শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা আঞ্চলিক রাজনীতি

চট্টগ্রামে যুবলীগের সম্মেলন: উত্তরের কমিটি হতে পারে ভোটে, নগর ও দক্ষিণ কেন্দ্র থেকে



নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম প্রকাশের সময় :২৯ এপ্রিল, ২০২২ ৯:৩৮ : অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা যুবলীগ শাখার ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।

সূচি অনুযায়ী, দক্ষিণ জেলার সম্মেলন ২৮ মে, উত্তর জেলার ২৯ মে ও মহানগরের ৩০ মে।

আজ শুক্রবার যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা যুবলীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নগরীর জিইসি কনভেনশন সেন্টারে তিন জেলার সম্মেলন আয়োজনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের ১০১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন হয়েছিল ২০১৩ সালের ১১ জুলাই। উত্তর জেলা যুবলীগের সর্বশেষ কমিটি হয়েছে ২০১৩ সালের মে মাসে। আর দক্ষিণ জেলার হয়েছে ২০১০ সালের অক্টোবরে।

যুবলীগের এই তিন ইউনিটের গত কয়েক বছর ধরে একাধিকবার সম্মেলনের কথা শুনা গিয়েছিল। কিন্তু বারেবারে থমকে গেছে সেই প্রক্রিয়া। অবশেষে সম্মেলনের উদ্যোগ নিলো কেন্দ্র।

সম্মেলনে তিন সাংগঠনিক জেলার নতুন কমিটির জন্য কেন্দ্র থেকে গত ২৬ মার্চ জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করা হয়।

যুবলীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগর থেকে সভাপতি পদে ৩৫ ও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য ৭৩ জনের জীবনবৃত্তান্ত জমা পড়েছে।

এছাড়া উত্তর জেলা থেকে সভাপতি পদে ৭ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ২১ জন এবং দক্ষিণ জেলার সভাপতি পদে ১৩ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৩৭ জন জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন।

সম্মেলনের মূল আকর্ষণ হলো দ্বিতীয় অধিবেশনে কাউন্সিলরদের ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচন। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগ কাউন্সিলে ভোটাভুটির মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনের পরিকল্পনা করছে।

কিন্তু নেতাদের দ্বন্দ্ব, বিভেদ ও গ্রুপিংয়ের কারণে মহানগর ও দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সম্মেলনে নেতৃত্ব নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির দায়িত্বশীল নেতারা।

চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছে ২০০৩ সালে। লালদীঘি ময়দানে আয়োজিত এ সম্মেলনে কমিটি ঘোষণা করা নিয়ে তুমুল সংঘর্ষ ও গোলাগুলি হয়েছিল। যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজমের উপস্থিতিতেই এই ঘটনা ঘটে।

নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে চন্দন ধরকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শফিক আদনানের নাম প্রস্তাব করেন। এই দুজনের নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই লালদীঘি মাঠে বেধে যায় তুমুল সংঘর্ষ। একপর্যায়ে গোলাগুলি শুরু হয়। এতে সম্মেলন ভেস্তে যায়।

পরে মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় গিয়ে জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মির্জা আজম সমঝোতার ভিত্তিতে চন্দর ধরকে সভাপতি ও মশিউর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করেন।

২০০৩ সালে সম্মেলনে সংঘর্ষের ঘটনার পর ২০১৩ সালে কেন্দ্র থেকে যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।

নগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকা রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘২০০৩ সালে লালদীঘি মাঠে সম্মেলনে নেতৃত্ব নির্বাচন করা নিয়ে মহিউদ্দিন চৌধুরী ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে তুমুল সংঘর্ষ হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সম্মেলনও ভেস্তে যায়। এখন মহিউদ্দিন চৌধুরী নেই। ফলে এখন সম্মেলনে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হলে কী পরিস্থিতি হতে পারে সেটা কল্পনাও করা যাবে না।’

দেলোয়ার হোসেন খোকা বলেন, ‘মহানগরের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় যুবলীগের সম্মেলনে নেতৃত্ব নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনাই দেখছি না। কেন্দ্র থেকেই কমিটি ঘোষণার সম্ভাবনা বেশি।’

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সর্বশেষ সম্মেলন কখন হয়েছিল তা কেউ জানে না। খোদ বর্তমান জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দও জানেন না। ২০১০ সালের অক্টোবরে কেন্দ্র থেকে পটিয়ার আ ম ম টিপু সুলতানকে সভাপতি ও সাতকানিয়ার পার্থ সারথি চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করে জেলা যুবলীগের কমিটি গঠন করা হয়।

দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের দীর্ঘ দিন ধরে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের দ্বন্দ্বের কারণে কোনো অবস্থাতেই জেলা যুবলীগের সম্মেলনে নেতৃত্ব নির্বাচন করা যাবে না বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির দায়িত্বশীল কয়েকজন নেতা।

তবে সম্মেলনে নেতৃত্ব নির্বাচন করতে কেন্দ্রে প্রস্তাব করেছেন বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি আ ম ম টিপু সুলতান।

তিনি রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে আমি সম্মেলনে ভোটাভুটির মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করতে প্রস্তাব করেছি। তারা বিষয়টি ভেবে দেখবেন বলে জানিয়েছেন।’

কোন্দলের কারণে মহানগর ও দক্ষিণের সম্মেলনে নেতৃত্ব নির্বাচনের সুযোগ না থাকলেও উত্তর জেলা যুবলীগের নেতৃবৃন্দ দৃঢ় আশাবাদী। তারা এবারও সম্মেলনে ভোটাভুটির মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন।

সর্বশেষ ২০১৩ সালের মে মাসে উত্তর জেলা যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে দ্বিতীয় অধিবেশনে ভোটাভুটির মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন সৈয়দ মফিজ উদ্দিন। আর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এস এম শফিউল আজম। পরে সৈয়দ মফিজ উদ্দিন চাকরির কারণে ও শফিউল আজম জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে স্থান পাওয়ার কারণে যুবলীগের নেতৃত্ব ছেড়ে দেন।

এরপর কেন্দ্র থেকে সহ সভাপতি এস এম আল মামুনকে সভাপতি ও যুগ্ম সম্পাদক এস এম রাশেদুল আলমকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

উত্তর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশেদুল আলম রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘গতবারও উত্তর জেলা যুবলীগের সম্মেলনে ভোটাভুটিতে নেতৃত্ব নির্বাচন হয়েছিল। এবারও আমরা সম্মেলনে ভোটাভুটির মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমরা উপজেলায়ও সম্মেলনের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করেছি। উত্তর জেলায় এর আগে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সম্মেলনেও নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়েছে। সম্মেলনের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করা একমাত্র উত্তর জেলায় সম্ভব।’

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর