নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :৬ এপ্রিল, ২০২২ ৬:০১ : অপরাহ্ণ
চলচ্চিত্র প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে অপমান করায় জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীকে হত্যার পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়ন করা হয় বলে জানিয়েছেন গ্রেপ্তার আসামি আশীষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী।
আজ বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
র্যাব জানিয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কারণসহ সোহেল হত্যায় সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন আশিষ।
র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১০ অভিযান চালিয়ে আশিষকে গ্রেপ্তার করে।
র্যাবের ভাষ্য, গত ২৮ মার্চ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে ৭ এপ্রিল বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে কানাডায় চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন আশিষ। এর আগেই তাকে গ্রেপ্তার করা হলো।
জিজ্ঞাসাবাদে আশীষ জানান, ১৯৯৬ সালে বনানীর আবেদীন টাওয়ারে আশিষ ও আসাদুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলামের যৌথ মালিকানায় ট্রাম্পস ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। সেখানে সন্ধ্যা থেকে ভোররাত পর্যন্ত নানান অসামাজিক কার্যকলাপ হতো। একপর্যায়ে ক্লাবটি আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন ও গ্যাং লিডারদের একটি বিশেষ আখড়ায় পরিণত হয়। আজিজ মোহাম্মদ ভাইও সেখানে যেতেন। ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের চক্রগুলোর সঙ্গে মিটিং করতে এই ক্লাবে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। ঘটনাক্রমে বান্টি ও আশিষের সঙ্গে আজিজ মোহাম্মদের সু-সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তখন তিনজন ক্লাব ব্যবহার করে ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের কার্যক্রম পরিচালনা করতেন।
র্যাবের ভাষ্য, জিজ্ঞাসাবাদে আশিষ বলেন, বনানী জামে মসজিদের পাশেই ছিল ক্লাবটি। সোহেল চৌধুরী মসজিদ কমিটিকে সঙ্গে নিয়ে ক্লাবের অসামাজিক কার্যক্রম বন্ধে বারবার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন। সোহেল চৌধুরীর প্রতিবাদের কারণে ক্লাব মালিক বান্টি ও আশিষের ব্যবসায়িক স্বার্থে আঘাত আসে। একই কারণে আজিজ মোহাম্মদের স্বার্থেও আঘাত লাগে। ক্লাবটি বন্ধের চেষ্টা করায় বান্টি, আশীষ, আজিজ, তৎকালীন শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ওরফে ইমনের চক্ষুশূলে পরিণত হন সোহেল চৌধুরী। ঘটনার এক পর্যায়ে ১৯৯৮ সালের ২৪ জুলাই আজিজের সঙ্গে নায়ক সোহেল চৌধুরীর তর্ক ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। আজিজ ক্ষুব্ধ হয়ে সোহেলের ওপর প্রতিশোধ নিতে বান্টি ও আশিষকে অনুরোধ জানান।
র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে আশিষ জানায়, জনসমক্ষে আজিজকে অপমান করায় সোহেলের ওপর প্রতিশোধ নিতে তিনি (আশিষ) ও বান্টি একটি পরিকল্পনা করেন। ক্লাবে ইমনের নিয়মিত যাতায়াত ছিল। তখন বান্টি, আশিষ ও আজিজ শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনকে দিয়ে সোহেলকে হত্যার প্রস্তাব দেন। ইমন এ প্রস্তাবে রাজি হন। পরে ইমন এ হত্যাকাণ্ড সম্পন্ন করেন।
আদালত সূত্র জানা যায়, ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর রাজধানী বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবেদীন টাওয়ারে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে সন্ত্রাসীদের গুলিতে মারা যায় সোহেল চৌধুরী। এ ঘটনায় সোহেল চৌধুরীর ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী বাদী হয়ে গুলশান থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত শেষে ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন।
২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের জন্য আদেশ দেন। এর দুই বছর পর মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। তখন এক আসামি রিট আবেদন করেন হাইকোর্টে।
এরপর ২০০৩ সালের ১৯ নভেম্বর হাইকোর্ট বিভাগের তৎকালীন বিচারপতি এমএ মতিন ও সৈয়দ রিফাত আহমদের বেঞ্চ ওই রিট আবেদনে প্রথম তিন মাসের জন্য নিম্ন আদালতে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত করেন। তারপর ২০০৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রিটের রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলাটির নিম্ন আদালতের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।