নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম প্রকাশের সময় :১৪ জুলাই, ২০২২ ২:২৬ : অপরাহ্ণ
চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়েছে। সংগঠনের সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবু কাউকে না জানিয়ে ভারত ভ্রমণে গেছেন। তিনি কখন দেশের বাইরে গেছেন কিংবা কখন আসবেন সে বিষয়ে সাংগঠনিকভাবে কাউকে কিছু বলে যাননি।
সভাপতি হয়ে সংগঠনের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করা নিয়ে দেবাশীষ নাথ দেবুর বিরুদ্ধে সমালোচনা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা।
নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, গতকাল বিকেল ৫টা ২৬ মিনিটে দেবাশীষ নাথ দেবু ভারতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ছবি তুলে তার ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দেন। তিনি ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার পর নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতারা জানতে পারেন তিনি ভারত ভ্রমণে গেছেন।
সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক বিদেশে গেলে সিনিয়র সহসভাপতি ও সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদককে ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব দিয়ে যেতে হয়। এছাড়া জেলা/ মহানগরের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক বিদেশে গেলে কেন্দ্রকেও অবহিত করতে হয়।
কিন্তু দেবাশীষ নাথ দেবু বিদেশ ভ্রমণে গিয়ে কাউকে ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব দিয়ে যাননি। বিদেশ ভ্রমণের বিষয়ে তিনি কেন্দ্রকেও অবহিত করে যাননি।
জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মেজবাউল হোসেন সাচ্চু রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতির বিদেশ ভ্রমণের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তিনি তো বিষয়টি কেন্দ্রকেও জানাননি, যা জানানোর নিয়ম ছিল। তাছাড়া সভাপতি দেশের বাইরে গেলে সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, সিনিয়র সহসভাপতিকে দায়িত্ব দিয়ে যেতে হয়। তিনি কেন এসব নিয়ম ভঙ্গ করেছেন তা আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’
জানা গেছে, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত নির্মল রঞ্জন গুহ চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে গেলে সিনিয়র সহসভাপতি মেজবাউল হোসেন সাচ্চুকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর আগে গত রমজান মাসে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু সৌদি আরবে ওমরাহ করতে গেলে তিনি গত ১৩ এপ্রিল সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক মোবাশ্বের চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়ে যান।
কিন্তু চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবু বিদেশ ভ্রমণের আগে কেন ও কী কারণে কাউকে দায়িত্ব দিয়ে যাননি তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সভাপতির অনুপস্থিতিতে কীভাবে সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালিত হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতারা।
সভাপতির অনুপস্থিতিতে আজ বৃহস্পতিবার নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভাও ডাকা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সিনিয়র সহসভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘সংগঠনের সভাপতি কখন বিদেশ গেছেন তা আমি জানি না। তিনি কখন আসবেন সেটাও জানি না। তিনি আমাকে কোনো দায়িত্ব দিয়ে যাননি।’
জানতে চাইলে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি সুজিত দাশ রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘সংগঠনের সভাপতি দেশের বাইরে গেছেন তা ফেসবুকে উনার পোস্ট দেখে জানতে পেরেছি। তিনি কাউকে বলে যাননি। কিন্তু সংগঠনের নিয়ম অনুযায়ী উনার কাউকে দায়িত্ব দিয়ে যাওয়া উচিত ছিল। এটা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন। বিষয়টা নিয়ে আজকে কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় আলোচনা হবে।’
নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের অপর সহসভাপতি মনোয়ার জাহান মনি রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ যখন দেশের বাইরে ছিলেন তখন সিনিয়র সহসভাপতিকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। সাধারণ সম্পাদকও যখন ওমরাহ করতে দেশের বাইরে যান তখন সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদককে দায়িত্ব দিয়ে যান। তার (দেবাশীষ নাথ দেবু) হয়তো কোনো নিজস্বতা আছে বিধায় কাউকে দায়িত্ব দিয়ে যাননি।’
ভারতে অবস্থানরত চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবুর সঙ্গে গতকাল সন্ধ্যায় হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হলে তিনি রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘এখন সংগঠনের কোনো কর্মসূচি নেই, তাই আমি কাউকে দায়িত্ব দিয়ে আসিনি। আর কর্মসূচি যদি থাকে তাহলে আমার পরে যিনি আছেন তিনি স্বাভাবিকভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। তাছাড়া কিছুদিন আগে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকও ভারতে এসেছিলেন। তিনিও তো কাউকে দায়িত্ব দিয়ে আসেননি।’
নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক যুগ্ম সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজনীতি সংবাদকে বলেন, সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্ব শৃঙ্খলা ভঙ্গ করাটা মারাত্মক অন্যায়। কারও ইচ্ছামতো সংগঠন পরিচালিত হতে পারে না। অযোগ্য ও অদক্ষ নেতৃত্বের কারণে আজকে সংগঠনের চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়ছে। সংগঠনের শৃঙ্খলা রক্ষায় কেন্দ্রের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
দীর্ঘ ২১ বছর পর সংগঠনকে ঢেলে সাজাতে গত ৯ মার্চ চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছসেবক লীগের ২০ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু ঢেলে সাজাতে গিয়ে সংগঠনটিতে এখন নানা কারণে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। গত চার মাসেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি।
সংগঠনের সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবুর বিরুদ্ধে কোটি টাকা চাঁদাবাজির মামলা আদালতে বিচারাধীন থাকা নিয়েও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে অস্বস্তি ও অস্থিরতা বিরাজ করছে।