নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :৪ জুলাই, ২০২২ ৭:৫৩ : অপরাহ্ণ
রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে হতাশাগ্রস্ত হয়ে মো. আনিসুর রহমান ওরফে গাজী আনিস নামে এক ব্যবসায়ী নিজের গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছেন।
আজ সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় আশেপাশে লোকজন এসে আগুন নেভায় এবং পুলিশকে খবর দেয়।
পুলিশ এসে ওই ব্যবসায়ীকে দ্রুত জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে যায়।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার শরীরের ৯০ শতাংশই পুড়ে গেছে।
গাজী আনিস কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পান্টি গ্রামের বাসিন্দা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাজী আনিস ১কোটি ২৬ লাখ টাকা পান হেনোলাক্স কোম্পানি কাছে। এই টাকা না দেয়ায় নিজের গায়ে নিজে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
গত ২৯শে মে গাজি আনিস জাতীয় প্রেস ক্লাবে এই বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি বলেন, ২০১৬ সালে হেনোলাক্স গ্রুপের কর্ণধার মো. নুরুল আমিন এবং তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়।
সেই সূত্রেই ২০১৮ সালে তিনি এই টাকা হেনোলাক্স গ্রুপে বিনিয়োগ করেন। এরপর তিনি বিনিয়োগের টাকা ফেরত পাচ্ছেন না।
এ ঘটনায় এই ব্যবসায়ীর একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস ছড়িয়ে পড়েছে। পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো-
“প্রিয় শুভাকাঙ্ক্ষী ভাই-বোন-বন্ধু। আমি মো. আনিসুর রহমান (গাজী আনিস) একজন কবিতা প্রেমিক মানুষ। নিজে হয়তো ভালো কবিতা লিখতে পারি না কিন্তু আমি ভীষণভাবে কবিতা ভালোবাসি।
আমি একজন ব্যবসায়ী এবং জীবনে প্রচুর রোজগার করেছি। আমার রোজগারের সবচেয়ে বড় অংশ স্থানীয় স্কুল, মাদরাসা, মসজিদ এবং অসহায় ও দুস্থ মানুষের জন্য উৎসর্গ করেছি। সেই সঙ্গে নিজেও সুখী স্বাচ্ছন্দ্যময় এবং সৎ জীবন-যাপন করেছি। আমি তিনটি কন্যা সন্তানের জনক। আমার বড় মেয়ে মেধা রহমান আঁচল এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী (আগস্ট-২০২২), মেঝ মেয়ে প্রতিভা রহমান অহনা এসএসসি পরীক্ষার্থী (জুন-২০২২) এবং ছোট মেয়ে জয়িতা রহমান অবনী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত।
২০১৬ সালে হেনোলাক্স গ্রুপের কর্ণধার মো. নুরুল আমিন এবং তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। ধীরে ধীরে তাদের সঙ্গে আমার সখ্যতা এবং আন্তরিকতা গড়ে উঠে। আমি কুষ্টিয়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেছি এবং কুষ্টিয়া শহরেই বসবাস করি। তবে প্রতিমাসেই নিজের প্রয়োজনে ঢাকা এলে তাদের সঙ্গে আমার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ হতো এবং উপহার বিনিময় ও ভালো রেস্তোরাঁয় আমরা একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করতাম এবং বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যেতাম। যেহেতু আমি স্বচ্ছন্দ দিনযাপনে অভ্যস্ত এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী, তাই নিজস্ব গাড়িতেই সব সময় যাতায়াত করি। আমি মো. নুরুল আমিন এবং ফাতেমা আমিনের সঙ্গে নিজের খরচায় দেশের বাইরেও একাধিকবার বেড়াতে গেছি।
২০১৮ সালে কলকাতা হোটেল বালাজীতে একইসঙ্গে অবস্থানকালে উনারা আমাকে হেনোলাক্স গ্রুপে বিনিয়োগের এবং যথেষ্ট লাভবান হওয়ার সুযোগ আছে বলে জানান। আমি প্রথমে অসম্মতি জ্ঞাপন করলেও পরবর্তীতে রাজি হই এবং প্রাথমিকভাবে এক কোটি টাকা বিনিয়োগ করি। পরবর্তীতে তাদের পীড়াপীড়িতে আরও ছাব্বিশ লাখ টাকা বিনিয়োগ করি (অধিকাংশ টাকা ঋণ হিসেবে আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে নেয়া)। বিনিয়োগ করার সময় পরস্পরের প্রতি সম্মান এবং বিশ্বাসের কারণে এবং তাদের অনুরোধে চূড়ান্ত রেজিস্ট্রি চুক্তি করা হয়নি। তবে প্রাথমিক চুক্তি করা হয়েছে। বিনিয়োগ পরবর্তী চূড়ান্ত রেজিস্ট্রি চুক্তিপত্র সম্পাদন করার জন্য বারবার অনুরোধ করি কিন্তু উনারা গড়িমসি করতে থাকেন। এক পর্যায়ে উনারা প্রতিমাসে যে লভ্যাংশ প্রদান করতেন সেটাও বন্ধ করে দেন এবং কয়েকবার উনাদের লোকজন দ্বারা আমাকে হেনস্তা ও ব্ল্যাকমেইল করেন এবং করার চেষ্টা করেন। বর্তমানে লভ্যাংশসহ আমার ন্যায্য পাওনা তিন কোটি টাকার অধিক।
এ-বিষয়ে কুষ্টিয়া আমলী আদালতে আমি উনাদের আসামি করে দুইটি মামলা দায়ের করেছি যা বিচারাধীন রয়েছে এবং গত ২৯/০৫/২০২২ তারিখ জাতীয় প্রেসক্লাব ঢাকায় সাংবাদিক সম্মেলন করি এবং যাবতীয় ডকুমেন্টস সম্মানিত সাংবাদিকদের নিকট উপস্থাপন করি। এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যাদি তুহিন আহমেদ ও রাজু হামিদের মাধ্যমে জানা যাবে। ভীষণ মানসিক নিপট খরায় আমি উল্লেখিত তথ্যাদি উপস্থাপন করলাম। আমার সামনে বিকল্প পথ না থাকায় ফেসবুকেও সবাইকে জানালাম।
আমি এই প্রতারক দম্পতির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং প্রধানমন্ত্রীর নিকট অনুরোধ করছি। সেইসঙ্গে যারা আমার শুভাকাঙ্ক্ষী তারাও সোচ্চার হবেন বলে আশা করছি।”