শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২০ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা জাতীয়

মানুষের প্রশংসা কুড়ানো ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ারের কপালে জুটলো শাস্তি


র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকাকালে সারওয়ার আলমের অভিযান। ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :৬ মে, ২০২২ ১:৫১ : অপরাহ্ণ

ক্যাসিনোবিরোধী ও ভোজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে মানুষের প্রশংসা কুড়ানো র‍্যাবের আলোচিত সেই ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলমের কপালে জুটলো শাস্তি।

উপ-সচিব পদে পদোন্নতিবঞ্চিত হওয়ার পর আক্ষেপ প্রকাশ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন ২৭তম বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডারের সিনিয়র সহকারী সচিব সারওয়ার আলম। তার দেয়া স্ট্যাটাসকে সরকারি কর্মচারী বিধিমালা অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে তিরস্কার সূচক লঘুদণ্ড দেয়া হয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

২০২০ সালের ৯ নভেম্বর সারওয়ার আলমকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে বদলি করা হয়।

সারওয়ার আলম কী লিখেছিলেন ওই স্ট্যাটাসে?

২০২১ সালের ৭ মার্চ প্রশাসনের ৩৩৭ জন সিনিয়র সহকারী সচিবকে উপ-সচিব পদে পদোন্নতি দেয় সরকার। কিন্তু পদোন্নতিবঞ্চিত হন ২৭তম বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডারের আলোচিত কর্মকর্তা সারওয়ার আলম।

বিসিএস ২৭তম ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডার হিসেবে ২০০৮ সালের নভেম্বরে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন সারোয়ার আলম। ২০১৪ সালের ১ জুন সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে পদোন্নতি পান তিনি। সে অনুযায়ী এ পদে প্রায় সাত বছরসহ মোট ১২ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রশাসন ক্যাডার হিসেবে কর্মরত থাকলেও সেসময় পদোন্নতিবঞ্চিত হন সারওয়ার আলম।

পরদিন ৮ মার্চ বিসিএস ২৭তম ব্যাচের এ কর্মকর্তা তার ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘চাকুরী জীবনে যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী অন্যায়, অনিয়মের বিরুদ্ধে লড়েছেন তাদের বেশিরভাগই চাকুরী জীবনে পদে পদে বঞ্চিত ও নিগৃহীত হয়েছেন এবং এ দেশে অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়াটাই অন্যায়।’

এ স্ট্যাটাস দেয়ার পর সারওয়ারকে বিচারের আওতায় আনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ২০২১ সালের ৩০ জুন এ নিয়ে বিভাগীয় মামলা হয় এবং তার কাছে কৈফিয়ত তলব করা হয়। তবে সারওয়ার আত্মপক্ষ সমর্থনে কোনো লিখিত বক্তব্য দেননি।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব সারওয়ার আলম একজন সরকারি কর্মচারী হয়ে সরকার ও কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এ ধরনের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করার মাধ্যমে অকর্মকর্তাসুলভ আচরণ করেছেন এবং এতে জনপ্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হওয়ায় ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’ এর ৩ (খ) বিধি অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করে গত বছরের ৩০ জুন অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণী পাঠিয়ে কৈফিয়ত তলব করা হয়।

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, সারওয়ার আলম আত্মপক্ষ সমর্থনে কোনো লিখিত বক্তব্য দাখিল করেননি। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে, তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায় সারওয়ার আলম ফেসবুকে মন্তব্য করার বিষয়টি স্বীকার করেছেন এবং তার বিরুদ্ধে আনা ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।

তাই ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’ এর ৩(খ) বিধিতে বর্ণিত ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিধিমালার ৪(২)(ক) বিধি অনুযায়ী তাকে ‘তিরস্কার’ সূচক লঘুদণ্ড দেয়া হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।

২০২১ সালে প্রশাসনে উপসচিব পদে বড় পদোন্নতি দেয় সরকার। পদোন্নতির ক্ষেত্রে মূল বিবেচ্য ছিল বিসিএসের ২৭তম ব্যাচ। এ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের ২৪০ জনকে (ইকোনমিক ক্যাডার বিলুপ্ত হওয়ায় প্রশাসন ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত হওয়া কর্মকর্তাসহ) পদোন্নতি দেওয়া হয়।

কিন্তু তিন শতাধিক সফল অভিযানের ট্যাগ লাগানো র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারোয়ার আলমের পদোন্নতি মেলেনি। মেধা কোটায় চাকরি পাওয়া ২৭তম ব‍্যাচের মেধা তালিকায় সামনের দিকে তার সিরিয়াল থাকলেও তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়নি।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর