রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :৯ মে, ২০২২ ৩:০১ : অপরাহ্ণ
ভোজ্যতেলের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এ জন্য তিনি দেশের ডিলার-খুচরা ব্যবসায়ীদের দুষেছেন। অভিমানের সুরে বললেন, ‘ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস করা ভুল ছিল। ব্যবসায়ীরা কথা রাখেননি। ভোজ্যতেলের দাম নিয়ে ব্যবসায়ীরা বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।’
সোমবার দুপুরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ভোজ্যতেলের উৎপাদকদের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে মন্ত্রণালয় ব্যর্থ হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে টিপু মুনশি বলেন, ‘একজন মুসলমান হিসেবে গত ২০ মার্চ রমজানে তেলের দাম বৃদ্ধি না করার যে আবেদন আমি ব্যবসায়ীদের কাছে রেখেছিলাম সেটা আমার ভুল ছিলো। এর দায় আমরা মেনে নিচ্ছি। ব্যবসায়ীদের আবেদনের কারণে সে সময় ১০ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছিলো। সাধারণত দেড় মাস পর পর তেলের দাম পুনঃনির্ধারণ করা হয়। সেই হিসেবে গত তিন মাস তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়নি। রোজায় মানুষের ভোগান্তি যেন না বাড়ে সেজন্য আমি ব্যবসায়ীদের কাছে অনুরোধ করেছিলাম যেন রমজান মাসে তেলের দাম বৃদ্ধি না করা হয়।’
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ঈদের পর তেলের দাম বাড়তে পারে, সেই তথ্য ব্যবসায়ীদের কাছে আগে থেকেই ছিল। তাই ডিলার, রিটেইলার পর্যায়ে যে যেভাবে পেরেছেন পণ্য মজুদ করেছেন। সেজন্য দাম বাড়ানোর পরও বাজারে তেলের ক্রাইসিস হলো।’
আরও পড়ুন: দোকান ফাঁকা, গোডাউনে মিললো ১৫ হাজার লিটার সয়াবিন তেল
টিপু মুনশি বলেন, ‘এটাও সত্যি, তেলের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। সাধারণ মানুষের কষ্ট হচ্ছে। আমরা মাত্র ১০ শতাংশ তেল উৎপাদন করি, ৯০ শতাংশই বাইরে থেকে আসে। আমাদের তেল আমদানির বড় অংশই আসে ইন্দোনেশিয়া থেকে। আমি ইতিমধ্যে দেশটির রাষ্ট্রদূতের সঙ্গেও কথা বলেছি। তারাও তেল আবারও রপ্তানির বিষয়ে ভাবছে। কিন্তু সেটা কবে থেকে শুরু করা হবে এখনো তা নিশ্চিত হয়।’
বাণিজ্যমন্ত্রী দাবি করেন, ‘ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ প্রায় সব দেশেই তেলের দাম বেড়েছে। আমাদের দেশের তেলের দাম আর নেপালের তেলের দাম প্রায় একই। গত এক বা দেড় মাসে গ্লোবাল মার্কেটে দামের কেমন তারতম্য সেটা নিয়ে কোনো নিউজ করা হচ্ছে না।পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দুই আড়াই হাজার ডলারের কন্টিনার এখন ১২ হাজার ডলার দাঁড়িয়েছে। এতো কিছুর পরও আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়েও আমরা দেশে ২২ টাকা কমে তেল বিক্রি করছি। আন্তর্জাতিক বাজার হিসাব করলে আজ প্রতি লিটার তেলের দাম দাঁড়ায় ২২২ টাকা। ’
এ সময় সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান বলেন, ‘তেলের সরবরাহ কিছুটা কমেছে। তবে বাজারে যে সংকট দেখানো হচ্ছে, পরিস্থিতি ততটা খারাপ না। দোকানদার যদি পণ্য মজুদ করে সেই দায় উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের না।’
তেলের দাম সমন্বয় কবে হবে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যখন তেলের দাম কমানোর সুযোগ থাকবে তখন আমরা আবার বসবো।’
অবৈধভাবে তেল মজুদকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে টিপু মুনশি বলেন, ‘তেল নিয়ে কোথায় কোথায় সমস্যা হয়েছে সেটা চিহ্নিত করেছি। আমরা তা প্রকাশ করব। একই সঙ্গে ভোক্তা অধিকারের অভিযান জোরদার করা হবে। তাদের সহযোগিতার জন্য র্যাবকে কাজে লাগানো যায় কিনা সেটাও চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে।’
আগামী জুন মাস থেকে ১ কোটি পরিবারকে টিসিবির পণ্য দেওয়া হবে বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।