রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :৬ আগস্ট, ২০২২ ১:৫১ : অপরাহ্ণ
পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই শুক্রবার রাতে হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার। এরপর দেশের সব স্থানে দেখা দিয়েছে তীব্র গণপরিবহণ সংকট। তীব্র গণপরিবহন সংকটে যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। বাসের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।
সরকার এখনো ভাড়া নির্ধারণ না করে দিলেও ইচ্ছেমতো ভাড়া নেয়ার অভিযোগ করছেন যাত্রীরা।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে মধ্যরাতে শহরের পেট্রলপাম্পগুলোতে মানুষের অস্বাভাবিক ভিড় জমে যায়।
ভীড় সামলাতে এবং বিক্ষুব্ধ মানুষের চাপে ঢাকা, রাজশাহী, সিলেট এবং চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাম্প বন্ধ করে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পরিস্থিতি সামলাতে ঢাকাসহ কয়েকটি জেলায় পেট্রোলপাম্পে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার খবরে কয়েকটি জেলায় বিক্ষোভ হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
আজ শনিবার সকাল থেকে ব্যস্ত রাজধানীর চিরচেনা রূপ দেখা যায়নি। সকাল প্রায় ১০টা পর্যন্ত রাজধানীতে খুব একটা গাড়ি চলাচল করতে দেখা যায়নি।
দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর একটি বাস এলেই হুড়োহুড়ি লেগে যায়। রাজধানীর সবগুলো রুটে একই চিত্র দেখা গেছে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, গুলিস্তান, রায়েরবাগ, শনির আখড়া, কাজলা, যাত্রাবাড়ি, রামপুরা ব্রিজ এলাকায় একি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সব জায়গাতেই যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আজিজুল ইসলাম বলেন, মহাখালী যাওয়ার জন্য বাস পাচ্ছি না। অন্যান্য সময় শনিবারে বাস ফাঁকাই থাকে। কিন্তু আর জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে কোনো বাস পাওয়া যাচ্ছে না।
আবু জাফর নামে এক যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষের কষ্ট আরও বেড়েছে। কয়েকদিন পরে পরিবহনগুলো বাসের ভাড়া ইচ্ছামতো বাড়াবে। তখন সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়বে।
মালঞ্চ পরিবহন বাসের চালক পানির জানিয়েছেন, ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় আজ রাস্তায় অনেকেই বাস নামাননি। অনেকেই পেট্রোল পাম্পে গিয়ে তেল দিতে পারেনি। আবার কোনো কোনো পাম থেকে কম তেল দেয়া হয়েছে। এ কারণে গণপরিবহন একেবারে কম। শত শত মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও বাসে উঠতে পারছে না।
শুধু রাজধানীতেই নয়, এই চিত্র দেশের প্রায় সবখানে।
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে শনিবার সকাল থেকে যানবাহন না চালানোর ঘোষণা দেয় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহণ মালিক গ্রুপ। এক বিবৃতিতে তারা জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি জনজীবনে ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে দাবি করে। তারা বলেছে, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি হলে পরিবহণ ভাড়াও বৃদ্ধি করতে হবে।
এছাড়া জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন জারির পরপরই বন্ধ করে দেওয়া হয় সিলেটের বেশিরভাগ তেল পাম্প। মোটরসাইকেল চালকরা রাত ১১টার দিকে তেল নিতে চাইলেও কোনো পাম্পে তেল পায়নি। সিলেটের পাঠানটুলা এলাকায় নর্থইস্ট পাম্পে তেল না পেয়ে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করেন ক্রেতারা। এসময় টায়ারে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ করতে দেখা যায় তাদের।
এদিকে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির খবরে যশোরের তেল পাম্পগুলোর সামনে মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকারের ভিড় লেগে যায়। তবে বেশিরভাগ পাম্পই বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাসের অপেক্ষায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা মুন্না নামে এক যাত্রী বলেন, কোনো শনিবারে গণপরিবহণের এমন সংকট দেখিনি। ১ ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি কোনো বাসে উঠতে পারছি না।
এদিকে শনিবার সকাল থেকে রাজধানীর পেট্রোল পাম্পগুলোতে ভিড় ছিল খুবই কম। তেলের বাকি দামের কারণেই পেট্রোল পাম্পগুলোর তেল বিক্রির পরিমাণ কমে গেছে। শুক্রবার রাত থেকে পেট্রোল পাম্পগুলো তেল বিক্রি কয়েক ঘণ্টা বন্ধ রাখে। নির্ধারিত সময়ের দাম বাড়ানোর পর আবার তেল বিক্রি শুরু করে কিন্তু আজ সেই তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা কম। দাম বাড়ার কারণে অনেকেই আগের তুলনায় অর্ধেক পরিমাণ তেল নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, শুক্রবার রাত ১০টায় সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা, পেট্রোলের দাম ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা ও অকটেনের দাম ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা করা হয়েছে।