নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :২২ মে, ২০২২ ৩:৪৭ : অপরাহ্ণ
দুর্নীতির মামলায় ১০ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত ঢাকা-৭ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিমের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
আজ রোববার বিকেলে শুনানি শেষে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭ এর বিচারক শহিদুল ইসলাম এ আদেশ দেন।
শুনানিতে হাজী সেলিমের আইনজীবী প্রাণ নাথ বলেন, আসামি একজন সংসদ সদস্য। তার জামিনের দাবি করছি। এছাড়া তিনি অসুস্থ হার্টের রোগী, তার অপেন সার্জারি হয়েছে। এছাড়া তিনি বাক প্রতিবন্ধী। তাকে যদি কারাগারে নেয়া হয় তাহলে যেন তাকে ডিভিশন ( কারাগারে বিশেষ সুবিধা) নেয়া হয়। কারণ তিনি ডিভিশন পান।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুসারে তাকে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। তিনি করেছেন। তবে ১০ বছর যেহেতু তার সাজা, তাই তার জামিনের সুযোগ নেই। এছাড়া দুদক আইনে ডিভিশনের সুযোগ নেই। তাকে আগে জেলখানায় যেতে হবে। শুনানি শেষে বিচারক আসামির জামিন নামঞ্জুর করেন।
শুনানি শেষে বিচারক বলেন, সংসদ সদস্য হওয়ায় কারাগারে প্রথম শ্রেণির বন্দি মর্যাদা পাবেন হাজী সেলিম। সেখানে তার সুচিকিৎসার বন্দোবস্তও করা হবে।
এর আগে দুপুর ২টার দিকে তিন ছেলেকে নিয়ে গাড়িতে করে হাজী সেলিম আদালত প্রাঙ্গণে আসেন। তিনি আত্মসমর্পণ করতে আসার আগেই আদালতের বাইরে অবস্থান নেন তার কর্মী-সমর্থকরা।
বিকেল ৩টা ৫ মিনিটের দিকে আদালতের এজলাস কক্ষে আসেন হাজী সেলিম। এসময় তার ছেলে আরফান সেলিম সঙ্গে ছিলেন। তখন এজলাস কক্ষে নেতা-কর্মীদের হুড়োহুড়ি দেখা যায়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ১২ মিনিট পর বিচারক শুনানি শুরু করেন।
এসময় আত্মসমর্পণের আবেদন করেন সেলিমের আইনজীবী। এছাড়া আদালতে আপিলের শর্তে জামিন আবেদন, কারাগারে প্রথম শ্রেণির মর্যাদা এবং কারা কর্তৃপক্ষের তত্ত্ববধানে উন্নতমানের হাসাপাতালে বেটার ট্রিটমেন্টের আবেদন করেন আসামিপক্ষের এ আইনজীবী।
গত ১ মে খুব গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে যান হাজী সেলিম।
পরে দেশজুড়ে তার এই বিদেশ যাত্রা নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
এ নিয়ে তুমুল বিতর্কের মাঝে ৫ দিন পরে গত ৫ মে থাইল্যান্ড থেকে চিকিৎসাগ্রহণ শেষে দেশে ফেরেন আলোচিত-সমালোচিত এই সংসদ সদস্য হাজী সেলিম।
চিকিৎসা শেষে হাজী সেলিম দেশে ফেরার পর ২৫ মের মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করার বাধ্যবাধকতা ছিল।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে জরুরি অবস্থার মধ্যে হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এ মামলায় ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল আদালত রায় দেন। রায়ে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে হাজী সেলিমকে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ১ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া তাকে সম্পদের তথ্য গোপনের দায়ে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। উভয় দণ্ড একসঙ্গে চলবে বলা হয়।
অন্যদিকে অবৈধ সম্পদ অর্জনে হাজী সেলিমকে সহযোগিতা করার দায়ে তার স্ত্রী গুলশান আরাকে তিন বছরের কারাদণ্ড, এক লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
হাজি সেলিম ও তার স্ত্রী গুলশান আরা বেগম এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ২৫ অক্টোবর হাইকোর্টে আপিল করেন। ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট ১৩ বছরের সাজা বাতিল করে রায় দেন।
হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করে দুদক। আপিলের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের রায় বাতিল হয়ে যায়। সেই সঙ্গে হাজী সেলিমের আপিল পুনরায় হাইকোর্টে শুনানির নির্দেশ দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। সে নির্দেশনার আলোকে ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর দুদক হাজী সেলিমের আপিল দ্রুত শুনানির জন্য আবেদন করে।
সেই আবেদনের শুনানি করে হাইকোর্ট ১১ নভেম্বর এ মামলার বিচারিক আদালতের নথি তলব করেন। নথি আসার পর গত ৩১ জানুয়ারি আপিলের শুনানি শুরুর পর গত বছর ৯ মার্চ রায় ঘোষণা করেন উচ্চ আদালত।
সে রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি গত ১০ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করা হয়। হাইকোর্ট রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে হাজী সেলিমকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেন।
এদিকে এই মামলার চার্জশিটে বলা হয়, হাজী সেলিম জ্ঞাত আয়বহির্ভূতভাবে প্রায় ২৬ কোটি ৯২ লাখ ৮ হাজার টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। এছাড়া, সম্পদ বিবরণীতে প্রায় ১০ কোটি ৪ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছিলো। হাজী সেলিম তার সম্পদ বিবরণীতে প্রায় ৫৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকার হিসাব বিবরণী দাখিল করেছিলেন।