রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :৩ জুন, ২০২২ ১১:০৫ : পূর্বাহ্ণ
বাংলাদেশকে ‘আঞ্চলিক বিভিন্ন ব্লক ও জোটভিত্তিক রাজনীতি’ পরিহার করে স্বাধীন থাকার আহ্বান জানিয়েছে চীন।
বুধবার চীনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহবুব উজ জামানকে এ কথা বলেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়ান অ্যাফেয়ার্স ডিপার্টমেন্টের মহাপরিচালক লিউ জিনসং।
ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার সমন্বয়ে গঠিত কোয়াড ব্লকে (জোট) ঢাকাকে যোগ না দিতে বাংলাদেশকে প্রকাশ্যে আহ্বান জানিয়েছিল। ওই আহ্বানের এক বছরের মাথায় বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এক বৈঠকে আবারও একই কথা বললো চীন।
এ নিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বৈঠকে মাহবুবুজ্জামানকে লিউ জিনসং বলেন, বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের দেশগুলো নিজেদের এবং আঞ্চলিক স্বার্থের কথা মাথায় রাখবে বলে বিশ্বাস করে চীন। তারা নিজেদের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখবে এবং স্নায়ুযুদ্ধ ও ব্লক রাজনীতির মনোভাব প্রত্যাখ্যান করবে। এ অঞ্চলের দেশগুলোর মাল্টিলেটারেলিজম (বহুপাক্ষিকতা) এবং শান্তি ও উন্নয়নের জন্য কষ্টার্জিত পরিবেশকে রক্ষা করা উচিত।
আরও পড়ুন: ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে যা বললেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র
গত বছরের মে মাসে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং প্রকাশ্যে বাংলাদেশকে কোয়াডে যোগ না দেয়ার কথা বলেছিলেন। ঢাকায় তিনি বলেন, এই চার দেশের জোটের সঙ্গে যুক্ত হওয়া বাংলাদেশের জন্য ভালো কোনো বিষয় নয়। কারণ, এটি বাংলাদেশ ও চীনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
সে সময় লি’র এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘চীনের দূতের এ ধরণের মন্তব্য ‘অত্যন্ত দুঃখজনক এবং আক্রমণাত্মক। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি আমরাই নির্ধারণ করবো। চীনের থেকে এ ধরণের আচরণ আমরা আশা করিনি।’
প্রথম থেকেই কোয়াডের বিরোধিতা করছে চীন। দেশটি কোয়াডকে সামরিক জোট ন্যাটোর এশিয়ান সংস্করণ হিসেবে দেখছে।
মাহবুবুজ্জামানের সঙ্গে বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সর্বশেষ বক্তব্যের সমালোচনা করেন লিউ।
ব্লিঙ্কেন সম্প্রতি দাবি করেন, চীন বিশ্বের একমাত্র দেশ যে আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক, সামরিক এবং প্রযুক্তিগত ভারসাম্যে পরিবর্তন আনতে চায়।
বৃহস্পতিবার যুক্তরারষ্ট্রভিত্তিক জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে বাইডেন প্রশাসনের চীন নীতি উন্মোচন করেন ব্লিঙ্কেন।
এসময় তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চীনই দীর্ঘ মেয়াদে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ। যুক্তরাষ্ট্র বিনিয়োগ, জোট তৈরির মাধ্যমে চীনকে মোকাবেলা করবে।
তবে তিনি কমিউনিস্ট দেশটির সঙ্গে সংঘাত কিংবা নতুন স্নায়ু যুদ্ধ এড়ানোর কথাও বলেন।
এর প্রেক্ষিতে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়ান অ্যাফেয়ার্স ডিপার্টমেন্টের মহাপরিচালক লিউ জিনসং বলেন, ব্লিঙ্কেনের বক্তব্য ইঙ্গিত দেয় যে, বিশ্ব, বেইজিং এবং চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুতর বিচ্যুতি হয়েছে।
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল অকাস, কোয়াড এবং সর্বশেষ ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনোমিক ফ্রেমওয়ার্ককে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেন্ট্রিজম’ এবং ‘এক্সসেপশনালিজম’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
তিনি বলেন, এ ধরণের আচরণ দেশটির নিজের জন্যেই অসম্মান বয়ে আনবে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল এখানে যে আঞ্চলিক সহযোগিতার কাঠামো রয়েছে তা ধ্বংস করে দেবে এবং দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি করবে।
লিউ আরও বলেন, বিশ্বজুড়ে এক দেশের আধিপত্যের পক্ষে কোনো সমর্থন নেই, ব্লকভিত্তিক দ্বন্দ্বের কোনো ভবিষ্যত নেই এবং অল্প স্থানের জন্য উঁচু দেয়াল তৈরি ভাল কিছু বয়ে আনবে না।