রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :৬ অক্টোবর, ২০২২ ৫:০৮ : অপরাহ্ণ
‘র্যাব সৃষ্টি করেছে কে’-এমন প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমেরিকা র্যাবের ট্রেনিং দেয়, তারাই অস্ত্র দেয়। যেমন ট্রেনিং দিয়েছে তারা (র্যাব) তেমন কাজ করেছে। আমাদের করার কী আছে?’
আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদানসহ যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর সম্পর্কে জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনে আসেন সরকারপ্রধান।
আমেরিকা নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করে না বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৪০ বছর তালেবানের সাথে যুদ্ধ করে আবার তাদের কাছেই ক্ষমতা দিয়ে চলে গেল আমেরিকা। নিজের ব্যর্থতার কথা তারা বলে না। কেউ যদি অপরাধ করলে তার বিচার হয় আমাদের দেশে। কিন্তু আমেরিকায় বিচার হয় না।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের পুরস্কৃত করছে: হিউম্যান রাইটস
মুক্তিযুদ্ধের যারা বিরোধিতা করেছে তারা স্বাধীনতার পর অনেকদিন ক্ষমতায় ছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার দেশেরই কিছু লোক তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) কাছে বানোয়াট তথ্য দেয়। দেশের বদনাম করে। যারা এটা করে তারা কোনো না কোনো অপরাধ করে দেশ ছেড়েছে।’
আগামী ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে নেতৃত্বে কোনো চমক থাকছে কি না?-এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের একজন কর্মীও যদি আমাকে না চায় তাহলে আমি নেতৃত্বে থাকবো না, চলে যাবো। ১৯৮১ সালে যখন আমার অনুপস্থিতিতে আমাকে সভাপতি করা হয়েছিল তখন থেকে এই নীতিটা মেনে চলছি। ’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এটা ঠিক দীর্ঘ দিন হয়ে গেছে। অবশ্যই আমি চাই নতুন নেতৃত্ব আসুক। দীর্ঘদিন হয়েছে, আমি বিদায় নেওয়ার জন্য প্রস্তুত। নেতৃত্ব কাউন্সিলররা ঠিক করে থাকেন। কাউন্সিলরদের সিদ্ধান্তটাই চূড়ান্ত।’
সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। প্রতিবারের মতো এবারো রাজনৈতিক দলগুলোকে চায়ের আমন্ত্রণ জানানো হবে কি না?-এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচনে অংশ নেওয়া এটি যার যার দলীয় সিদ্ধান্ত। তবে আমরা চাই নির্বাচনে সবাই আসুক। দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো অনেক হুমকি দিচ্ছে। এটাই তো তাদের কাজ। তারা যদি শক্তিশালী হতো, তাহলে অনেক কিছুই হতে পারতো।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার তো আসলে সময় হয়ে গেছে। আমার যেটা লক্ষ্য ছিল, জাতির পিতা বাংলাদেশ স্বাধীন করে একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে বাংলাদেশকে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অগ্রগতি করে স্বল্প উন্নত দেশে মর্যাদা দিয়ে যান এবং স্বল্প উন্নত দেশের মর্যাদা কিন্তু জাতিসংঘ স্বীকৃতি দিয়েছিল। এরপরে এদেশে ঘটেছে হত্যার রাজনীতি, ক্ষমতা ছিল বন্দিখানায়, গণতন্ত্রও ছিল না, তার পরিবর্তে ছিল মার্শাল ‘ল’ এবং মিলিটারি শাসক এবং সেখানে কারফিউ গণতন্ত্র বলতে পারি। অনেক চড়াই উত্রাই পাড় করে আমরা গণতন্ত্র উদ্ধার করি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা একটানা তিন বার অর্থাৎ, ২০০৮ সালের নির্বাচন থেকে শুরু করে ২০২২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে এই পর্যন্ত একটানা গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত আছে। এরমধ্যে অনেক চড়াই উত্রাই, খুন, অগ্নি সংযোগ ও অগ্নিসন্ত্রাস ঘটেছে। তারপরেও কিন্তু আমরা ক্ষমতাই একটানা ছিলাম বলে আজকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি। আমার তো লক্ষ ছিল ২০২০ সালের জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং সুবর্ণ জয়ন্তীতে আমরা উন্নয়নশীলের মর্যাদা পেয়েছি। এখন বিদায় নেওয়ার জন্য আমি প্রস্তুত।’
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘মিয়ানমার সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন সম্ভব হচ্ছে না। রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করার জন্য জাতিসংঘকে কার্যকর ও জোরাল ভূমিকা রাখার জন্য আহ্বান জানিয়েছি।’