রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :২৫ জুন, ২০২২ ১২:০৫ : পূর্বাহ্ণ
রাত পোহালে নতুন এক গল্প লিখবে বাংলাদেশ। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে অবসান ঘটবে দৃঢ় সংকল্প, আত্মবিশ্বাস ও স্বপ্ন পূরণে বহু বাধা পেরিয়ে প্রতীক্ষায় বসে থাকা বাঙালির। স্বপ্ন, আবেগের সেই মাহেন্দ্রক্ষণের বাকি আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা।
রাতের অন্ধকারের বুক চিরে পূর্বাকাশে যে নতুন সূর্যটা উঠবে, সেই আলোতে বিশ্ব দেখবে এক অন্য বাংলাদেশকে। কেননা সকাল হতেই বাঙালির সামনে খুলে যাবে সোনালি ও প্রত্যাশার দুয়ার পদ্মা সেতু। ভরা বর্ষায় প্রমত্তা পদ্মা যখন নবযৌবন পেলো, ঠিক তখনই তার গায়ে জড়ালো গৌরব ও মর্যাদার এক অলঙ্কার।
আজ শনিবার সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর।
সেতুটির উদ্বোধন উপলক্ষে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাসহ সারাদেশে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
এদিকে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে সার্বিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে র্যাবসহ সাড়ে পাঁচ হাজার পুলিশ সদস্য। এজন্য সাজানো হয়েছে ত্রিমাত্রিক নিরাপত্তা বলয়।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর বাংলাবাজার ফেরিঘাট এলাকার জনসভায় যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জনসভাকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রায় ১৫ একর জমির ওপর ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৪০ ফুট প্রস্থের বিশাল মঞ্চ। নিরাপত্তার জন্য মঞ্চের ভেতরে ও বাইরে বসানো হয়েছে ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার। এছাড়াও থাকবে দেড় শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দিন সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পুরনো বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারযোগে রওনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাওয়া প্রান্তে সকাল ১০টায় সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন। পরে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তের নামফলক উন্মোচনের মাধ্যমে পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে টোল দিয়ে তিনি সেতু পার হবেন। জাজিরা প্রান্তে এসেও পদ্মা সেতুর নামফলক উন্মোচন করবেন।
অপরদিকে পদ্মা সেতু উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে সেতুর দুই প্রান্ত সেজেছে নতুন সাজে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় মহাসড়ক তথা ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে ছেয়ে গেছে রঙবেরঙের ব্যানার-ফেস্টুনে। সড়ক-মহাসড়ক, রাস্তাঘাট, হাটবাজার ও অলিগলি ছেয়ে গেছে পোস্টার, ব্যানার, বিলবোর্ড আর তোরণে। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে আলোকসজ্জা করা হয়েছে।
দক্ষিণবঙ্গের মানুষজন বলছেন, আমাদের যাদের পদ্মার ওপারে বাড়ি তারা জানি এই সেতু আমাদের জন্য কতটা আশীর্বাদের। কত মানুষের সারা জীবনের কষ্ট লাঘব হবে এই সেতুর কারণে। এই সেতুর উদ্বোধন চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে আমাদের কাছে।
বিশিষ্টজনরা বলছেন, শুধু দক্ষিণাঞ্চলকে সারা দেশের সঙ্গে বাঁধা নয়, মর্যাদার নতুন এক প্রতীক হয়ে উঠবে এই সেতু। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র, বিশ্বব্যাংকের ঘূর্ণিপাক, নানা গুজবকে পায়ে মাড়িয়ে নির্মিত এই সেতুর মাধ্যমে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো অন্য এক বাংলাদেশকে দেখবে বিশ্ব।
প্রসঙ্গত, সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি দ্বিতল এই সেতুর এক অংশ পদ্মা নদীর মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্ত এবং অপর অংশ নদীর শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে যুক্ত। সেতুতে একই সঙ্গে ট্রেন ও গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা রয়েছে।
চার লেন বিশিষ্ট ৭২ ফুট প্রস্থের এ সেতুর নিচতলায় রয়েছে রেল লাইন। পদ্মা সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।
২০০১ সালের চার জুলাই পদ্মা সেতুর ভিত্তিস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৩-০৫ সালে এর সম্ভাব্যতা সমীক্ষা হয়। ২০০৪ সালে জাইকা একটি সমীক্ষা চালিয়ে মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টে সেতু নির্মাণের পরামর্শ দেয়।
২০০৬ সালে পদ্মা সেতুর জন্য জমি অধিগ্রহণের প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু হয়। কিন্তু অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয় ২০০৯ সালে।
২০০৯-১১ সালে সরকার গঠনের পর পুরোদমে কাজ শুরু করে আওয়ামী লীগ সরকার। এই সময়ে বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন করা হয়। দায়িত্ব পায় নিউজিল্যান্ডভিত্তিক মাউনসেল লিমিটেড। ২০১০ সালের ১১ এপ্রিল মূল সেতুর দরপত্র আহবান করে আওয়ামী লীগ সরকার।
২০১২ সালের চার জুলাই অর্থায়ন নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে টানাপড়েনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে বলেন, প্রয়োজনে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে।
২০১২ সালের আট জুলাই নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার রূপরেখা জাতীয় সংসদের সামনে দেন শেখ হাসিনা। পরদিন নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রিসভা।