সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা চট্ট-মেট্টো

সীতাকুণ্ডে এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি আগুন, মৃত্যু বেড়ে ৪৯


সীতাকুণ্ডের কন্টেইনার ডিপো থেকে একের পর এক উদ্ধার করা হচ্ছে মরদেহ। ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম প্রকাশের সময় :৫ জুন, ২০২২ ৫:৪৫ : অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কন্টেইনার ডিপোতে লাগা আগুন ২০ ঘণ্টায়ও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আগুন ও ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

সীতাকুণ্ড উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, বিস্ফোরণের ঘটনায় আজ রোববার বিকেল সোয়া ৩টা পর্যন্ত ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৭ জনের লাশ শনাক্ত করা হয়েছে এবং ১৫ জনের নাম পাওয়া গেছে।

তারা হলেন-মোমিনুল হক, মহিউদ্দিন, হাবিবুর রহমান, রবিউল আলম, তোফায়েল ইসলাম, ফারুক জমাদ্দার, আফজাল হোসেন, মো. সুমন, মো. ইব্রাহিম, হারুন উর রশিদ, মো. নয়ন, শাহাদাত হোসেন, শাকিল তরফদার, শাহাদাত উল্লাহ জমাদার ও ফায়ার সার্ভিস কর্মী মনিরুজ্জামান।

মৃতদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের আটজন কর্মীও রয়েছেন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্তত দুই শতাধিক মানুষ দগ্ধ ও আহত হয়েছেন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে ১৩০ জনকে। দগ্ধ ও আহত আরও অনেককে নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

শনিবার রাত ৯টার দিকে সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকায় বিএম ডিপো নামের একটি বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোতে এই বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

বিস্ফোরণে ঘটনাস্থল থেকে অন্তত চার কিলোমিটার এলাকা কেঁপে ওঠে। আশপাশের বাড়ি-ঘরের জানালার কাঁচ ভেঙে পড়ে।

আগুন নেভাতে গিয়ে আহত হয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কমপক্ষে ২১ জন কর্মী। এছাড়া এক পুলিশ কনস্টেবলের পা বিচ্ছিন্নসহ অন্তত ১৫ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে ১৪ জনকে চট্টগ্রাম সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়েছে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে।

বিকেল ৫ টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কনটেইনার ডিপোতে আগুন জ্বলছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে জেলার ফায়ার সার্ভিসের ২৫ ইউনিট। তাদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর প্রায় ২০০ সদস্যের একটি টিমও যোগ দিয়েছে।

সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২১, দগ্ধ দুই শতাধিক

ডিপোতে কোনো পানির উৎস না থাকায় আগুন নেভাতে বেগ পেতে হচ্ছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের। আগুন ক্ষণে ক্ষণে বেড়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর পর বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। বিস্ফোরণের পরে আগুনের তীব্রতা বেড়ে যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম সেনানিবাসের ইঞ্জিনিয়ারিং কোর ১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মনিরা সুলতানা সাংবাদিকদের বলেন, ফায়ার সার্ভিসকে সহযোগিতা করার জন্য সকাল থেকেই এখানে সেনাবাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের পরে রাসায়নিক পদার্থ ড্রেন দিয়ে সমুদ্রে পৌঁছাতে পারে বলে আমাদের ধারণা। এটি যাতে সমুদ্রে পৌঁছাতে না পারে সেটির জন্য বালু দিয়ে বাঁধ দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণে ফায়ার সার্ভিস কর্মীসহ ১৬ জনের মৃত্যু

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আগুনে পোড়াসহ নানাভাবে আহতদের চিকিৎসায় রক্তের জন্য সাহায্য চাওয়া হয়েছে।

অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধদের চিকিৎসায় নগরীর বেসরকারী হাসপাতালের চিকিৎসকদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী।

ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, এ পর্যন্ত দুই শতাধিক আহতকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। বেশিরভাগই ধোঁয়ায় আহত, হালকা পোড়াও আছেন। তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

এ ঘটনায় মৃত প্রত্যেকের পরিবারকে ৫০ হাজার করে টাকা ও আহত প্রত্যেক ব্যক্তিকে ২০ হাজার করে টাকা দেবে জেলা প্রশাসন। শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিল থেকে সরকার দেবে মৃত প্রত্যেক শ্রমিকের পরিবারকে ২ লাখ টাকা এবং আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে সহায়তা। আহতদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনে অতিরিক্ত অর্থ দেওয়া হবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ২৪ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এ কনটেইনার ডিপো। মূলত এখান থেকে বিভিন্ন রপ্তানি পণ্য বিদেশে পাঠানো হয়। ডিপোটিতে ৫০ হাজারের বেশি কনটেইনার মজুত ছিল। এসব কনটেইনারে কেমিক্যাল ও গার্মেন্টস পণ্য রয়েছে। এখানে কর্তরত বেশিরভাগ লোকই চট্টগ্রামের বাঁশখালীর বাসিন্দা।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর