বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা চট্ট-মেট্টো

সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণের অকুতোভয় বীর হানিফ সওদাগর


হানিফ সওদাগর। ছবি: সংগৃহীত

রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :১৩ জুন, ২০২২ ৭:৪১ : অপরাহ্ণ

হানিফ সওদাগর। জমি জমা বসতভিটা কিছুই নেই, ভাড়া বাসায় থেকে সামান্য দোকান চালিয়ে অভাবের সঙ্গে লড়াই করা এই হানিফ সওদাগরই যেন আবির্ভূত হয়েছিলেন সীতাকুণ্ডে বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনায় ত্রাণকর্তার ভূমিকায়।

আগুনে দগ্ধ হয়ে যখন আহতরা দিগবিদিক ছুটছিলেন, তখন নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে, কাঁটাতারের বেড়ার ওপরে উঠে মই লাগিয়ে একাই উদ্ধার করেন অন্তত ৩০ জনকে।

৬ সন্তান নিয়ে অভাবের সংসারে বিএম ডিপোর পাশের ছোট্ট দোকানই ভরসা হানিফ সওদাগরের। বসতভিটাহীন এই হানিফই বিস্ফোরণের পর হয়ে ওঠেন বড় এক ত্রাণকর্তা।

বিস্ফোরণ আর আগুনে আহত বা দগ্ধ মানুষ যখন ডিপোর ভেতর থেকে বের হতে চিৎকার ছুটোছুটি করছিলেন, তখন হানিফের একটি মই তাদের সামনে হয়ে ওঠে জীবনের আলো। তার মই বেয়ে একে একে বেঁচে যান ৩০ জনের বেশি মানুষ। তার চা দোকানেই কথা হয় হানিফের সঙ্গে।

হানিফ বলেন, ‘বিস্ফোরণের বিকট শব্দে তার মনে হচ্ছিলো পুরো দোকানই বুঝি জায়গা থেকে সরে গেছে, নিজেও ছিটেকে পড়েছেন কয়েক হাত দুরে। বিস্ফোরণের দুই আড়াই মিনিট পরেই শুরু হয় আহতদের আর্তচিৎকার। সবাই বলছিলেন বাঁচাও বাঁচাও। উপায়ন্তর না দেখে দোকানের টিন বেয়ে দেয়ালের ওপরে উঠে কাঁটাতার পাশ কাটিয়ে নামিয়ে আনতে থাকেন একের পর এক আহতকে।’

হানিফের জন্য কাজটি সহজ ছিল না মোটেই। কারণ, এক হাতে কাঁটাতার ধরে অপরহাতে আহতদের উদ্ধার করতে হচ্ছিলো। পরে তার স্ত্রী বাড়ি থেকে মই এনে দেয়ার পর গতি আসে উদ্ধার তৎপরতায়। এই মই দিয়ে নিরাপদ জায়গায় নামিয়ে আনেন অন্তত ৩০ জনকে।

শারীরিকভাবে ছোটখাটো গড়নের এই মানুষটি এক সময় কোথাও কাজ পাননি। তাই নিজেই খুলেছেন জীবিকার পথ। সেই মানুষটি ছোট শরীর নিয়েও ঝাঁপিয়ে পড়েছেন মানুষের ঘোর বিপদে।

হানিফ বলেন, ‘আমি সুস্থ অবস্থায় অন্য একজন অসুস্থ মানুষকে বাঁচানো আমার দায়িত্ব, আমি তো মানুষ। আমার মতো অন্যরাও যদি দুই চার দশজন করে বাঁচাতে পারে তাহলেতো অনেকের জীবন রক্ষা হয়।…আর যারা মানুষ হয়ে অন্য মানুষের বিপদে এগিয়ে আসে না তারাতো কাপুরুষ।’

এতোগুলো মানুষের জীবন বাঁচানোর পর সবার প্রশংসায় ভাসছেন হানিফ সওদাগর। এরইমধ্যে তাকে পুরস্কৃত করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার।

হানিফ চান, ভবিষ্যতেও বিপদাপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াতে। তার মতে, অন্য আর দশজনকে বাঁচাতে গিয়ে যদি নিজের জীবনও চলে যায়, তাতেই খোদার কাছে লাখো শুকরিয়া।

বিএম ডিপোর বিস্ফোরণের পর অবশ্য শুধু হানিফই নন, বিপদগ্রস্ত মানুষদের বাঁচাতে এগিয়ে আসেন আশেপাশের গ্রামের বহু নারী-পুরুষ।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর