রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :২১ এপ্রিল, ২০২২ ৯:১৩ : অপরাহ্ণ
গণ অধিকার পরিষদের ইফতার অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের নেতারা বলেছেন, বাংলাদেশ একটা ভয়াবহ সংকটের মধ্যে রয়েছে। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য দল-মত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীতে একটি হোটেলে বাংলাদেশ গণ অধিকার পরিষদ আয়োজিত এক ইফতার ও দোয়া মাহফিলে এ আহ্বান জানান বক্তারা।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছে। দেশ একটি ধ্বংসের কিনারায় পৌঁছে গেছে। আজকে যারা গায়ের জোরে ক্ষমতায় আছেন তারাই এই দেশকে ধ্বংস করেছে। দেশের জনগণ আর এই স্বৈরাচারী, ফ্যাসিস্ট সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। আমাদের এখন দায়িত্ব এই সরকারের হাত থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করা।’
এ বিএনপি নেতা আরও বলেন, ‘পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো স্বৈরাচার সরকার আপসে ক্ষমতা ছেড়ে বিদায় নেয়নি। তাই অতীতে স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে তৎকালীন পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে ছাত্র জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাদের হটাতে পেরেছে। ঠিক একইভাবে আজকের এই স্বৈরাচার সরকারকে হটাতে হবে। এটাই জনগণের প্রত্যাশা।’
গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘দেশের অনেক দলের শীর্ষ নেতারা এখানে উপস্থিত হয়েছেন। তাই আমরা সবাই মিলে যদি একসঙ্গে কাজ করি তাহলে এই দেশকে অন্ধকার থেকে উদ্ধার করতে পারবো। এই ফ্যাসিস্ট সরকারের হাত থেকে রক্ষা করতে পারবো।’
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন-আমরা নাকি সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছি। কিসের ষড়যন্ত্র? এই সরকারকে তো দেশের মানুষ আর চায় না। আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার, আপনারা ভালো মানুষের মতো চলে যান। আর তা যদি না হয় আপনাদের বিদায় আরও করুণভাবে হবে।’
বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক সাইফুল হক বলেন, ‘আমাদের সরকারের ক’জন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী গত ক’দিন ধরে বলছেন, সরকারের বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র চলছে। আমি আমার গণতান্ত্রিক অধিকার চাই, আমি আমার ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই, আমি একটি নিরপেক্ষ তদারকি সরকারের অধীনে গণতান্ত্রিক পন্থায় একটি নির্বাচন চাই। এসব কি ষড়যন্ত্র? এই বক্তব্য নিশ্চয়ই কোনো ষড়যন্ত্র নয়। সরকারের মন্ত্রীদের এমন বক্তব্যে তাদের ভেতরের নার্ভাসনেসের স্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ। আর গত দু’টি নির্বাচনের মতো আগামী নির্বাচনও যদি হয় তাহলে বাংলাদেশ একটি ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে নিমজ্জিত হবে।’
গণ-সংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘বাংলাদেশের একটা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা এখন আমাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য। এজন্য আমাদের যার যার অবস্থান থেকে সবাইকে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানাই।’
বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘সরকার শুধু উন্নয়নের কথা বলেন। কিসের উন্নয়ন হয়েছে। এদেশের মানুষের তো উন্নয়ন হয়নি। মানুষের উন্নয়ন না হলে তো কোনো উন্নয়নই ফলপ্রসূ হবে না। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পরে আমরা বুঝেছি দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সম্ভব নয়। এ দেশের সকল রাজনৈতিক দলের উচিত হবে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়া।’
এদিন বেশ কয়েকজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা গণ-অধিকার পরিষদে যোগদান করেন। তাদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান গণ-অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া।
গণ-অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুরের সঞ্চালনায় ইফতার ও দোয়া মাহফিলে আরও উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ.স.ম আবদুর রব, বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, এনপিপি’র চেয়ারম্যান ডা. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি, জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব রেজাউল করিম ভূঁইয়া, জাতীয় পার্টির (জাফর) মহাসচিব আহসান হাবীব লিঙ্কন, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন্দ, বিশিষ্ট কবি ও লেখক ফরহাদ মাজহার, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ, সাবেক রাষ্ট্রদূত ও নৈতিক সমাজের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) আমসা আমিন, এবি পার্টির আহ্বায়ক ড. সোলায়মান চৌধুরী, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মহাসচিব ইয়ারুল ইসলাম, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন, শায়রুল কবির খান, গণ-অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান, ফারুক হাসান, আবু হানিফ, মাহফুজ, সোহরাব, সাদ্দাম হোসেন, এড. খাদেমুল ইসলাম, যুগ্ম সদস্য সচিব আতাউল্লাহ, আব্দুজ জাহের, সহকারী যুগ্ম আহ্বায়ক তামান্না ফেরদৌস শিখা, ফাতেমা তাসনিমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ।