শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা চট্ট-মেট্টো

শিবির ক্যাডার ইফা পরিচালক তৌহিদুল সরকারি খরচে হজে যাচ্ছেন!


ইসলামিক ফাউন্ডেশনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক তৌহিদুল আনোয়ার

রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :১৫ জুন, ২০২২ ১০:৫৫ : পূর্বাহ্ণ

ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক ক্যাডার বিতর্কিত ইসলামিক ফাউন্ডেশনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক তৌহিদুল আনোয়ার সরকারি খরচে হজে যাচ্ছেন। গত ১২ জুন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, তৌহিদুল আনোয়ারকে হজে দায়িত্ব পালনের জন্য সৌদি আরবে পাঠাচ্ছে সরকার। তিনি দেশে ফেরার আগ পর্যন্ত তার জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রামের ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমির উপ-পরিচালক মো. ইদ্রিছকে।

সরকারী খরচে শিবিরের সাবেক ক্যাডার তৌহিদুল আনোয়ারের হজে যাওয়ার খবরে বিস্ময় প্রকাশ করেছে চট্টগ্রামের বিভিন্ন মহল।

তাদের অভিযোগ, তৌহিদুল আনোয়ারের মতো একজন শিবির ক্যাডার কীভাবে সরকারিভাবে পবিত্র হজে যাওয়ার সুযোগ পায়? বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে শিবির সাবেক এই ক্যাডারের দিনের পর দিন সুযোগ-সুবিধা পাওয়া অবাক করা ব্যাপার বলে মন্তব্য করছেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী লোকেরা।

জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারের শেষ সময়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান তৌহিদুল আনোয়ার। পরে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রয়াত মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজালকে হাত করে উপ-পরিচালক পদে পদোন্নতি বাগিয়ে নেন তিনি।

সম্প্রতি জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ কমপ্লেক্সে আসন্ন মহরম মাস উপলক্ষে অনুষ্ঠিতব্য ‘কারবালা মাহফিল ও ক্বিরাত সম্মেলন’ করার অনুমতি নিয়েও বিতর্কে জড়ান তৌহিদুল আনোয়ার। দীর্ঘ ৩৬ বছর ধরে হয়ে আসা এই মাহফিলের এখনো পর্যন্ত অনুমতি না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ চট্টগ্রামের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।

চট্টগ্রামের সচেতন মহলের অভিযোগ, তৌহিদুল সরকারকে বিব্রত করতে বিভিন্ন বিতর্কিত কাজ করে চলেছেন। চট্টগ্রামের জমিয়তুল ফালাহ মসজিদভিত্তিক ইসলামী কর্মকান্ড বন্ধ করতে তিনি নানা ষড়যন্ত্র করছেন। তার এসব বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের মুসল্লি ও স্থানীয় লোকজন চরম ক্ষুব্ধ।

এর আগে রাঙ্গামাটিতে কর্মরত থাকা অবস্থায় স্থানীয় সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদারের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে তৌহিদুল চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত হন। তার বিরুদ্ধে পাহাড়ি বাঙালির সম্প্রীতি নষ্টের অভিযোগও আছে।

জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রিধারী তৌহিদুলকে বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন ওই বিভাগেরই জ্যেষ্ঠ একজন শিক্ষক।

সেসময় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজালকে উদ্দেশ্য করে ঢাবির সাবেক ওই ভিসি বলেছিলেন, ‘এই জামায়াত শিবিরের ক্যাডার এখানে কী করে?’

অভিযোগ উঠেছে, প্রকল্প পরিচালক হিসেবে চট্টগ্রামের জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে দায়িত্ব পালনের পর তিনি রাতারাতি বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন। মসজিদের মাঠের একটি বড় অংশ ম্যাক্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দিয়ে তিনি আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন।

চট্টগ্রামের প্রধান দুইটি মসজিদের একটি জমিয়তুল ফালাহ, অন্যটি আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ। দীর্ঘদিন ধরে জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ভাবধারার লোকজন আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদকে কেন্দ্র করেই কার্যক্রম পরিচালনা করতেন।

আর সুন্নি আক্বিদার সমস্ত কর্মকান্ড পরিচালিত হতো জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ থেকে। জামায়াতের লোকজন এ নিয়ে সবসময় ক্ষুব্ধ থাকতেন। তারা জমিয়তুল ফালাহকেন্দ্রিক ইসলামি কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য বারবার চেষ্টা করেও সফল হতে পারেনি।

এমনকি বিগত বিএনপি জামায়াত সরকারও এই কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করেনি। কিন্তু তৌহিদুল আনোয়ার পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে চট্টগ্রামে আসার পর থেকে জামায়াতের এজেন্ডা সুকৌশলে বাস্তবায়ন করছেন বলে অভিযোগ স্থানীয় আলেমদের।

হজে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তৌহিদুল আনোয়ার বলেন, ‘এটা আমার দাপ্তারিক দায়িত্ব। সেখানে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া হজযাত্রীদের গাইড হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য আমাকে পাঠানো হচ্ছে।’

জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সখ্যের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কিছু লোক আমাকে জামায়াতে ইসলামী বলে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। যারা অভিযোগ করছেন, তারাই প্রমাণ করুক, আমি কোথায় শিবির করতাম আর কোন কমিটিতে ছিলাম।’

জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের বিভিন্ন ইসলামিক কার্যক্রম বন্ধের উদ্যোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার আগে এখানে ইদ্রিস নামের একজন ছিলেন। তিনিই সব কাজ শুরু করেন আর আমার আমলে বাস্তবায়ন হচ্ছে।’

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর