেলারাম খেলে যা’। এর বাইরে আমি আর কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’’

বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হওয়া মনজুর আলমের এ বক্তব্যে দলটির নেতা-কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেকে মনজুর আলমকে নিয়ে সমালোচনাও করছেন।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম মহাসচিব মহসিন কাজী ফেসবুকে একটি পোস্টে মন্তব্য করেন, ‘মঞ্জুর আলম ভাই সুন্দর বলেছেন। বললেন, ৭০ বছরের জীবনে ৬৫ বছর আওয়ামী লীগের সাথে ছিলাম। চট্টলার অবিসংবাদিত নেতা আলহাজ এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়িয়ে, জিতে পাঁচ বছর কার সাথে ছিলেন। হলেন বিএনপি নেত্রীর উপদেষ্টা। তাহলে ৬৫ বছরের হিসাবে কী গড়মিল নেই?’

না, মনজুর আলমের ৭০ বছরের জীবনের রাজনৈতিক হিসাবে কোনো গড়মিল নেই! তিনি ‘টেকনিক’ অবলম্বন করে বক্তব্য দিয়েছেন বলে রাজনীতি সংবাদকে জানিয়েছেন।

মোহাম্মদ মনজুর আলম রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘আমার ৭০ বছরের মধ্যে ৬৫ বছর আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকার হিসাব দিয়েছি। কিন্তু বাকি ৫ বছরের কথা আমি টেকনিক করে বলিনি। সেই পাঁচ বছর আমি বিএনপির সঙ্গে ছিলাম। টেকনিক করে বিএনপির নাম মুখে নিই নাই।’

সাবেক এই মেয়র বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আমার পারিবারিক পার্টি, আমার বাবার পার্টি। আমার পরিবারের সবাই তো এখন আওয়ামী লীগ। ভাতিজা একটা এমপি (দিদারুল আলম, সীতাকুণ্ড আসনের সংসদ সদস্য) আছে। কিন্তু আমি এখনো আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হইনি।’

আওয়ামী লীগ আপনার পারিবারিক পার্টি বলছেন কিন্তু আপনি বিএনপি থেকে কেন মেয়র হলেন, এরপর কেন দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হয়েছিলেন?- এ প্রশ্নের জবাবে মনজুর আলম বলেন, ‘বিএনপি আমাকে ডেকে মনোনয়ন দিয়েছিল। আর মেয়র তো শুধু বিএনপির ভোটে হইনি, এই শহরের ৬০ লাখ মানুষের মধ্যে কে ভোট দিয়েছে, কে দেয় নাই তা তো আমি জানি না।’

২০১৫ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন নিয়ে মেয়র প্রার্থী হয়েছিলেন মনজুর আলম। কিন্তু ভোট শুরুর তিন ঘণ্টার মাথায় ‘কারচুপির’ অভিযোগে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন তিনি। সেইসঙ্গে তিনি রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন।

কিন্তু এক বছর নীরব থাকার পর তিনি পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ২০১৬ সালের ১৫ আগস্ট নগরীর উত্তর কাট্টলীর বাগানবাড়িতে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪১তম শাহাদাতবার্ষিকী পালন করেন। ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন’-এর ব্যানারে তিনি এ কর্মসূচি পালন করেছিলেন।

এরপর থেকে বিএনপির সাবেক এই মেয়র নিজেদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের আমন্ত্রণ জানান।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১০ (পাহাড়তলী-হালিশহর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ তাকে মনোনয়ন দেয়নি।

মনজুর আলমের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, আগামী সংসদ নির্বাচনেও তিনি চট্টগ্রাম-১০ (পাহাড়তলী-হালিশহর) আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন। মনোনয়ন পেতে তিনি নীরবে দৌড়ঝাঁপও করছেন। কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎও করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে তিনি বকা খাওয়ার বিষয়টি আজকে সভায়ও বলেছেন।

উল্লেখ্য, ২০১০ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৪ লাখ ৭৯ হাজার ১৪৫ ভোট পেয়ে নিজের রাজনৈতিক গুরু এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে প্রায় ৯৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হয়েছিলেন বিএনপি প্রার্থী মনজুর আলম।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর