শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা আইন-আদালত

ডেসটিনির গ্রাহকরা যেভাবে টাকা পাবেন



রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :১৩ মে, ২০২২ ১:৫৬ : অপরাহ্ণ

গ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের দায়ে ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীনকে ১২ বছর এবং চেয়ারম্যান সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশিদকে ৪ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির প্রায় ১ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের এ মামলায় ৪৬ আসামির সবাইকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

পাশাপাশি ৪৬ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডের পাশাপাশি ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির যত সম্পত্তি ক্রোক ও ফ্রিজ করা হয়েছিল তা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

আসামিদের জরিমানার টাকা ও ডেসিটিনির জব্দকৃত সম্পত্তি থেকে গ্রাহকদের দায়-দেনা পরিশোধ করতে বলা হয়েছে আদালতের রায়ে।

এজন্য ‘ডেসটিনি মাল্টি-পারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড (ডেসটিনি) এর সম্পদ বিতরণ কমিটি’ নামে ৬ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আদালতের রায়ে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক একজন বিচারপতিকে প্রধান ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের রেজিস্ট্রারকে সদস্য সচিব করে ৬ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব, সমবায় মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব, পুলিশের একজন ডিআইজি ও একজন চার্টার একাউনটিংকে সদস্য করা হয়েছে। এ কমিটি ডেসটিনির সব সম্পত্তি সমন্বয় করবে এবং তা এ প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বণ্টন করবেন।

দুদক চেয়ারম্যানকে এসব নির্দেশনা প্রয়োগের নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে, মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে (আইও) যেন এ বিষয়ে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত রাখা হয়।

রায়ের লিখিত পর্যবেক্ষণে বলা হয়-সমবায় অধিদপ্তরে নিবন্ধিত হওয়া সত্ত্বেও তারা সমবায় আইনের পরিপন্থি কাজ করেছে। প্রতারণামূলকভাবে তারা ২০০১ সালের আইন (যা ২০০৪ সালে সংশোধিত হয়) লঙ্ঘন করে।

তাদের নিজস্ব বাইলজকে লঙ্ঘন করে সাধারণ সদস্যদের অবহিত না করে, অনুমতি না নিয়ে অবৈধ চুক্তি সম্পাদন করে তারা এমন একটি

প্যাকেজ চালু করে, যেখানে প্রত্যেক গ্রাহক থেকে ১০ হাজার টাকা করে নিত, যার মধ্যে সাড়ে ৮ লাখ বিনিয়োগকারীর প্রত্যেকের ৪ হাজার ৩০০ টাকা আলাদা হিসাবে স্থানান্তরের মাধ্যমে সর্বমোট ১ হাজার ৯০১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন মর্মে দুদকের অনুসন্ধানে পাওয়া যায়। তার মধ্যে মাত্র ৫৩ লাখ টাকা তদন্তের সময় একাউন্টে পাওয়া যায়। বাকি টাকা তারা মানি লন্ডারিং করেছে।

রায়ে বলা হয়- ডেসটিনি মাল্টি-পারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সম্পদ তার শেয়ারহোল্ডার এবং বিনিয়োগকারীদের অন্তর্গত। তাদের টাকা উদ্ধারই এই মামলার আসল চ্যালেঞ্জ। রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত সম্পত্তি/অর্থ ডেসটিনির শেয়ারহোল্ডার এবং বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণ বলে গণ্য হবে।

এছাড়া দণ্ডপ্রাপ্ত অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে জরিমানা আদায়ের পর ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ধারা ৫৪৫ (ন) এর পরিপ্রেক্ষিতে জরিমানা ক্ষতিপূরণে রূপান্তরিত হবে।

অতএব, এই মামলার ক্ষেত্রে সবধরণের জরিমানা এবং স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি/অর্থ বাজেয়াপ্ত করা, ডেসটিনির শেয়ারহোল্ডার এবং বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণ হিসাবে গণ্য হবে এবং সরকার কর্তৃক গঠিত একটি ‘কমিটি’ দ্বারা বিতরণ করতে হবে।

তাই ক্ষতিগ্রস্তদের এবং উগঈঝখ এর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সুষ্ঠু, স্বচ্ছ এবং ন্যায়সঙ্গত উপায়ে অর্থ বিতরণ করার জন্য একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হলো। সরকার কমিটির সদস্যদের জন্য একটি সম্মানী নির্ধারণ করবে এবং সম্মানী ডেসটিনি মাল্টি-পারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সম্পদ বিতরণ কমিটির একাউন্ট থেকে দেয়া হবে।

রায়ের পর দুদকের আইনজীবী মীর আহম্মেদ আলী সালাম বলেন, ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীন ও প্রেসিডেন্ট সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশিদসহ ৪৬ জনকে কারাদণ্ড ও সব আসামিকে মোট ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

জরিমানার এই টাকা গ্রাহকদের মাঝে কীভাবে বণ্টন করা হবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই টাকা বিতরণের জন্য আদালত ৬ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে।

রাষ্ট্রের অনুকূলে যে সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, যারা ভোক্তা, কারা, কীভাবে পাবে, কতটুকু পাবে, তা বুঝিয়ে দেবে এই কমিটি।

তিনি বলেন, এই জরিমানার সমুদয় টাকা ৪৫ (বি) ধারা অনুযায়ী ক্ষতিপুরণ দেয়ার জন্য, যারা নিঃস্ব হয়ে গেছে (ভোক্তা), তাদের মধ্যে যথাযথভাবে বিতরণ করার কথা রায়ে বলা হয়েছে। কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে গ্রাহকরা জরিমানাকৃত অর্থের মধ্যে কে কত অংশ পাবে।

জানা যায়- ২০০৮ সাল থেকে মাল্টি পারপাস কো-অপারেটিভ প্রোজেক্টের নামে ডেসটিনি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিল ১ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। সেখান থেকে ১ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয় বলে দুদকের অনুসন্ধানে ধরা পড়ে। ওই অর্থ আত্মসাতের ফলে সাড়ে ৮ লাখ বিনিয়োগকারী ক্ষতির মুখে পড়েন।

আর ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশন প্রকল্পের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ২ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ২ হাজার ২৫৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা আত্মসাত করা হয়। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হন সাড়ে ১৭ লাখ বিনিয়োগকারী।

দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ডেসটিনি গ্রুপের নামে ২৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশ কয়েকটি ছিল নামসর্বস্ব। আসামিরা প্রথমে প্রজেক্টের টাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হিসাবে জমা করতেন, তারপর বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাবে তা স্থানান্তর করা হত।

দুদক ৩৪টি ব্যাংকে এ রকম ৭২২টি হিসাবের সন্ধান পায়, যেগুলো পরে জব্দ করা হয়। এর মধ্যে মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির মামলাটি রায় হলো। ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা এখন সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর