প্রকাশের সময় :১১ মে, ২০২২ ১০:০৪ : অপরাহ্ণ
করোনাভাইরাসের কারণে দুই বছর ধরে নানা বিধিনিষেধ থাকার পর এবার পরিপূর্ণভাবে উদযাপিত হয়েছে মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। এবারের ঈদে আগের চিরচেনা রূপ দেখা মেলেছে। দেশের যে প্রান্তেই থাকুক নাড়ির টানে সবাই বাড়ি ফিরে প্রিয়জন, আত্মীয়-প্রতিবেশীদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করেছেন। কিন্তু ক্যাম্পাস জীবনের ব্যস্ততা বা নানা কারণে হয়তো শিক্ষার্থীদের সে সুযোগ হয়ে ওঠে না। তাই সতীর্থ-সহপাঠীদের সঙ্গে প্রিয় ক্যাম্পাসেই ঈদ উদযাপন করেছেন তারা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত তরুণ শিক্ষার্থীদের ঈদ উদযাপনের চিত্র তুলে ধরেছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ।
ঈদটি ছিল আনন্দে ভরপুর
মুসলিম সসম্প্রদায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র উৎসব হচ্ছে ঈদুল ফিতর। সারা বছরের কর্ম ব্যস্ততার মাঝে একটু আনন্দের আমেজ সৃষ্টি করে এই পবিত্র ঈদ। সকলে তাদের পরিবারের সাথে তৃপ্তির সাথে সময় কাটানোর সুযোগ পায়। আমার ঈদটিও অনেক আনন্দের সাথে কেটেছে। মায়ের হাতের মজার রান্না, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে ঘোরাঘুরি করা সহ সব মিলিয়ে দিনটি অনেক উপভোগ করেছি।এছাড়াও দিনটি ছিল আত্মীয় স্বজনদের সাথে মিলন মেল। যা মনকে বহু গুণ সতেজ করে দিয়েছিল। এই সময়টি এত উপভোগ্য ছিল যে মনে হয়েছিল এই কর্মব্যস্ত মরুভূমির ন্যায় জীবনে পানির পরশ নিয়ে এসেছে।
মাহফুজা হোসেন
শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
উৎফুল্লে কেটেছে ঈদ
মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে বড় ও আনন্দপূর্ণ হচ্ছে ঈদের দিন। করোনা পরবর্তী দুই বছর পর এবারের ঈদে চিরচেনা রুপ ফিরেছে। জাঁকজমক ঈদ উদযাপন, সেই আগের মতো উদ্দীপনাও। দীর্ঘ বিরতিতে তাই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেই কেটেছে এবারের ঈদ। সবাইকে নিয়ে একসাথে সেমাই খাওয়া, লুডু খেলা, বিকেলে সবার সাথে সেলফি তুলা, ফোন আলাপ, সন্ধ্যায় হালকা নাস্তার আড্ডা, রাতে পরিবারের সাথে ঈদ আয়োজনের টেলিভিশন অনুষ্ঠান দেখার মধ্য দিয়েই ঈদের দিনটি কেটে গেছে। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে যথারীতি সবার সাথে দিনভর ভিডিও কলে আলাপন, আড্ডা। এইতো এইভাবেই কেটে গেল ঈদের সময়টুকু। আমাদেরকে এই সীমাবদ্ধতার মধ্যেই পরিবারের সাথে আনন্দটা খুঁজে নিয়েছি। সব আতংক ও শঙ্কাকে পেছনে ফেলে রঙিন পৃথিবীতে প্রাণের মেলবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সবসময় উদযাপিত হোক সকল ধর্মীয় উৎসব- এমনটাই কাম্য।
ইউছুব ওসমান
শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
ফের পেয়েছি ঈদের আমেজ
ঈদ আনন্দ বলতে শৈশব-কৈশোরে ফেলা আসা সেই স্মৃতিমাখা সময়টাকেই বুঝি। সময়ের পরিক্রমায় প্রতি বছর ঈদ আসলেও ফিরে আসে না ফেলে আসা সোনালী শৈশবের ঈদ। আমাদের চেনা জীবনের সাথে সাথে উৎসব উদযাপনের ধরনও পাল্টে গেছে। তবে এবার করোনাকালীন ঈদ থেকে শিক্ষা নিয়ে ফের ঈদের আমেজ ফিরে এসেছে আমাদের মাঝে। ঈদের দিন ঘরের কাজ, বাড়ির সবার সাথে আনন্দ ভাগাভাগি আর দূরে থাকা প্রিয়জনদের সাথে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে যোগাযোগ ও দূর থেকে শুভেচ্ছা বিনিময়ের মতো নানান আনন্দঘন ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে কেটেছে। বন্ধুদের সাথে ঈদের দিন ঘুরাঘুরি আর আত্নীয়দের বাসায় দাওয়াত খাওয়া সবই হয়েছে এবারের ঈদে। এভাবেই খুশি নিয়ে ঈদ আসুক প্রতিটি বছর। সকল বিভেদ ভুলে প্রতিটি ঈদে সকলে ভ্রাতৃত্বের একই বন্ধনে আবদ্ধ থাকুক।
ইকরা ফুরকান ড্যাফোডিল
শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
সম্প্রতি ও ভালোবাসার ঈদ
শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বয়স্কদের আকাশেও উঁকি দেয় শাওয়ালের বাঁকা চাঁদ। ঈদের আনন্দ কিছুটা উপভোগ করতে যে যার মতো করে নিয়েছে এবারের ঈদ প্রস্তুতি। আমার বেলায়ও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। করোনা পরবর্তী এবারের ঈদের পুরো সময়টা পরিবারের সঙ্গে কাটাব বলে মনস্থির করেছি। ঈদের দিন স্বল্প পরিসরে স্কুলবন্ধুদের নিয়ে আড্ডা জমেছে বেশ। এর বাইরে এলাকার আরও বন্ধু-বড় ভাই, আত্মীয়-পরিজন তো রয়েছেন; তাদের সবার সঙ্গে ভার্চুয়ালভাবে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিয়েছি। ঈদের এই আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার মজাই আলাদা। সকল বিভেদ ভুলে এই ঈদে সকলে ভ্রাতৃত্বের এক নতুন বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। প্রতিটি ঈদ সবার জীবনে আনন্দ বয়ে আনুক এমনটাই প্রত্যাশা।
মীম আফরোজ রাই
শিক্ষার্থী, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
ফিরে পেয়েছি অতীতের ঈদ আনন্দ
ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। ধর্মপ্রাণ মুসলমানের জীবনে বছরে ঈদ আসে দুই বার। এই ঈদে প্রতি মানুষের মাঝে বিরাজ করছে উৎসবমুখর আনন্দ। কারণ দীর্ঘ দুবছর করোনা মহামারিতে বিশ্বের সকল কার্যক্রম বন্ধ ছিল। কিন্তু করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কমে যাওয়ার ফলে সবাই বাধ ভাঙা উল্লাসে ইদের আনন্দ ভাগাভাগি করেছে। দীর্ঘদিন পর পরিবারের সদস্যদের সাথে ঈদের আনন্দ বন্ধুদের সাথে আড্ডা, কোলাকুলি ইত্যাদি ঈদের আনন্দ বাড়িয়ে দিয়েছে। যদিও ঈদের দিন বৃষ্টির কারণে অনেকের কাছে মলিন হয়ে গেছে। কিন্তু বৃষ্টি শেষে পরিবারের সদস্য, বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘুরতে খুব ভাল সময় কেটেছে। ফিরে পেয়েছে সবাই অতীতের ঈদ আনন্দ। এমন ঈদ আনন্দ যেন তৎকালীন করোনা ভাইরাসের মলিন ঈদ আনন্দ ভুলে দিয়েছে। থেমে থাকেনি ঈদের আনন্দ, ছোট-বড়-বৃদ্ধ সবাই প্রাণ খুলে ঈদ উদযাপন করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল ঈদ ছিল গ্রামীণ পরিবেশে উদযাপন প্রশান্তির বাতাস। দীর্ঘদিন পর এমন ঈদ আনন্দ প্রতি মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে দিয়েছে।
মো. আবদুল্লাহ আলমামুন
শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
শান্তি সুখের ঈদ
দীর্ঘ একটি মাস সিয়াম সাধনার পর মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় একটি ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিনটি পালিত হয়েছে সবার প্রতি সবার সকল প্রকার হিংসা, বিদ্বেষ ও সব বিভেদের রেখা মুছে দিয়ে সাম্যের ছবি আঁকার মধ্য দিয়ে। পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিনে সব বিভেদের রেখা মুছে সবাই এক কাতারে হয়েছি শামিল, সৌহার্দ্য আর প্রীতির বাঁধনে সবার কাঁধে কাঁধে হলো মিল। এই দিনে সকল মুসলিম খুঁজে পেলো আসল মায়ার বাঁধন, ধনী-গরীব সব ভেদাভেদ ভুলে সবাই হয়েছে আপন। এই দিনে চোখের পানিতে মোনাজাত ধুয়ে মুছে গেছে সব গ্লানি, সকল মুমিন মুসলমানের হ্নদয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে জোর ঈমানী। মুমিন মুসলমানের হ্নদয়ে আজ ভালোবাসায় একাকার, আজও আবার জয় হয়েছে বিশ্ব মানবতার। সকলের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে পারলে অন্যরকম একটা ভালোলাগা কাজ করে নিজের মধ্যে। তাই, আসুন আমরা সকল কিছুর উর্ধ্বে উঠে ঈদের আনন্দে সকলের সাথে মেতে উঠি এবং ঈদের পরবর্তী দিন গুলোকে উৎসবমুখর করে তুলি। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগিতেই হোক আনন্দ, সবার সাথে উঠুক গড়ে শান্তি, সুখের সম্প্রীতি। শান্তি, সুখের হাসি ফুটুক সবার মুখে, ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হোক বিশ্ব মুসলিম সমাজ- এই প্রত্যাশা রইলো।
ফাতেমা তুজ জোহরা ইমু
শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
খুশির জোয়ারে ঈদ
উৎসবমুখর পরিবেশ ঈদের আনন্দ আমাদের মনে আমেজের ঢেউ তুলে দেয়। করোনায় দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর এবারের ঈদ যেন খুশির বন্যা নিয়ে এসেছে। নতুন পোশাকে নিজেকে সাজানো, আনন্দ-উৎসব সবকিছু মিলিয়ে যেন খুশির ঢেউ; যে ঢেউ আমাদের প্রাণে স্পন্দন জাগায়। হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে একে অপরের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি এবং কুশল বিনিময়ের মধ্য দিয়ে দিনটি কেটে যায়। ছোট বাচ্চাদের হাতে মেহেদী লাগানো, বাবা-ভাইকে মিষ্টিমুখ করিয়ে ঈদের নামাজে পাঠানো, তারপর পরিবারের সবাই মিলেমিশে সুন্দর সুন্দর খাবার খাওয়া; এসবও আমাদের ধর্মীয় সংস্কৃতির বহিঃরূপ। এবারের ঈদ আনন্দ সম্পর্কের মধ্যে থাকা ব্যবধান অনেকাংশে কমিয়ে এনেছে। বাবা-মা, ভাই-বোনদের সঙ্গে অনেক আনন্দ করেছি। সবার মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করে এবার আমি সত্যিই সফল। বছর ঘুরে এই ঈদ আমাদের মাঝে আনন্দ নিয়ে আসুক এই প্রার্থনা করি।
শিউলী আক্তার
শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদ উদযাপন
শেষ রোজা শেষে ঈদ যেনো এসেছে বৃষ্টি মুখর হয়ে। ঈদের দিন সকালবেলাই ঘন কালো মেঘে চারদিকে আচ্ছন্ন হয়ে শুরু হয়। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মাঝে মাঠের নামাজের প্রস্তুতি শুরু হল। বৃষ্টির মাঝে দলবেঁধে ঈদগাহ মাঠের দিকে রওনা শুরু। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মাঝেই ঈদগাহ মাঠে সকলের উপস্থিতি যেনো এক অন্যরকম পরিবেশ। ধনী-গরীব, ছোট-বড় সকলের উদ্দেশ্য একই ঈদগাহে নামাজ আদায়। নামাজ শেষে কাকভেজা শরীরে কোলাকুলি। করোনার পরবর্তী এ মাঠে নামাজ আদায় সকলের জমায়েত এক অন্যন্য আনন্দমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছিল যেটি করোনার জন্য দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। সকালে বৃষ্টি হলেও নামাজ শেষে একটু রোদের আভাসে ঈদের পুর্ণতা ফিরে আসল। সকলে ঈদের আমেজে নতুন পোষাক পরিধান, ছোট ছেলেমেয়েদের দলবেঁধে ঘুরাঘুরি, ধনী গরীব সকলের পরিবারের ভাল খাবার রান্না সব মিলিয়ে ঈদের মুহুর্ত আনন্দে কেটে গেল।
আবু সুফিয়ান সরকার শুভ
লেখক শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা