শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪ | ২ কার্তিক, ১৪৩১ | ১৪ রবিউস সানি, ১৪৪৬

মূলপাতা দেশজুড়ে

‘অলৌকিক’ শিশুর জীবনযুদ্ধ


রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :১৮ জুলাই, ২০২২ ১১:১৬ : পূর্বাহ্ণ
Rajnitisangbad Facebook Page

ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালে সড়ক দুর্ঘটনার সময় জন্ম নিয়েছে এক শিশু। গত শনিবার বিকেলে দ্রুতগামী একটি ট্রাকের চাপায় ঘটনাস্থলেই মারা যান স্বামী, অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও তাদের এক মেয়ে। কিন্তু দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সময় অন্তঃসত্ত্বা নারী জন্ম দিয়ে গেছেন একটি কন্যাসন্তান।

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, ট্রাকের চাকার চাপে পেট ফেটে নাড়িভুঁড়িসহ বাচ্চাটা বের হয়। ঘটনার মর্মান্তিকতা সাড়া ফেলেছে সারা দেশে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও হচ্ছে আলোচনা।

আহত নবজাতকটি চিকিৎসাধীন স্থানীয় এক বেসরকারি হাসপাতালে। তবে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সে এখন শঙ্কামুক্ত। এখন তার দায়িত্ব কে নেবে তা নিয়েও আলোচনা কম হচ্ছে না।

গত শনিবার বেলা ৩টার দিকে স্বামী জাহাঙ্গীর আলম ও ছয় বছর বয়সী মেয়ের সঙ্গে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে যাচ্ছিলেন ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ত্রিশালের রায়মনি গ্রামের রত্না বেগম। অনাগত সন্তানের শারীরিক অবস্থা কেমন আছে তা জানতে কাছেই একটি ক্লিনিকে আলট্রাসনোগ্রাফি করাতে যাচ্ছিলেন তারা।

কিন্তু রাস্তা পার হওয়ার সময় দ্রুতগামী একটি ট্রাকের নিচে চাপা পড়েন পরিবারের সবাই। ঘটনাস্থলেই সবার মৃত্যু হলেও এ দুর্ঘটনায় বেঁচে যায় মাতৃগর্ভে থাকা শিশুটি।

ঘটনার পরপরই সেখানে উদ্ধারকাজে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ত্রিশাল ফায়ার স্টেশনের সাব-অফিসার মো. রিয়াজ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমরা গিয়ে দেখি রাস্তায় দুটো লাশ পড়ে আছে। একজন নারী ও একজন পুরুষ। যাদের মুখ একদম বিকৃত হয়ে গেছে। ট্রাকের সামনের দিকের চাকার নিচে পড়েছেন ভদ্রলোক। গর্ভবতী নারীর শরীরের বাম দিকের এক পাশ দিয়ে ট্রাকের পেছনের চাকাটা চলে গেছে। চাকার চাপে পেট ফেটে নাড়িভুঁড়িসহ বাচ্চাটা বের হয়ে এসেছে।’

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে ত্রিশাল থানার ওসি মাঈন উদ্দিন জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার পর আশপাশের লোকজন যখন কাছে গেল তারা দেখতে পেল তিনটি বডি পড়ে রয়েছে। তারা একদম নতুন জন্ম নেওয়া বাচ্চার কান্নাও শুনতে পাচ্ছিল। কিন্তু হট্টগোলের মধ্যে কোথা থেকে কান্নাটা আসছে সেটা বুঝতে পারেনি। পরে তারা দেখে যে মহিলার বোরকার নিচে একটা বাচ্চা। সঙ্গে সঙ্গে কেউ বোঝেনি যে বাচ্চাটা পেট ফেটে বের হয়েছে।

ঘটনার পরই নবজাতকটিকে প্রথমে ময়মনসিংহের সিবিএমসিবি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ময়মনসিংহের লাবীব প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নবজাতকটি সেখানে সিবিএমসিবি শিশু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. কামরুজ্জামান ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিকস বিভাগের ড. সোহেল রানা সোহানের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নবজাতকটি আঘাতপ্রাপ্ত। তার ডান হাত প্লাস্টার করা হয়েছে। তবে এখন সে শঙ্কামুক্ত।

এদিকে মৃত জাহাঙ্গীর আলমের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। জাহাঙ্গীরের আরও দুটি সন্তানের কান্না কোনোভাবেই থামছে না।

জাহাঙ্গীরের বাবা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, ‘আমার পরিবারে দুটি ছেলে ছিল। ছোট ছেলেও সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়। আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনই শারীরিক প্রতিবন্ধী। জাহাঙ্গীর লেবারের কাজ করে সংসার চালাত। এখন আমার নাতিনদের নিয়ে কী করবো।’

জাহাঙ্গীরের চাচাতো ভাই শিপন বলেন, ‘জাহাঙ্গীর ও রত্না দম্পতির তিন সন্তান। বাড়িতে ছিল তাদের বড় মেয়ে জান্নাত (১১) ও ছেলে এবাদত (৮)। এদের বাবা-মা দুজনই চলে গেলেন। তাদের দেখার কেউ রইল না। আরেক মেয়ে পৃথিবীতে এলো কিন্তু বাবা-মার মুখও দেখতে পেল না। বাড়িতে তাদের দুই সন্তানের কান্না কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না।’

লাবীব হাসপাতালের পরিচালক মো. শাহজাহান বলেন, ‘নবজাতকটির ডান হাত ভেঙে গিয়েছিল, তা প্লাস্টার করা হয়েছে। আমার কাছে নবজাতকের সাহায্যে অনেকেই এগিয়ে আসার জন্য ফোন দিচ্ছেন।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘জেলা প্রশাসক শিশুটির বাড়ির খোঁজখবর নেওয়ার জন্য বলেছেন।’

ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মো. এনামূল হক বলেন, ‘শুনেছি শিশুটির কেউ নেই। আমি জেলা প্রশাসক হিসেবে শিশুর সম্পূর্ণ দায়িত্ব নেব।’

নবজাতকটির দায়িত্ব নিতে আসছেন অনেক বিত্তবান মানুষ। অনেকেই আসছেন দত্তক নিতেও। আবার তার দাদা-দাদিও চান নাতনিকে লালন-পালন করতে। তবে সেজন্য সামাজিক সহায়তা দরকার হবে তাদের।

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর