শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা অর্থ-বাণিজ্য

৩৭ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ

গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে কানাডায় রিং আইডির এমডি ও সিইও’র বিলাসী জীবনযাপন


রিং আইডির এমডি শরীফুল ইসলাম ও তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির সিইও আইরিন ইসলাম

রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :১৬ আগস্ট, ২০২২ ৭:৩১ : পূর্বাহ্ণ

অর্থের বিনিময়ে সিলভার আইডি ও গোল্ড আইডি খোলার লোভনীয় বিপুল অর্থ আয়ের অফার দিয়ে গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে কানাডায় বিলাশ বহুল জীবনযাপন করছে রিং আইডির মালিক দম্পতি।

প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শরীফুল ইসলাম এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তার স্ত্রী আইরিন ইসলামসহ তিনজনের নাম উল্লেখসহ রিং আইডি বিডি লিমিটেড ও রিং আইডি ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থপাচার আইনে গুলশান থানায় মামলা করেছে সিআইডি।

জানা গেছে, প্রাথমিক অনুসন্ধানে তাদের বিরুদ্ধে ৩৭ কোটি টাকা অর্থপাচারের তথ্য পেয়েছেন সিআইডির কর্মকর্তারা।

এরপরই শরীফুল ও আইরিন দম্পতি এবং শরীফুলের ভাই সাইফুলকে আসামি করে মামলা দেওয়া হয়েছে। এরপর তদন্তের মাধ্যমে বিস্তারিত অনুসন্ধান করে আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হবে।

সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের মাঝামাঝি ই-কমার্স ভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে প্রতারণার তথ্য সামনে আসে। তখন একযোগে বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা ও আইনি ব্যবস্থা নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর ভাটারা থানায় রিং আইডির মালিক দম্পতিসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে রিং আইডির মালিক শরীফুল ইসলামের ভাই সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মামলাটির তদন্তের অংশ হিসেবে রিং আইডির বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করে সিআইডি। প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে গত ৪ আগস্ট গুলশান থানায় অর্থপাচার আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, প্রাথমিক অনুসন্ধানে রিং আইডি নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের খোঁজ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রিং আইডি বিডি লিমিটেড ২০১৫ সালে যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তর থেকে নিবন্ধন নেয়।

এছাড়া রিং আইডি ডিস্ট্রিবিশন লিমিটেড নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান ২০২১ সালের ৩০ জুন নিবন্ধন নিয়েছে। দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিক একই ব্যক্তি।

প্রাথমিক অনুসন্ধানে সিআইডির অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুটি প্রতিষ্ঠানের পাঁচটি ব্যাংক হিসাবের সন্ধান পেয়েছেন।

২০১৫ সাল থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এসব ব্যাংক হিসাবে ৩৭৭ কোটি জমা হয়। একই সময়ের মধ্যে ৩০২ কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়।

সিআইডির একজন কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে তারা পাঁচটি ব্যাংক হিসাব পর্যালোচনা করে ৩৭ কোটি টাকা পাচার ও আত্মসাতের তথ্য পেয়েছেন।

অন্যদিকে কয়েকটি সিকিউরিটিজ কোম্পানির মাধ্যমে ৩৩ কোটি টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

এছাড়া ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিদেশি বিজ্ঞাপন দেখিয়ে যেসব অর্থ আয় করেছে রিং আইডি সেসব টাকা বাংলাদেশে আনার কথা থাকলেও বিদেশে পাচার হয়েছে বলে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে।

জানা যায়, রিং আইডির স্বত্বাধিকারী শরীফুল ইসলাম কম্পিউটার সায়েন্সে পড়াশোনা করেছেন। ২০১৪ সালে তিনি ভিশন টেল ও ক্লাউড টেল নামে দুটি প্রতিষ্ঠান খুলে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার (বিটিআরসি) সঙ্গে ব্যবসা শুরু করেন।

বিটিআরসির কাছ থেকে ২৯৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ায় তার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের হয়। এর অংশ হিসেবে শরীফুল-আরিন দম্পতিকে একবার গ্রেপ্তার করেছিল সিআইডি।

কিন্তু একমাসের মাথায় জেল থেকে জামিন নিয়ে কানাডায় পাড়ি জমান তারা। এরপর কানাডায় বসেই রিং আইডি বিডি লিমিটেড এবং রিং আইডি ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড চালু করেন তারা।

ঢাকার নিকেতন এলাকায় একটি অফিস নিয়ে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠান দুটির দেখভাল করতেন শরীফুলের ভাই সাইফুল ইসলাম।

সূত্র জানায়, রিং আইডি মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পরিচয় দিয়ে অবৈধভাবে মাল্টিলেভেল মার্কেটিংয়ের (এমএলএম) কাজ করতো।

তারা ২২ হাজার টাকার বিনিময়ে গ্রাহকদের সিলভার আইডি ও ১২ হাজার টাকার বিনিময়ে গোল্ড আইডি খোলার অফার দিতো।

এসব আইডির মালিকরা সাধারণ গ্রাহকদের রিং আইডিতে যুক্ত করে ভিডিও স্ট্রিমিং ও বিজ্ঞাপন দেখার অফার দিতো।

সেই বিজ্ঞাপনের ভিউ থেকে আয়কৃত অর্থের একটি অংশ এজেন্ট হিসেবে সিলভার বা গোল্ড আইডির মালিক, একটি অংশ ভিউয়ার্স ও বড় একটি অংশ রিং আইডি কর্তৃপক্ষ নিতো।

প্রথম দিকে গোল্ড বা সিলভার আইডি হোল্ডারদের কিছু অর্থ দেওয়া হলেও বেশিরভাগ অর্থ হাতিয়ে নেয় রিং আইডি কর্তৃপক্ষ।

সিআইডির ওই কর্মকর্তা আরো জানান, দেশ থেকে অবৈধভাবে আয়কৃত অর্থ বিভিন্ন কৌশলে কানাডায় নিয়ে রিং আইডির মালিক শরীফুল-আইরিন দম্পতির বিলাসী জীবনযাপনের তথ্য পাওয়া গেছে। বর্তমানে তারা কানাডার মন্ট্রিয়েলে বসবাস করছেন।

অর্থপাচার আইনে মামলা হওয়ার পর বিস্তারিত তদন্ত কাজ এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি ইন্টারপোলের মাধ্যমে শরীফুল ইসলাম ও আইরিন ইসলামকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য চিঠি দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর